ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অমর একুশে ফেব্রুয়ারির পথ ধরেই উন্মেষ ঘটেছিল বাঙালীর জাতীয়তাবোধের। মায়ের ভাষার জন্য ঝরেছিল ভাষাশহীদদের পবিত্র রক্ত। বৃহস্পতিবার বসন্ত সন্ধ্যায় কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হলো বাংলা বর্ণমালার জন্য প্রাণ দেয়া সেই শহীদদের। পরিবেশিত হলো ভাষা আন্দোলনের কবিতা দিয়ে সাজানো আবৃত্তি প্রযোজনা ‘একুশ’। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে কবিতার দোলায়িত ছন্দে উপস্থাপিত হলো বায়ান্নর অশ্রুভেজা বীরত্বগাঁথা। ভাষা আন্দোলনের ওপর রচিত বিভিন্ন কবির ২৭টি কবিতা দিয়ে সাজানো প্রয়োজনাটি পরিবেশন করে সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র। কবিতাপ্রেমীদের জন্য অনন্য এ আয়োজনটির সেøাগান ছিল ‘পুষ্পের মতো ঝরেপড়া থোঁকা থোঁকা রক্তের ছোপ/বাংলার মানুষের ধমনীতে পুঞ্জীভূত হোক’। আরুণ আরিফের গ্রন্থনায় প্রযোজনাটির নির্দেশনায় ছিলেন এ কে এম সামছুদ্দোহা। একুশের গান শিরোনামের বৃন্দ কবিতাপাঠের মাধ্যমে এই কবিতাসন্ধ্যার সূচনা হয়। তোফাজ্জল হোসেন রচিত ২১ চরণের কবিতার শরীর বেয়ে উঠে আসে বাংলা ভাষার ইতিহাস, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা, সংগ্রামের আহ্বান আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। অনেকগুলো কণ্ঠ এক স্বরে উচ্চারণ করেÑ রক্তে রক্তে লাল হয়ে গেল সেদিন মাটির বুক/আকাশের দিকে হাত তুলে জনতারা উন্মুখ/দুঃশাসনের পেষণ রুধিতে হ’ল দৃঢ় উৎসুক। এরপর উচ্চারিত হয় অমর একুশকে নিবেদিত শামসুর রাহমানের অনবদ্য সেই কবিতা বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা। মাসুদ পারভেজের প্রকম্পিত কণ্ঠে উচ্চারিত হয়Ñ এখন তোমাকে নিয়ে খেঙরার নোংরামি/এখন তোমাকে নিয়ে খিস্তি-খেউড়ের পৌষমাস/তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো/বর্ণমালা, আমার দুখিনী বর্ণমালা। এভাবেই মিলনায়তনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বাংলা বর্ণমালাকে নিবেদিত দুই ঘণ্টা ব্যাপ্তির শিল্পিত উচ্চারণ। একে একে পাঠ করা হয় আসাদ চৌধুরীর কবিতা ‘ফাল্গুন এলেই’, দাউদ হায়দারের ‘একুশ’, শহীদুল্লাহ কায়সারের ‘শহীদের মাকে’, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘কোন এক মাকে’, মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’, আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘স্মৃতিস্তম্ভ, হুমায়ুন আজাদের ‘বাংলা ভাষা’, আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’সহ একগুচ্ছ কবিতা। শিল্পকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ণিল আয়োজন্ ॥ চার দশক আগের কথা। জাতীয় সংস্কৃতির গৌরবময় বিকাশকে জাতীয় আন্দোলনে পরিণত করতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৭৪ সালে যাত্রা শুরু করে এই জাতীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রটি। খরস্রোতা সময়ের গতিময় পথচলার পরিক্রমায় প্রতিষ্ঠানটি এ বছর পূর্ণ করল প্রতিষ্ঠার ৪১ বছর। আর এই সাফল্যের উদ্্যাপন হিসেবে একাডেমির পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। নৃত্য-গীত, ব্যান্ডসঙ্গীত, কাওয়ালি ও এ্যাক্রেবেটিকের মনোমুগ্ধ উস্থাপনা দিয়ে সাজানো হয়েছে বর্ণিল এ আয়োজন। বৃহস্পতিবার বসন্তের মৃদুমন্দ বাতাসমাখা সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বর্ণাঢ্য পরিবেশনা মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ একাডেমির নন্দন মঞ্চ। শুরুতেই পরিবেশিত হয় শুভেচ্ছা ভালোবাসা শীর্ষক নৃত্যালেখ্য। একঝাঁক শিল্পীর মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির অনিন্দ্য প্রকাশে জলাধার বেষ্টিত মঞ্চটিতে যেন বয়ে যায় প্রাণের স্পন্দন। উন্মুক্ত এ আয়োজনে দর্শক-শ্রোতাকে মুগ্ধ করা এ নৃত্যালেখ্যটির পরিচালনায় ছিলেন খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ। নাচের পরে ছিল সমবেত সঙ্গীতের সুরেলা শব্দধনির অনুরণন। বৃন্দ গানের এ পরিবেশনায় অংশ নেয় ঢাকা সাংস্কৃতিক দল ও বহ্নিশিখা। একক কণ্ঠের সঙ্গীত পরিবেশনার পর্বটি ছিল শ্রোতাদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। সুরের মায়াজাল ছড়িয়ে শ্রোতার হৃদয়ে প্রশান্তির বীজ বুনে দেন খ্যাতিমান দুই কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী ও শাকিলা জাফর। এছাড়াও গান শুনিয়ে সঙ্গীতপিপাসুদের মনে ভাললাগার পরশ ছড়ান দিনাত জাহান মুন্নি ও সায়ান। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় একই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপনের সমাপনী আয়োজন। মাতৃভাষা দিবসের মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ॥ সোহরাওয়াদী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি। দলীয় নৃত্য, পথ নাটক ও মঞ্চ নাটকের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে আয়োজন। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান ও পথনাটক পরিষদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনের ১৯তম দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন বিকেলে সোহেল রহমানের পরিচালনায় দুইটি দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যদল শিখর।
×