ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এবার কেপিআইয়ে হামলার আশঙ্কা ;###;গোয়েন্দা তথ্যে নিরাপত্তা জোরদার- বসানো হয়েছে চেকপোস্ট, নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে যান চলাচল

টার্গেট চট্টগ্রাম বন্দর, ইস্টার্ন রিফাইনারিসহ গোটা অয়েল বেল্ট

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

টার্গেট চট্টগ্রাম বন্দর, ইস্টার্ন রিফাইনারিসহ গোটা অয়েল বেল্ট

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির ॥ ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও বিক্ষিপ্ত হরতালে দেশজুড়ে নাশকতা, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা, যানবাহনে আগুন, রেললাইন বিচ্ছিন্ন করাসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জানমালের অব্যাহত ভয়ানক ক্ষতির মাঝে এবার টার্গেট করা হয়েছে দেশের বৃহত্তম বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর ও জ্বালানি তেলের স্থাপনাসমূহ ও দেশে জ্বালানি তেলের পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিসহ পতেঙ্গা পুরো অয়েল বেল্টকে। গোয়েন্দা রিপোর্টসহ সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে এ ধরনের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করার পর বুধবার রাত থেকেই পুরো এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পতেঙ্গা বিমানবন্দরগামী সড়ক সংলগ্ন অয়েল বেল্ট ও পুরো বন্দর এলাকায় যানবাহন চলাচলে নিরাপত্তা কার্যকর করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চলমান অবরোধে নাশকতামূলক কার্যক্রমে জড়িত থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর জামায়াত শিবিরসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের পক্ষে পুলিশের কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীর ওপর ভিত্তি করে তাৎক্ষণিকভাবে বুধবার রাত থেকে নিরাপত্তা জোরদারে নিয়োগ করা হয়েছে বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের। নাশকতার আশঙ্কায় ইস্টার্ন রিফাইনারি, জ্বালানি তেলের স্থাপনা, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, সার কারখানাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নিñিদ্র নেয়া হয়েছে। বুধবার রাত থেকে প্রায় ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশ্ঙ্খৃলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্থাপন করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট। ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ কড়াকড়ি আরোপের পর সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে আপাতত স্বস্তি এসেছে। তবে বিভিন্ন ধরনের উড়ো হুমকি অব্যাহত রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এর আগে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসনের কাছে দেশে জ্বালানি তেল মজুদের বৃহত্তম স্থাপনা পতেঙ্গার গুপ্তখাল এলাকায় অবস্থিত পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ডিপো, জ্বালানি তেলের একমাত্র পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লি. (ইআরএল), লুব অয়েল ব্ল্যান্ডিং কারখানা ইএলবিএল এবং এসএওসিএল, জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি যমুনা মবিল লিমিটেড (জেবিএল) এ নাশকতা চালানোর আশঙ্কা ব্যক্ত করে নিরাপত্তা চাওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে বুধবার পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বিপিসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে পুরো অয়েল বেল্টে এ সব স্থাপনা ছাড়াও বেসরকারী মালিকানার বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থাপনাসমূহ ও সংলগ্ন বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরপরই রাতের মধ্যে তা কার্যকর করা হয়। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরে নিরাপত্তা বিষয়ক এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেনÑ বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বন্দরের সদস্য (হারবার এ্যান্ড মেরিন) কমোডর শাহজাহান, সদস্য (ইঞ্জিনিয়ারিং) কমোডর জুলফিকার আজিজ, পুলিশের ডিসি (পোর্ট) হারুনুর রশীদ হাজারী, বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (নিরাপত্তা) লে. কর্নেল আলমগীর কবির এবং চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইস্টার্ন রিফাইনারি, পদ্মা অয়েল কোম্পানি, যমুনা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), কোস্টগার্ড, চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল), কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (কাফকো) শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। বৈঠকে তারা দেশে বিরাজমান বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে নিজ নিজ সংস্থায় নিরাপত্তা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। পুলিশের ডিসি (পোর্ট) হারুনুর রশীদ হাজারী জানান, জ্বালানি ডিপোতে নাশকতার ঘটনা ঘটানো হতে পারে এমন তথ্য থাকায় গত বুধবার বিকেল থেকেই ওই এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো শুরু হয়। রাত থেকে সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়। প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে। বিশেষ করে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে জ্বালানি তেলের স্থাপনার কাছ দিয়ে যাওয়া সড়কে মোটরবাইক ও অটোরিক্সা চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে বাসসহ গণপরিবহন চলাচলে বাধা নেই। পতেঙ্গা এলাকায় বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কোন যানবাহন বা কাউকে সন্দেহভাজন মনে হলে তল্লাশি করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কেপিআইতে (কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন) নাশকতামূলক তৎপরতা চলতে পারে এমন একটি তথ্য ছিল গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। বিষয়টি জানানো হয় বন্দর কর্তৃপক্ষসহ ওই এলাকায় অবস্থিত সংস্থাগুলোকে। এ তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার থেকেই তৎপর হয় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। রাতে এতটাই কড়াকড়ি আরোপ করা হয় যে, সাধারণ মানুষের মাঝে অজানা উদ্বেগ তৈরি হয়। তবে নাশকতাকারীদের প্রশাসনের কড়া উদ্যোগে নস্যাত হয়ে গেলেও অত্যন্ত গুরুত্ব বিবেচনায় জ্বালানি স্থাপনা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলবৎ রাখা উচিত বলে অভিমত পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের।
×