ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কারাগারে পড়ে শোনানো হয়েছে

কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুপরোয়ানা জারি করা হয়েছে। দীর্ঘ ৮৫২ দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ও উচ্চ আদালতের আপীল বিভাগে বিচারিক কার্যক্রম সমাপ্তির পর এই মৃত্যুপরোয়ানা জারি করা হলো। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার এই পরোয়ানা জারি করা হয়। এর পর পরোয়ানা লাল সালুতে বেঁধে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার (জেলা জজ) মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। জেল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে তারা লাল কাপড়ে বাঁধা মৃত্যুপরোয়ানা পেয়েছে। কারাকর্তৃপক্ষ মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুপরোয়ানা পড়ে শুনিয়েছে। তিনি আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে রিভিউ আবেদনের বিষয়ে জানাবেন বলে জানিয়েছেন। ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন) মোঃ গোলাম হায়দার জানান, উর্ধতন কর্তপক্ষের নির্দেশ ক্রমে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুপরোয়ানা পড়ে শোনানোর জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাকর্তৃপক্ষকে নির্দেশে দেয়া হয়েছে। সে মোতাবেক কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ কামারুজ্জামানকে তার মৃত্যুপরোয়ানা পড়ে শোনান। মৃত্যুপরোয়ানা জারির পর দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেছেন, ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতিতে বাধা নেই। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, রিভিউ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি নয়। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, রিভিউ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের দ- কার্যকরের প্রস্তুতি নিতে বাধা নেই। রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি বা আসামিকে জ্ঞাত করানোর মধ্যে যেটি আগে হয়, সেদিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ দায়ের করতে হবে। তবে এর মধ্যে মৃত্যুদ- কার্যকরের প্রস্তুতি নেয়ার বিষয়ে কোন বাধা রিভিউয়ের রায়ে নেই। রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের জন্য রাষ্ট্রকে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে, এমনটা আপীল বিভাগের রায়ে বলা নেই। তবে আসামি পক্ষ রিভিউ আবেদন করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে থেকে যাবে। আর তা না হলে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুপরোয়ানা জারি করলে রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, রায়ের সত্যায়িত কপি পাওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করা হবে। রিভিউ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকার কোন অবস্থাতেই তার ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে না। রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন না করলেও তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। রায় কার্যকর নিয়ে সরকারপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্যের বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমি ভাবতে পারি না কিভাবে বক্তব্য দেন যে, রিভিউয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না, তার মৃত্যুপরোয়ানা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, ফাঁসি দেয়া হবে। তিনি বলেন, আপীল বিভাগ তার রায়ে বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করা যাবে। তাহলে কি করে রিভিউয়ের ১৫ দিন সময় অতিক্রম হওয়ার আগে ফাঁসি কার্যকর হবে। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার পর সিদ্ধান্ত হবে যে, কিভাবে তা কার্যকর হবে। সেখানে মৃত্যুদ- বহাল থাকবে, নাকি যাবজ্জীবন হবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই রিভিউ আবেদন চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আপীলের রায় কার্যকর যাবে না। তিনি বলেন, যেই মুহূর্তে আমরা সার্টিফাইড কপি পাব, সেই মুহূর্ত থেকে আমরা ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন দাখিল করব। আমরা ইতোমধ্যেই সার্টিফাইড কপি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি। এখনও পাইনি। সুপ্রীমকোর্ট বার অডিটরিয়ামে কামারুজ্জামানের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউয়ের বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, শিশির মনির, রফিকুল হক তালুকদার রাজা উপস্থিত ছিলেন। প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেছেন, মৃত্যুপরোয়ানা জারির পর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিতে থাকবে। কোন পক্ষ রিভিউ করলে দ্রুত এটা বন্ধ করতে হবে। দুই পক্ষকেই এ বিষয়ে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ২০১৪ সালের ৩ নবেম্বর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রাখেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার সুপ্রীমকোর্টে আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ৫৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। এর পর ঐ দিনই রায়ের কপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনৃালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ১৯ ফেব্রুয়রি বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ এটি উপস্থাপন করা হয়। তখন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসদন শাহীন ও দুই সদস্য বিচার পতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম মৃত্যুপরোয়ানায় স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষরের পর লাল সালুতে মুড়িয়ে তা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, লাল সালুতে মোড়ানো নথির কপি নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্র্রার আফতাবউজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছাতে গেছেন দুপুর ১টার দিকে। ঐ দলে আর ছিলেন, কোর্টকিপার সঞ্জয় সরকার ও ডেসপাস রাইডার সিরাজুল ইসলাম সেগুলো পৌঁছে দেন। মৃত্যুপরোয়ান জারির পর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কামারুজ্জামানের মামলায় আপীল বিভাগে কর্তৃক মৃত্যুদ- বহাল রাখা ও পূর্ণাঙ্গ রায় পাবার পর তা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল যে আদেশ দিয়েছেন সেই আদেশ পালন করার জন্য জেলা কর্তৃপক্ষ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে তা পাঠানো হয়েছে।
×