ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চরম অবহেলায় ৬১ বছর কেটে গেল ভাষাসৈনিক আজিমউদ্দিনের

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

চরম অবহেলায় ৬১ বছর কেটে গেল ভাষাসৈনিক আজিমউদ্দিনের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৯৫২ সালে বাঙলাকে মাতৃভাষা করার দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল সারাবাংলা, আন্দোলন যে শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না তা নয়। ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলার প্রতিটি প্রান্তরে। পরবর্তী সময়ে তার অনেক কিছুই প্রকাশ পেয়েছে অনেক কথাই রয়ে গেছে অজ্ঞাতে। ভাষা দিবস এলেই বাঙালীর প্রাণের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের স্মরণ করা হয়। এমনি এক মানুষ আজিম উদ্দিন আহমেদ (৮১)। বাঙলায় কবিতা লিখে স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। আর এখন তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে বহু বছর পর। আজিম উদ্দিন আহমেদ জানালেন, ‘ঘুষের থলি এবং পকেট ভারি’ নিজের স্বরচিত এই দুই কবিতা আবৃত্তি করতে গিয়ে তিনি স্কুল থেকে চিরদিনের জন্য বহিষ্কৃত হন। মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহ্্রাওয়ার্দী এমনকি একে ফজলুল হকের মতো মানুষ পাকিস্তানী সরকারের এ অন্যায় আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানালেও তা প্রত্যাহার হয়নি। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আরও হয়রানি করা হয় এ ভাষাসৈনিককে। ভাষার জন্য স্কুল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তার আর লেখাপড়া হয়নি। সেই দুই কবিতা আবৃত্তি করতে করতে তিনি জানালেন, পাকিস্তানের শোষণ আমার সহ্য হতো না। সবক্ষেত্রে আমাদের প্রতি চরম অবহেলার মানসিকতা দেখানো হতো। মন চাইতো প্রতিবাদ করতে। সে সময় ১৯৪৮ সালে বাঙলা ভাষার আন্দোলন শুরু হয় ঢাকাতে। পরবর্তী কালে ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দাবির মিছিলে গুলি চালালে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। আমরাও সেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হই। সে বছরই ডিসেম্বরে বৃহত্তর ময়মনসিংহ নেত্রকোনা মহকুমায় আয়োজিত সাহিত্য সম্মেলনে বাঙলায় কবিতা আবৃত্তি করার দায়ে সরকার স্কুলের মাধ্যমে আমাকে চিরকালের জন্য বহিষ্কার করে। জানা যায়, জীবনের শেষ সময় কাটছে চরম অবহেলা আর দারিদ্র্যে। একষট্টি বছর পর নিজের ছাত্রত্ব ফিরে পেলেন নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ভাষাসৈনিক আজিম উদ্দিন আহম্মেদ। উনিশ’শ তিপ্পান্ন সালে বাংলায় স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করার দায়ে নিজের ছাত্রত্ব হারিয়ে কেটে গেছে জীবনের সবটুকু মূল্যবান সময়। জীবন সায়াহ্নে এসে নিজের ছাত্রত্ব ফিরে পেলেও হারিয়েছেন জীবনের সোনালি সব স্বপ্ন। আর জীবনের শেষ সময় কাটছে এ ভাষাসৈনিকের চরম অবহেলা আর দারিদ্র্যের মধ্যে। ছাত্রত্ব হারানের সময় তিনি নেত্রকোনা আঞ্জুমান আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীতে পড়তেন। এরপর যোগ দেন ভাষা আন্দোলনে । বাঙালী ভাষা ফিরে পেলেও চরম অযতœ আর অবহেলায় কেটেছে তাঁর জীবনের একষট্টি বছর। দীর্ঘসময় পর স্কুলের শত বর্ষ অনুষ্ঠানে নিজের ছাত্রত্ব ফিরে পান এ ভাষাসৈনিক। ভাষাসৈনিক আজিম উদ্দিন আহমেদ জানান, ছাত্রজীবনে বহিষ্কৃত হওয়ায় ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শিখালেও ভাল কোন চাকরিতে দিতে পারেননি তিনি। নিজের জীবনের এ কলঙ্কের ছাপ পড়েছে ছেলে-মেয়েদের জীবনেও। আজিমউদ্দিন আহমেদের ছোট ছেলে আনিসুর রহমান জানালেন তাঁর বাবার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়ায় খুশি এলাকাবাসীও। তবে তারা এ ভাষাসৈনিকের রাষ্ট্রীয় সম্মান দাবি করেছেন। এ মাসেই ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়ার কাগজপত্র তুলে দেয়া হবে তাঁর হাতে। একটি সনদ ও দেয়া হবে বলে সম্প্রতি জানান স্কুলের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ড. তরুণ কান্তি শিকদার।
×