ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পানি এলে ইলিশ যাবে মমতাকে সাফ জানালেন শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পানি এলে ইলিশ যাবে মমতাকে সাফ জানালেন শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনার ছবি হঠাৎ বৃষ্টি দিয়ে বাজিমাত করেছিলেন ফেরদৌস। এরপর থেকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বার বার ফেরদৌসকে দেখা গেছে ওপার বাংলার ছবিতে। এইতো বুনোহাঁসের চিত্রায়নে কিছুদিন আগে দেব এসেছিল ঢাকায়। পাগলু, রংবাজ, দুই পৃথিবী, বিন্দাস আর যোদ্ধার মতো ছবিতে দেবকে বাংলার দর্শক আবিষ্কার করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের ভবিষ্যত হিসেবে। মহাকালের শ্রেষ্ঠ নায়িকা সুচিত্রা সেনের মেয়ে মুনমুন সেনকে এখনও বাংলাদেশের মানুষ নিজের ঘরের মানুষ প্রাণের মানুষই মনে করেন। কারণ সুচিত্রা সেন আমাদের এই মাটিরই মানুষ ছিলেন। সে হিসেবে তাঁর মেয়ের প্রতি অধিকারটা বাড়াবাড়ি রকমের দেখালেও ক্ষতি কিসের! প্রসেনজিৎ তাঁর ২৭ বছরের চলচ্চিত্র জীবনে দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয়। নচিকেতার গান শোনেননি এমন মানুষ বাংলাদেশে ক’জনই বা আছে। বৃদ্ধাশ্রম থেকে হাজারও কবিতা বেকারও সবিতা এমন কোন গান নেই যা আমাদের না শোনা। অন্যদিকে আলী যাকের, আলমগীর, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, ফকির আলমগীর, সামিনা চৌধুরী, তারানা হালিম, মৌসুমী এদের সকলে আমাদের দেশের শিল্পাঙ্গনের একেকজন স্তম্ভ। একেকটি প্রতিষ্ঠান। শবিবার দুপুরে মধ্যাহ্নভোজকে কেন্দ্র করে দুই বাংলার শিল্পীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল গণভবন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন সকলে। সঙ্গে ছিলেন ওপার বাংলার দিদি মমতা। বাংলাদেশীদের আতিথেয়তায় ওপার বাংলার বাঙালীরা বরাবরই মুগ্ধ হন, তা আরও একবার হলেন। তবে এবার এভাবে ভাষার মাষে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে এসেই আগেভাগেই নিজেদের উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছেন। এমন করে বাংলাদেশে ভাষাকে সম্মান জানানো হয় তা বাঙালীমাত্রই সকলকে আবেগাপ্লুত করে। কেননা মায়ের ভাষার দাবিতে এভাবে কোথাও কারও জীবন দিতে হয়নি। শনিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন মমতা ব্যানার্জী। বৈঠকের একপর্যায়ে তাঁদের দু’জনের সঙ্গে বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ দুই দেশের চলচ্চিত্রকর্মীদের দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি করে পদ্মার ইলিশ চেয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পানি এলে ইলিশ যাবে। আর প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মধ্যাহ্নভোজে মমতা ব্যানার্জীকে চার পদের ইলিশ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া মধ্যাহ্নভোজে ইলিশই হয়েছিল অন্যতম আকর্ষণ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে বাংলাদেশের বিখ্যাত ও সুস্বাদু ইলিশ মাছ দিয়েই আপ্যায়ন করা হয়। বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আরও বেশি ইলিশ আমদানির একটা জোরালো দাবিও আছে মমতার। তাই শনিবারের মধ্যাহ্নভোজে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বিশেষ ১২ পদের আয়োজন রাখা হলেও তার মধ্যে ছিল চার পদের ইলিশ। সরষে ইলিশ, ইলিশ ভাজা, ইলিশের ডিম আর ভাপা ইলিশের সুনাম তাই শোনা গেল মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেয়া সব অতিথির মুখে। উপাদেয় এ খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে দেখা গেল তাঁদের। এছাড়া খাবারের তালিকায় আরও ছিল চিতল মাছের কোপ্তা, চিংড়ির মালাইকারি, রূপচাঁদা ভাজা, রুইয়ের পেটি, খাসির রেজালা, চিকেনকারি, মিক্সড ভেজিটেবলকারি ইত্যাদি। আরও ছিল বাংলার বিখ্যাত রসমালাই ও মিষ্টি দই। মমতার সফরসঙ্গী টালিউড নায়ক দেব টুইট করেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর লাঞ্চে অংশ নিতে পেরে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানান, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ সরবরাহ কমে যাচ্ছে। পদ্মার ইলিশ আরও বেশি করে পেতে চায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। তাঁর এই কথার জবাবে শেখ হাসিনা স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেন, পানি এলে ইলিশ যাবে। মমতার সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকায় আসেন পশ্চিমবঙ্গের নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পর্যটনমন্ত্রী চলচ্চিত্র পরিচালক ব্রাত্য বসু, চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, চলচ্চিত্র তারকা প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী, তৃণমূলের এমপি অভিনেতা দীপক অধিকারী দেব, কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা, তৃণমূলের এমপি অভিনেত্রী মুনমুন সেন, অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতি অরিন্দম কাজীর স্ত্রী কল্যাণ কাজী, কবি সুবোধ সরকার প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া মধ্যাহ্নভোজে এঁরা সকলেই অংশ নেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসে পৌঁছেন মমতা ব্যানার্জী। বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাঁকে স্বাগত জানান। এ সময় ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ও শনিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন মমতা ব্যানার্জী। শনিবার রাতে কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন মমতা ও তাঁর সফরসঙ্গীরা। অন্যদিকে বাংলাদেশের আতিথেয়তায় বরাবরই মুগ্ধ হওয়ার মতো, এবারও সেই অনুভূতিতে আচ্ছন্ন ওপার বাংলার অভিনেতা প্রসেনজিৎ ও দেব। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন আসেন তাঁরা। সেখান থেকে সরাসরি রাজধানীর কারওয়ানবাজারে প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে ওঠেন প্রসেনজিৎ ও দেব। হোটেলে পৌঁছে দেব ফেসবুক পেজে বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসায় মুগ্ধ হওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘মাত্রই ঢাকায় পা রাখলাম। আহ্, কী উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তা! এর তুলনা হয় না। সত্যিই এখানকার মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় নতজানু হয়ে যেতে চাইছে মন!’ অভিনেতা পরিচয়ের গ-ি ছাপিয়ে দেব এখন একজন সাংসদও। ভারত-বাংলাদেশের পতাকাসংবলিত একটি স্মারক উপহার হিসেবে পেয়েছেন তিনি। সেটাও ফেসবুক পেজে দিয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী এই তারকা। ’৫২-এর ভাষা শহীদদের প্রতি শদ্ধা নিবেদনের প্রতি আবেগাপ্লুত হয়ে প্রসেনজিৎ বলেছেন, এত কাছ থেকে এই আয়োজন দেখতে পেরেই তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন।
×