ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো- ॥ আজ অমর একুশে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আমার ভাইয়ের রক্তে  রাঙানো- ॥ আজ অমর একুশে

মোরসালিন মিজান ॥ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করিলিরে বাঙালী/তোরা ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি...। মায়ের ভাষার জন্য বিরল রক্তস্রোত। রাজপথ ভেসে গিয়েছিল তরুণ তাজা খুনে। তোমার কোলে তোমার বোলে কতই শান্তি ভালবাসা...। মায়ের মুখের সেই বুলি আর ভালবাসা আক্রান্ত যখন, তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল বাঙালী। ঘাতকের ছিল বুলেট। বুকে তা লেগেছিল বটে। বাপ-দাদার ভাষাকে বিদ্ধ করতে পারেনি। গরিমার সবটুকু নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আমরি বাংলা ভাষা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার সম্মান পেয়েছে। বছর ঘুরে আবারও এসেছে ভাই হারানোর ব্যথা আর মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার গৌরবে অত্যুজ্জ্বল সেই দিন। আজ ২১ ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই দিনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে এসেছিল বাংলা মায়ের বিক্ষুব্ধ সন্তানেরা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মুখর ছাত্রদের রুখে দিতে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। বরকত সালাম রফিক শফিক জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেক শহীদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা। সেই থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে। মহান শহীদ দিবস। সর্বত্র আজ গীত হবে কালজয়ী সুরÑ মায়ের ভাষায় কথা বলাতে/ স্বাধীন আশায় পথ চলাতে/ হাসিমুখে যারা দিয়ে গেল প্রাণ/ সেই স্মৃতি নিয়ে গেয়ে যাই গান...। ভাষার অধিকারের পক্ষে লড়ার পাশাপাশি, ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন শোষণের বিরুদ্ধে একুশ ছিল বাঙালীর প্রথম প্রতিরোধ। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতিসত্তার যে স্ফুরণ ঘটেছিল তা-ই পরবর্তীতে বাঙালীর জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক প্রেরণা যোগায়। অর্জনের ধারাবাহিকতায় ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বসম্প্রদায়ের স্বীকৃতি লাভ করেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে দিবসটি। নিজ নিজ মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানানোর বিশেষ উপলক্ষ হয়ে এসেছে ২১ ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। এবার এমন এক সময়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে যখন একুশের চেতনায় এগিয়ে চলা বাংলাদেশকে খামচে ধরার অপচেষ্টায় লিপ্ত সেই পুরনো শকুন। স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় যখন একে একে কার্যকর হতে চলেছে তখন দেশের রাজনৈতিক পরিম-ল অস্থির অশান্ত করার চক্রান্তে লিপ্ত চিহ্নিত গোষ্ঠী। প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে চলেছে। রাজনীতির নামে চলছে নিরীহ নির্দোষ মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার পৈশাচিক খেলা। কিন্তু একুশ মানে যে মাথা নত না করা! আর তাই শুধু শোক নয়। সহ্য করে যাওয়া নয়। সকল অন্যায় অশুভ অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানে আজ শনিবার সারাদেশে পালিত হবে অমর একুশে। সমাজের সকল অন্যায় অসাম্য ধর্মান্ধতা সাম্প্রায়িকতার বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার নতুন শপথ নেবে বাঙালী। গীতিকবির ভাষায়Ñ স্বাধীন এই বাংলা আমার/ কোটি প্রাণ শহীদ মিনার/ নেবই নেব, নেবই নেব/ নেবই নেব আমরা মনের মতো এই দেশ গড়ে...। একুশের প্রথম প্রহর থেকে শুরু হয়ে গেছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে। সকলের কণ্ঠে এখন একই শোকসঙ্গীতÑ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুরুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি...। ভাষা শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদও ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর উপস্থিতি। ওপার বাংলার জনগণের পক্ষে আজ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন মমতা। এর পর পরই সর্বস্তরের জনতার ঢল নামবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ ফুল দিয়ে ভাষার প্রতি নিজেদের ভালবাসার কথা জানাবে। নগ্নপায়ে অংশ নেবে প্রভাতফেরিতে। আজ শহীদদের স্মরণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। একই সঙ্গে সর্বত্র ওড়ানো হবে শোকের কালো পতাকা। ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়। জন্ম নেয় পৃথক দুই রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের দুই অংশ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান। সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্বাঞ্চলের মানুষ বাঙালী। মাতৃভাষা বাংলা। অপরদিকে পশ্চিমাঞ্চলে প্রচলিত ছিল সিন্ধী, পশ্তু, বেলুচ, উর্দুসহ আরও কয়েকটি ভাষা। এ অবস্থায় পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলীম লীগ নেতৃত্ব সমগ্র পাকিস্তানের আনুমানিক পাঁচ শতাংশের ভাষা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত শুরু করে। অথচ তারও অনেক আগে পূর্ব পাকিস্তানে ভাষাচেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। মায়ের ভাষার প্রতি বাঙালীর অনুভূতি কত তীব্র ছিল তা জানিয়ে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম লিখেছিলেনÑ যে সব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/ সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি...। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এই অনুভূতি স্পর্শ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। এ অঞ্চলের মানুষকে পেছনে ফেলে রাখার প্রাথমিক ষড়যন্ত্র হিসেবে ভাষার ওপর আঘাত হানে। মায়ের ভাষা বাংলা মুখ থেকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। বাংলাভাষী মানুষের সকল অনুভূতি তুচ্ছ করে উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা আসতে থাকে শীর্ষ মহল থেকে। এমন ষড়যন্ত্রে হতবাক হয়ে পড়ে বাংলার মানুষ। বাঙালীর সে সময়ের মনোজগত তুলে ধরে কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেনÑ মাগো, ওরা বলে/ সবার কথা কেড়ে নেবে।/তোমার কোলে শুয়ে/ গল্প শুনতে দেবে না।