ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানস ঘোষ

মমতার সফর ॥ ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে!

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মমতার সফর ॥ ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে!

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ জোট সরকার তাঁকে লাল গালিচার অভ্যর্থনায় স্বাগত জানিয়েছে একই সঙ্গে। অভিনন্দন জানিয়েছে জামায়াত ও খালেদার কট্টর মুসলিম মৌলবাদীদের দল ও সংগঠনগুলো। কিন্তু বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা, অসাম্প্রদায়িক সাধারণ মানুষের উষ্ণ অভ্যর্থনার ছোঁয়া থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন। কারণ তিনি বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল তো ননই, বরং পুরোপুরি যে বৈরী মনোভাবাপন্ন তা তাঁর কাজেই প্রমাণিত। তিনি বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদী জঙ্গী সংগঠনের সমর্থক বলেই চিহ্নিত। বাংলাদেশের মানুষের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে বিশেষ করে আহমেদ হাসান ইমরান ও খাগড়াগড় বিস্ফোরণকা-ে মমতার ভূমিকা দেখে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মসজিদ ও মাদ্রাসায় জামায়াতের মতো আন্তর্জাতিক মুসলিম সন্ত্রাসবাদী চক্রকে নিরাপদে ঘাঁটি গাড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন বলেই বাংলাদেশের মানুষের ধারণা। যাতে ওই চক্র এপারে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে থেকে ওপার বাংলায় নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যেতে পারে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের নেতানেত্রীদের হত্যার ষড়যন্ত্র করা তাদের পক্ষে সহজ হয়ে ওঠে। এর ফলে বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উত্থান ঘটবে এবং তাদের ক্ষমতায় আসার পথ সুগম হবে বলেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ধারণা। প্রশ্ন উঠছে, ২০১১-এর সেপ্টেম্বরে যে নেত্রী তিস্তার জলবণ্টনের বিষয়ে ‘অসম চুক্তির’ বিরোধিতা করে অভিযোগ করেছিলেন যে এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ মনমোহন সিং বাংলাদেশের কাছে বেচে দিচ্ছেন, যার প্রতিবাদে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরসঙ্গী হতে অস্বীকার করেন, আজ সেই তিনিই চার বছর পরে শেখ হাসিনা সরকারের কাছ থেকে নিমন্ত্রণ বাগিয়ে বাংলাদেশ সফর করতে হঠাৎ এতটা আগ্রহী হয়ে উঠলেন কেন? তিনি তো ২০১১-য় মনমোহনের সফরসঙ্গী না হয়ে এবং ‘আমরা বাঙালী’র স্টাইলে তিস্তার জলবণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করে মনমোহন সিংয়ের মুখ পুড়িয়েছিলেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে টর্পেডো করতে ছাড়েননি। টর্পেডো করার নেপথ্যে মুখ্য কারণ ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল ইগো বা অহংবোধ। তিনি নিজেকে মেঘালয়ের মুকুল সাংমা, মিজোরামের লালথানহাওলা বা অসম ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও মানিক সরকারের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূণ রাজনীতিক বলে মনে করেন। মনমোহন সিং তাঁকে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য চার মুখ্যমন্ত্রীর মতো সফরসঙ্গী করে তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব হ্রাস করতে চেয়েছেন বলে তাঁর অভিযোগ ছিল। মমতা তখন আমায় বলেছিলেন,‘বাজারে মুড়ি মিছরির এক দর হয় না। তাই আমি ওদের সঙ্গে যাচ্ছি না।’ মমতা আমাকেও বলেছিলেন মনমোহনের সফরসঙ্গী না হতে। এমনকি আমাকে তখন এটাও বলেন, ‘আমি যখন ঢাকায় যাব, তখন আপনি আমার সঙ্গে যাবেন। দিল্লীকে না বলে দিন।’ লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, এবার তিনি তিস্তা জলবণ্টনের ব্যাপারে কোন সমাধানসূত্র প্রকাশ্যে ঘোষণা না করেই ঢাকা সফর করছেন। শোনা যাচ্ছে জলবণ্টনের সমাধানসূত্রে এবার তিনি রাজি হয়েছেন। এটা তো তিনি চার বছর আগেই মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসে চূড়ান্ত করতে পারতেন। নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে দিয়ে তিনি এক সদস্যের কমিটি গঠন করে তাঁকে সমাধানসূত্র বের করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই রিপোর্ট এখন ঠা-াঘরে। ফাইলের ওপর ধুলো জমেছে, কিন্তু সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি তিনি চুপিসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই বার্তাই দিতে যাচ্ছেন যে, দ্বিপাক্ষিক স্তরে দু’ দেশের সরকার কোন সমাধানসূত্র বের করলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই? অর্থাৎ চার বছর আগে জলচুক্তি সম্পাদনে তিনি যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন সেই পথ থেকে তিনি এখন সরে আসছেন। এটা কি তিনি করছেন বাংলাদেশে নিজের ধসে যাওয়া ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে? নাকি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় নিজের গুরুত্ব জাহির করতে? তিনি ঢাকাকে কি এই বার্তা দিতে চাইছেন যে মমতাকে বাদ দিয়ে ভারত- বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব নয়? অনেকে মনে করছেন নিজের জন্য বাহবা কুড়োতেই তাঁর এই বাংলাদেশ সফর। আরও প্রশ্ন উঠছে দিল্লীর চাপেই কী তাঁর এই বাংলাদেশ সফর? শেখ হাসিনার কানে কানে তিস্তার সমাধানসূত্রে রাজি হওয়ার কথা বলে আসার জন্য? শুধু তিস্তা কেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্বন্ধেও তিনি তাঁর আপত্তি তুলে নেয়ার কথাও শেখ হাসিনাকে শুনিয়ে আসবেন। যদিও তাঁর নির্দেশে তাঁর দলের চার রাজ্যসভা সদস্য ২০১৩ সালে সংসদ চলাকালীন স্থলসীমান্ত চুক্তির খসড়া তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশীদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে কাগজের গোলা বানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারেন। তিস্তার মতো স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়েও মমতার একই বক্তব্য ছিল- চুক্তির ফলে বাংলাদেশ বেশি লাভবান হচ্ছে, ভারতের কোন সরকার দেশের জমি এইভাবে অন্য দেশকে ‘ভেট’ দিয়ে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে পারে না। এখন শোনা যাচ্ছে তিনি স্থলসীমান্ত চুক্তিতেও রাজি। এই রাজি হওয়ার বার্তাও তিনি শেখ হাসিনাকে জানিয়ে আসবেন। প্রশ্ন উঠছে, মমতার এই ‘পাল্টি’ খাওয়ার আসল কারণ কী? আসলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মুসলিম মৌলবাদীরা নিজেদের ভুল রাজনৈতিক চালের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছে। তা দেখে মমতা ও তাঁর ইমরান-ফিরহাদ হাকিমরা খুবই হতাশ। তাঁরা বুঝে গেছেন, মৌলবাদীদের পক্ষও সাহায্য নিয়ে তাদের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতি করা খুবই কঠিন কাজ। তারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে, সংসদীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার দিন শেষ হবে এবং নির্বাচনে নিশ্চিতভাবে ক্ষমতায় আসবে খালেদা-জামায়াত জোট। আমাকে তো তৃণমূলের মন্ত্রী ও আমলারা টিপ্পনী কেটে বলতেন, হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ক্ষমতার থাকার দিন শেষ। এখন খালেদা-জামায়াতের জমানা আসছে। তারাই বাংলাদেশের উদীয়মান শক্তি। কিন্তু শেখ হাসিনার বিপুল জয়ে তাদের সব অঙ্ক বানচাল হয়ে যায়। মমতা খাগড়াগড় বিস্ফোরণকা- নিয়ে যে ভাষায় ভারতের জাতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-কে দোষারোপ করেছিলেন তা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে হতবাক করে। তাদের মতে, মমতা যেন পাকিস্তানীদের ভাষায় কথা বলছেন। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে জামায়াতী সন্ত্রাসের নেটওয়ার্কের খবর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ঢাকার রিক্সাওয়ালারা পর্যন্ত বিশ্বাস করে যে মমতা ইমরানের মাধ্যমে জামায়াতীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে বাংলাদেশে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে তাদের দেশকে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করতে চান। না হলে ইমরানের মতো কট্টর জামায়াতীর খপ্পরে তিনি পড়েন কেমন করে? আর সেই ইমরানকে এত গুরুত্ব দিয়ে রাজ্যসভায় সদস্যই বা কিভাবে করেন? সাম্প্রতিককালে ইমরান বিষয়ক খবর বাংলাদেশের মিডিয়ার শিরোরামে স্থান পাচ্ছে। অথচ সিমি’র এই প্রাক্তন নেতা তথা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইমরানকেই মমতা তাঁর সফরসঙ্গী করবেন বলে জেদ ধরে বসেন। যদিও জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব, যাদের সঙ্গে ইমরানের ওঠাবসা ও নিবিড় সম্পর্ক ছিল, তারা এখন সবাই জেলে। বাংলাদেশ সরকার আকারে ইঙ্গিতে ইমরানকে সফরসঙ্গী না করার জন্য মমতাকে বার্তাও দেয়। