ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মোবাইল কথোপকথন থেকে পরিকল্পনা ফাঁস ॥ চট্টগ্রামের ৩ শিবির নেতা গ্রেফতার

পতেঙ্গায় অয়েল বেল্ট ধ্বংসের জামায়াতী নীলনক্সা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পতেঙ্গায় অয়েল বেল্ট ধ্বংসের  জামায়াতী নীলনক্সা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশে জ্বালানি তেল সংরক্ষণ ও সরবরাহের প্রধান স্থাপনাসমূহে ধ্বংসাত্মক হামলা চালিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত ফাঁস হয়ে গেছে। মোবাইল কথোপকথন ইন্টারসেপ্টের মাধ্যমে নাশকতার এ তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ব্যাপক তৎপরতায় এ ঘটনার নীলনকশা প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে তিনজন। শনিবার এদেরকে আদালতে সোপর্দ করার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। এরা হচ্ছে ঢাকা মহানগর ইসলামী ছাত্র শিবিরের মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য মোঃ এনামুল কবির, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্র শিবিরের উত্তর পাঠাগার সম্পাদক ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ইসলামী স্টাডিজের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র মোঃ মোস্তফা এবং চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাথী দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড শাখার বায়তুলমাল সম্পাদক (জামায়াত শিবিরের দলীয় ক্যামেরাম্যান) মোঃ মুশফিক আবরার ওরফে মাহিন। এই মাহিন গত কয়েকদিন আগে দেওয়ানবাজার এলাকায় বাসে বোমা হামলা ঘটিয়েছে। শনিবার সে আদালতে এর সত্যতা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে। অয়েল বেল্টে নাশকতামূলক হামলার পরিকল্পনায় গ্রেফতারের পর এরা পুলিশের কাছে জবানবন্দীতে স্বীকার করেছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রতিষ্ঠিত কয়েক হাজার কোটি টাকার অতি গুরুত্বপূর্ণ অয়েল বেল্টে সহিংসতা চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। এদিকে, এ ঘটনা তদন্তে সিএমপির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ তৎপরতা শুরু করা হয়। গোপন সোর্স নিয়োগ দিয়ে বিভিন্নভাবে তথ্য উদঘাটন করা হয়। এরই ভিত্তিতে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বনজ কুমার মজুমদারের দিক নির্দেশনায় কোতোয়ালি জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুর রউফ, ওসি একেএম মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশেষ টিম অভিযানে নামে। গত শুক্রবার ভোরে গ্রেফতার করা হয় মোঃ এনামুল কবির, মোঃ মোস্তফা ও মোঃ মুশফিক আবরার ওরফে মাহিনকে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে শিবিরের এ দুর্ধর্ষ ক্যাডাররা জানায়, ২০ দলের ডাকা হরতাল অবরোধের মধ্যে বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বন্দর ও পতেঙ্গা অয়েল বেল্টে হামলা চালিয়ে ধ্বংসযজ্ঞের নির্দেশনা নিয়ে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বারের নির্দেশে এনামুল কবির গত ১২ ফেব্রুয়ারি ট্রেনযোগে চট্টগ্রামে আসে। শিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর নেতা আ স ম মাশরুর হোসাইনের মাধ্যমে বর্তমান সভাপতি নুরুল আমিনের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। নুরুল আমিনের নির্দেশে গ্রেফতারকৃত মোস্তফা এনামুল কবিরকে ট্রেন স্টেশন থেকে রিসিভ করে চকবাজার এলাকার পার্সিবল হিলের একটি ফ্ল্যাটে খুব গোপনীয়তার সঙ্গে অবস্থান দেয়। পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি পার্সিবল হিলের ঐ ফ্ল্যাট থেকে এনামুল কবির শিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা শাখার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার শিবির নেতা খালিদের সঙ্গে পার্সিবল হিল থেকে ফয়েস লেক এলাকায় মহানগর ছাত্র শিবির নেতা এসএম সোহেলের নেতৃত্বে শিবিরের দক্ষিণ জেলা শাখার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। একই দিন সন্ধ্যার পর উত্তর জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি রাসেলসহ অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় ছাত্র নেতা এবং এর পাশাপাশি উত্তর ও মহানগর ছাত্র শিবিরের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও বৈঠক হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি উত্তর শিবির সভাপতি নুরুল আমিন ও দক্ষিণ জেলা শিবির সভাপতি এসএম সোহেলের সঙ্গে এনামুল কবির চট্টগ্রাম কলেজ এলাকার একটি গোপন স্থানে একান্তে বৈঠকে মিলিত হন। এরপর বৈঠক হওয়ার কথা ছিল জামায়াত নেতা সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী ও শিবিরের আরও শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। কিন্তু তার আগে এ পরিকল্পনার কথা গোয়েন্দা সংস্থাসহ পুলিশ সদস্যদের কাছে পৌঁছে যায়। ফলে এনামুল কবিরসহ অন্যরা আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু পুলিশও এদের গ্রেফতারে হন্যে হয়ে তৎপরতা শুরু করে। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার ভোরে এ তিনজন গোপন অবস্থান থেকে গ্রেফতার হয়। এনামুল কবিরের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া থানার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। তার পিতার নাম আইয়ুব আলী। সে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে অনার্স মাস্টার্স করেছে। গ্রেফতারকৃত মোঃ মোস্তফার বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির পাইন্দং এলাকায়। তার পিতার নাম মনির আহমেদ। বর্তমানে সে থাকত বাকলিয়ার মিয়ারবাপের মসজিদ সংলগ্ন একটি ভবনে। গ্রেফতারকৃত মোঃ মুশফিক আবরার ওরফে মাহিনের বাড়ি বাঁশখালীর চেচুরিয়ায়। বর্তমানে থাকত বাকলিয়ার বগারবিল এলাকায়।
×