ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধ হচ্ছে মোবাইল এ্যাকাউন্ট

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বন্ধ হচ্ছে মোবাইল এ্যাকাউন্ট

অভিযোগটি বেশ কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল। সম্প্রতি তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে দেশে সহিংসতা, নাশকতা বন্ধে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বন্ধ করা হচ্ছে ৯৮ হাজার ২৮৩ মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জঙ্গীরা নির্বিঘেœ নাশকতা, বোমাবাজি, গোপন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, অর্থ আদান-প্রদানসহ অন্যান্য কর্মকা- পরিচালিত করে আসছিল। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালে রাজধানীসহ সারাদেশে নাশকতা, বোমাবাজি, সহিংসতা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে। মূলত জামায়াতের সশস্ত্র জঙ্গীরা দেশব্যাপী এসব নাশকতা চালিয়ে আসছে। এসব নাশকতায় দলীয় নেতৃবৃন্দের আদেশ-নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে জঙ্গীরা। দেশব্যাপী কর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ে সম্পৃক্ত রাখতে অর্থকড়ির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব অর্থ লেনদেনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে মোবাইল ব্যাংকিং। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সারাদেশে অবাধে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি সম্পন্ন হয়ে থাকে। অনুসন্ধানে একশ্রেণীর অসাধু চক্রের যোগসাজশে মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনায় অনিয়মের মতো স্পর্শকাতর বিষয়টিও প্রকাশ হয়ে পড়ে। দ্রুত বন্ধ হতে যাওয়া ৯৮ হাজার ২৮৩টি মোবাইল ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মধ্যে ৭০ হাজারেরও বেশি এ্যাকাউন্ট রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশের। এ ছাড়া ডাচ্-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং ও ইসলামী ব্যাংকের এম ক্যাশের হিসাব রয়েছে ২৮ হাজার। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সন্দেহজনক এসব হিসাব চিহ্নিত করে তা বন্ধ করতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), মোবাইল অপারেটর ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর সন্দেহজনক গ্রাহকদের গত ৬ মাসের লেনদেন তদন্ত করে ব্যাংকগুলোতে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সন্দেহজনক এসব ব্যাংক এ্যাকাউন্টের অর্ধেকেরও বেশি পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। দেশের কিছু চিহ্নিত এলাকায় পেট্রোলবোমা, নাশকতার ঘটনায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকা বা দেশের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে টাকা পাঠিয়ে ভাড়াটিয়া ঠিক করে তাদের মাধ্যমে বিদ্যমান সহিংসতার নামে নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রোলবোমা, ককটেল, অগ্নিসংযোগসহ নাশকতা চালানো হচ্ছে। যেসব এলাকায় নাশকতা বেশি সেসব এলাকায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনও বেশি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন দেশ থেকে ২৩ মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মুক্তিপণ বাবদ ২১ লাখ ৫২ হাজার টাকার লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ লেনদেন ও বিদেশ থেকে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেও নিয়মিত টাকা আসছে, যা সরাসরি ব্যবহৃত হচ্ছে নাশকতামূলক কর্মকা-ে। অভিজ্ঞমহল মনে করছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের বিষয়টিকে চিরতরে বন্ধ করতে হলে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশে ১১ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর মধ্যে ৯০ লাখ সিম যথাযথ নিবন্ধিত নয়। এসব সিম বন্ধ ও নতুন সিম প্রদানকারীদের ক্ষেত্রে নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণসাপেক্ষে সিম দেয়া যেতে পারে। এসব করা না গেলে নাশকতামূলক কর্মকা- সহজে রোধ করা যাবে না।
×