ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরবরাহ পথ হারাচ্ছে আইএস

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সরবরাহ পথ হারাচ্ছে আইএস

কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বাহিনী পরপর কয়েকটি ছোটখাটো যুদ্ধে উত্তর ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো থেকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গীদের হটিয়ে দেয়ার জন্য লড়াই করছে, যা ওই ‘খিলাফতের’ ওপর প্রচ- প্রভাব ফেলছে। আইএসের বিরুদ্ধে ওইসব সংঘর্ষের একটি বড় ধরনের সাফল্য হলো একটি মহাসড়ক দখল, যা আইএসের অস্তিত্ব রক্ষাকারী রসদ সরবরাহের একটি গুরুত্বপপূর্ণ পথ। এটি ইরাকের মসুলে গোষ্ঠীর শক্ত ঘাঁটি থেকে ৩শ’ মাইল দূরবর্তী তাদের স্বঘোষিত রাজধানী রাকাসহ উত্তর- পূর্বাঞ্চলীয় সিরিয়ার ছিটমহল অঞ্চল পর্যন্ত প্রসারিত। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও বিবিসির। আইএস তাদের নৃশংস কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে যে ক্রমবর্ধমান আতঙ্কের জন্ম দিয়েছেম, তার জন্যই এসব লড়াই চালানো হচ্ছে। আইএসের বর্বরতম কাজের মধ্যে আছে সম্প্রতি আটককৃত জর্দানী পাইলটকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা এবং চরমপন্থী গোষ্ঠীর লিবিয়াভিত্তিক অনুগামীদের হাতে ২১ মিসরীয় খ্রীস্টানের শিরñেদ। তবে, জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে আইএস যোদ্ধারা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় যখন ইরাকী কুর্দী বাহিনী মসুলের পশ্চিমে কিস্কে শহরের একটি প্রধান মহাসড়কের কিছু অংশ দখল করে নেয়। আইএস এখনও মহাসড়কটি ব্যবহার করছে। একটি বিকল্প পথ ব্যবহার করে তারা কিস্কের কাছাকাছি পৌঁছাচ্ছে। ইরাকী কুর্দী যোদ্ধারা যদি তাদের দখল বজায় রাখতে তা আরও সম্প্রসারণ করতে পারে, তবে ইসলামী চরমপন্থীরা ওই অঞ্চলে ‘এক ধরনের অবরোধের মধ্যে পড়বে। এটি তাদের রসদ সরবরাহের ব্যাপারে কঠিন অবস্থায় ফেলে দেবে।’ ইরাকী গবেষক ও চরমপন্থী গোষ্ঠী সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ হিশাম আল-হাশেমী একথা বলেন। মহাসড়কটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে সুন্নি যোদ্ধাদের লোকজন, নগদ অর্থ ও অস্ত্র পরিবহনের জন্য সুদীর্ঘ ও সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ পথের ওপর নির্ভর করতে হবে। জিহাদীপন্থীরা গত গ্রীষ্ম থেকে পথটি নিয়ন্ত্রণ করছে। উত্তর ইরাকের আধাস্বায়ত্তশাসিত কুর্দী অঞ্চলের পেশমার্গা যোদ্ধারা গত ডিসেম্বর থেকে একের পর এক হামলা শুরু করে। তাদের সামরিক অভিযানের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল সিনজার- একটি ইরাকী শহর, গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি যাকে দ্বিখ-িত করেছে। তবে কুর্দী বাহিনী তাদের অভিযান তীব্রতর করে। ইসলামিক স্টেট জুন মাসে মসুুল দখল করে নেয়। তারা ইরাকী শহরটিকে ইতোমধ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিরীয় ভূখ-ের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ওই মাসেই আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদী তাদের দখল করা একহাজার বর্গমাইলের ভূখ-ে একটি খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। বিশ্লেষকরা বলেন, মসুল ও রাকার মধ্যবর্তী মহাসড়কটি হারানো আইএসের জন্য শুধু রসদ সরবরাহজনিত পরাজয়ই নয় বরং একটি মনস্তাত্ত্বিক পরাজয়ও বটে। এদিকে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ২৫ হাজার যোদ্ধার একটি যৌথ ইরাকী কুর্দী সামরিক বাহিনী আইএসের কাছ থেকে ইরাকের মসুল শহর পুনর্দখল করার প্রস্ততি নিচ্ছে। ওই উর্ধতন সামরিক কর্মকর্তা জানান, উত্তরাঞ্চলীয় শহরটি পুনরায় দখল করার অভিযান সম্ভবত এপ্রিল বা মে মাসে শুরু হবে। ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি বর্তমানে ১ হাজার থেকে ২ হাজার আইএস জঙ্গী দখল করে রেখেছে। গত জুনে ১০ লাখ জনসংখ্যার মসুলের আইএসের হাতে পতন হয়। নাম প্রকাশ না করা ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, বিমান হামলার নির্দেশনা দিতে মার্কিন সামরিক উপদেষ্টাদের কোন ক্ষুদ্র দলের প্রয়োজন হবে কিনা সে ব্যাপারে কোন সিদ্বান্ত নেয়া হয়নি। কর্মকর্তাটি বলেন, আগামী মে মাসের মধ্যে অভিযান চালানোর প্রয়োজন পড়বে। অন্যথায় গ্রীষ্মের গরম আবহাওয়া মোকাবেলা করতে হবে। তবে ইরাকী বাহিনী প্রস্তুত না হলে অভিযান বিলম্বিত হতে পারে। ওয়াশিংটনে বিবিসির গ্যারি ও’ডনোঘ বলেন, অভিযানের সময় সুনির্দিষ্ট করে দেয়াটা অস্বাভাবিক। তবে, যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়েছে যে, আইএস বাহিনী বর্তমানে পিছু হটছে এবং ওয়াশিংটনকে দেখাতে হবে যে, ইরাকী সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে তাদের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হচ্ছে। ইতোপূর্বে বিবিসির জন সিম্পসনের সঙ্গে সাক্ষাত করে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদী তাঁর বাহিনীর ‘মসুলে একটি পরিকল্পিত অভিযানের’ বিষয়টি সুনিশ্চত করেন। তিনি আর বলেন, গত ৪/৫ সপ্তাহে আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি মনে করি বিমান হামলার মান ও তীব্রতা বেড়েছে।
×