ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রেফতার অথবা কার্যালয়ে তালা দেয়ার ভয়

যে কারণে শহীদ মিনারে না গিয়ে অফিসে দোয়া মাহফিল করলেন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

যে কারণে শহীদ মিনারে না গিয়ে অফিসে দোয়া মাহফিল করলেন খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় শহীদ মিনারে যাননি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে আসার পর এই প্রথম ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে যাননি তিনি। এমনকি বিএনপির কোন প্রভাবশালী সিনিয়র নেতাকেও শহীদ মিনারে যেতে দেখা যায়নি। সরকারের তরফ থেকে কোন বাধা না থাকলেও কেন খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে গেলেন না এ নিয়ে সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে দুই কারণে খালেদা জিয়া এবার শহীদ মিনারে যাননি বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। এর একটি কারণ হচ্ছে গুলশান কার্যালয় থেকে বের হলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মতো এ কার্যালয়টিও তালাবদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা। আরেকটি কারণ হচ্ছে আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগ থাকায় গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা। এদিকে শহীদ মিনারে না গেলেও শনিবার বিকেলে গুলশান কার্যালয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছেন খালেদা জিয়া। তবে এতে গুলশান কার্যালয়ের বাইরে থেকে তেমন কেউ অংশ নেননি। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে না গেলেও দলের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। শনিবার সকাল ৮টায় বিএনপি চেয়ার পার্সনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তার উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা সকালে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়েছেন। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, দেশে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও নিরাপত্তার কারণে খালেদা জিয়া এবার শহীদ মিনারে যাননি। তার পক্ষে আমরা পুষ্পমাল্য অর্পণ করেছি। এ ছাড়া দলের পক্ষেও আরেকটি পুষ্পমাল্য অর্পণ করেছি। খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এমন একটা অবস্থা সেখানে কেউ যেতে পারেন না। কেউ গেলে তাকে আটক করা হয়। আর কার্যালয়ের ভেতর থেকে বের হলে আবার প্রবেশ যায় না। করাগারে যেভাবে বন্দি করে রাখা হয় খালেদা জিয়াকেও সে অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাই এবার খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে যেতে পারেননি। এক প্রশ্নের জবাবে ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আলোচনা ও সমঝোতা ছাড়া চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে আর কোনো উপায় নেই। তাই আমরা আশা করি, সংলাপের মধ্য দিয়ে বিরাজমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান হবে এবং দেশে সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সন্ত্রাস কেউ চায় না। তাই বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার সন্ত্রাসের বিপক্ষে কথা বলা হচ্ছে। সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আজ বিএনপির শীর্ষ নেতারা কারাবন্দি কেন? এ ধরনের আচরণ বন্ধ করে সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপ আর সমঝোতার আবহ তৈরি করতে হবে। ভাষা শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় গুলশান কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল ॥ ভাষা শহীদদের আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করে গুলশান কার্যালয়ে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ কাইয়ুম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা, খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শামসুল আল আমিন ডিউ, একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সমন্বয়কারী লে. কর্নেল (অব.) এম এ মজিদ, প্রেসউয়িং কর্মকর্তা সামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান প্রমুখ। খাবার নিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি সাবেক সেনা কর্মকর্তারা ॥ খাবার নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি সাবেক ১২ সেনা কর্মকর্তা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গুলশান কার্যালয়ের কাছে ৮৬ নম্বর সড়কের দক্ষিণ পাশ থেকেই তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন ধরনের খাবার প্যাকেট, পানি ও কলা দেখা গেছে। খাবার নিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না পেরে মেজর (অব) ওহিদুন নবী সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ নিয়ে আসেনি। আমাদের উদ্দেশ ছিল সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী কেমন আছেন তা দেখা। খালেদা জিয়া না খেয়ে আছেন শুনে আমরা ব্যথিত হয়ে খাবার নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। আমরা এর নিন্দা জানাই। আবার খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের কাছে ব্যারিকেড ॥ শনিবার বিকেল থেকে আবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের কাছে ৮৬ নম্বর সড়কের উভয়মুখে ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ। এর ফলে সড়কটি দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে শনিবার বিকেল থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে কেউ খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের কাছ দিয়ে যেতে পারেনি।
×