/ বলো, মা,/ তাই কি হয়? এর পরও নিজেদের সিদ্ধান্তে স্থির থাকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা। গণচেতনাকে স্তব্ধ করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। এ অবস্থায় বাঙালীর সামনে দুর্বার আন্দোলনের বিকল্প ছিল না। সবাই যেন একসঙ্গে গেয়ে উঠেছিলেনÑ সইমু না আর সইমু না অন্য কথা কইমু না/যায় যদি ভাই দিমু সাধের জান/এই জানের বদলে রাখুম রে/বাপ-দাদার জবানের মান...। সাধের জান হাসিমুখে বিলিয়ে দিয়ে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিল বাঙালী। ১৯৪৮ সাল এবং ১৯৫২ সালের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম তার প্রমাণ। বিশেষ করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানীদের গোয়ার্তুমির চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে। এদিন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি রুখতে ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। কিন্তু সকল ভয় জয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাজপথে নেমে আসে। বাংলার দাবি চিরতরে স্তব্ধ করতে মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। মাটিতে লুটিয়ে পরে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার ও আবদুস সালাম, শফিক, রফিকসহ নাম না জানা আরও অনেকে। ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হন। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও রাজপথে নেমে আসেন। স্বজন হারানোর স্মৃতি অমর করে রাখতে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের স্মরণে গড়ে তোলা হয় স্মৃতিস্তম্ভ। ২৬ ফেব্রুয়ারি স্মৃতির মিনার গুঁড়িয়ে দেয় পুলিশ। তবে কাজ হয় না কোন। বাঙালীর ভাষার আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। ৯ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি লাভ করেছে অমর একুশে। রাষ্ট্রপতির বাণী ॥ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিতে ঋদ্ধ হয়ে অন্যের ভাষা ও সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্যে নিহিত আছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল চেতনা। এ চেতনাকে ধারণ করে পৃথিবীর সব ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপিত হোকÑ এ কামনা করেন রাষ্ট্রপতি। অমর একুশে বাঙালী জাতির চিরন্তন প্রেরণার উৎস উল্লেখ করে ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা অসংখ্য শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি। সেই সঙ্গে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সকল ভাষা সৈনিককে। মোঃ আবদুল হামিদ মহান ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, এ আন্দোলন ছিল আমাদের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজস্ব জাতিসত্তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষারও আন্দোলন। বাঙালী জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে এ আন্দোলনের মাধ্যমে। অমর একুশে অবিনাশী চেতনা হয়ে পরবর্তীকালে স্বাধিকার ও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র্র প্রতিষ্ঠায় আমাদের যুগিয়েছে অসীম প্রেরণা ও শক্তি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং তাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। প্রধানমন্ত্রীর বাণী ॥ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বাংলাভাষীসহ বিশ্বের সকল ভাষা ও সংস্কৃতির জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অমর একুশে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালী জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক। আসুন সকল ভেদাভেদ ভুলে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হই। পবিত্র সংবিধান ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখি। সন্ত্রাস ও হানাহানির পথ পরিহার করে দেশ ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদলীয় নেতার বাণী ॥ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, দিনটি এখন আর শুধু শোক ও বেদনার নয়। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সব ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সার্বজনীন উৎসবের দিন। ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান বিরোধীদলীয় নেতা। বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাণী ॥ ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে যাচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তবে এক বাণীতে তিনি বলেছেন, ২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় জীবনে এক তাৎপর্যপূর্ণ দিন। বায়ান্নর আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় একাত্তরে বিজয় অর্জিত হয়। একুশের চেতনায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সকলকে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। অমর একুশের কর্মসূচী ॥ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৫ উপলক্ষে সারাদেশেই আজ থাকবে নানা আনুষ্ঠানিকতা। বিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হবে। এখানে বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও গ্রহণ করা হয়েছে পৃথক কর্মসূচী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাতে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হবে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। কালোব্যাজ ধারণ করবেন নেতা কর্মীরা। এছাড়া রবিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনাসভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে কর্মসূচী। বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করবে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। উদীচীর উদ্যোগে শুক্রবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গোষ্ঠীর সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তারও আগে থেকে চলছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অনুষ্ঠান। আজ ধানম-ির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে থাকবে একুশের বিশেষ আয়োজন। সকাল সাড়ে ১০টায় সেগুনবাগিচার নিজস্ব কার্যালয়ে একুশের অনুষ্ঠান আয়োজন করবে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা। সভাপতিত্ব করবেন মেলার পরিচালক খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করবে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পার্টি, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগর দোকান কর্মচারী ফেডারেশনসহ ছোট বড় প্রায় সব সংগঠন। এভাবে নানা আয়োজনে সারাদেশেই স্মরণ করা হবে ভাষা শহীদদের। জানানো হবে বিনম্র শ্রদ্ধা।
×