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। ইমরানকে সঙ্গে নেয়ার জন্য তিনি গোঁ ধরে বসেন। বাংলাদেশ সরকার যখন দিল্লীর বিদেশমন্ত্রককে জানায় যে, ইমরান সঙ্গে থাকলে ঢাকায় অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটতে পারে তখন দিল্লী বাধ্য হয়ে মমতাকে বাধ্য হয়েই মমতা তাঁকে তাঁর দঙ্গল থেকে বাদ দেন। মমতা যদি ঢাকায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন, তাহলে তাঁকে এইসব স্পর্শকাতর বিষয়ে অনেক অপ্রিয় প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে। আমার প্রচুর বাংলাদেীশ বন্ধু একসময় মমতাকে অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মিত্র বলে জানতেন। শেখ হাসিনাও তাঁকে নিজের ‘কাছের মানুষ’ বলে পরিচয় দিতেন এবং ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের অভাবনীয় সাফল্যের পর কূটনৈতিক প্রোটোকল ভেঙ্গে তাঁকে ব্যক্তিগত অভিনন্দনবার্তা ও পাঠান সেই ব্যক্তিই যে রাতারাতি পার্শ্বচরদের পরামর্শে ‘পাল্টি’ খেয়ে পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ থেকে খেদানো খুনি জামাতি সন্ত্রাসীদের আঁতুড়ঘরে পরিণত করবেন তা তারা স্বপ্নে ও ভাবতে পারেননি। শেখ হাসিনা সরকার সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী ধরনের মনোভাব পোষণ করেন তা লক্ষ্য করা গেল বাংলাদেশের ঐতিহ্য ছিল কোন বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধান শহরে এলে রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। মমতা জানেন কিনা জানি না, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভারতের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মতো বাংলাভাষী রাজ্যের রাজনীিিতর ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখেন। বলতে গেলে, এ সব রাজ্যের হাঁড়ির খবর তাদের নখদর্পণে। বাংলাদেশে একসময় অভিনেতা তাপস পালের খুবই জনপ্রিয়তা ছিল। কিন্তু বিরোধীদের বাড়িতে ঢুকে তাদের মা-বোনেদের রেপ করানোর হুমকি দেয়ার পর তিনি বাংলাদেশে আজ এক ঘৃণ্য ব্যক্তি। যার জন্য মমতার দঙ্গলে তাপস পালের ঠাঁই হয়নি, হয়েছে দেবের। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, ঢাকার প্রথম সারির দৈনিকগুলো মমতার সফর সম্পর্কে যতটা অনীহা দেখাচ্ছে, জামাতপন্থী মৌলবাদী মিডিয়া, যেমন, সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত তাঁর এই সফরকে শিরোনাম করে ততোধিক আগ্রহ ও উৎসাহ প্রকাশ করছে। মমতার ঢাকা সফর সরকারী হলেও এতে পশ্চিমবঙ্গের কোন লাভ হবে না। কারণ তাঁকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, সেই বিদেশমন্ত্রী মাহমুদ আলী এখন সরকারী সফরে আমেরিকায়। সুতরাং তাঁর অনুপস্থিতিতে এই সফরে ঢাকায় বাংলাদেশের কোন মন্ত্রীর সঙ্গে মমতার কোন সিরিয়াস বৈঠক হওয়ার সুযোগ নেই। আর ভারতের কোন অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার কোন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও বসবে না। সুতরাং এই সফরে তাঁর সঙ্গী কলকাতার কিছু ব্যবসায়ী বাংলাদেশের বণিকসভার সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন। এই সফরে রাজ্যের প্রাপ্তির চেয়ে বেশি কিছু নয়। তাছাড়া বাংলা একাডেমিতে একুশে বইমেলা ও শহীদ মিনারে অমর একুশের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনই হবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের মূল কর্মসূচী। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, যে কাজটি মমতা চার বছর আগে করে দেখাতে পারতেন, সেটা তিনি চার বছর পরে করে কি লাভ পেলেন? কারণ ওই দুই চুক্তি ২০১১-য় মনমোহনের সফরের সময়ে সম্পাদিত হলে এতদিনে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পেত যা পশ্চিমবঙ্গ এবং ওইসব রাজ্যগুলোর অর্থনীতির পক্ষে অভাবনীয় আশীর্বাদ বয়ে আনত। কিন্তু মমতা নিজের গোঁয়ার্তুমির জন্য সেই সুযোগ হেলায় হারালেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে দু’দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে যে সুবর্ণ সুযোগ চার বছর আগে এসেছিল যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিত তা কি ২০১৫-র আদৌ বাস্তবায়িত হবে? মমতা তাঁর অপরিণামদর্শিতার জন্য দু’দেশের উন্নয়নের সম্ভাবনাকে আগেই স্তিমিত করে দিয়েছেন। এই দুই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যে প্রভৃত সুযোগ-সুবিধার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতো মমতা তাতে জল ঢেলে দিয়েছেন। বাংলাদেশেরর মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের সুবিধা ভারত নিতে পারলে উত্তর-পূর্বের ‘সাত বোন’ ও পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির চেহারাটাই বদলে যেতে পারে- এই কথা লিখেছিলাম বলে মমতা আমাকে হাসিনার দালাল বলেও কটূক্তি করেছিলেন। আমি এর প্রতিবাদ করে রাজভবনের এক সরকারী ভোজসভা থেকে ওয়াকআউট করতে গেলে তদানীন্তন রাজ্যপাল এমকে নারায়ণন আমাকে নিবৃত্ত করে বলেন, এমন কিছু করবেন না যা রাজ্যপালকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে।’ পরিশেষে প্রশ্ন থেকেই যায়, মমতার এ সফর সত্যি কি তাঁর বিলম্বিত বোধোদয় নাকি তাঁর সিঙ্গাপুর সফরের মতো শুধুই ‘বেড়াতে যাওয়া’, যা থেকে রাজ্যের নিট লাভ হবে শূন্য। লেখক : বাংলা স্টেটস ম্যানের সম্পাদক
×