ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মানবাধিকার ফেরিওয়ালারা

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মানবাধিকার ফেরিওয়ালারা

নিরীহ মানুষ প্রতিদিন নৃশংসভাবে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। বেঁচে থাকার যে অধিকার শিশু, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার তা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে কেড়ে নেয়া হচ্ছে অথচ তা মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়! পৈশাচিক সহিংসতায় বার্ন ইউনিটে নিদারুণ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে কিংবা যাদের আত্মীয়-স্বজনের আহাজারি ক্রমশ ভারি হয়ে উঠছে; বিনা অপরাধে তাদের এই নারকীয় আগুনে জ্বলার বিষয়টিও নয় মানবাধিকার! এই যে প্রতিনিয়ত একতরফা সহিংসতায় মানুষ হতাহত হচ্ছে কিংবা অবরোধ, হরতাল ডেকে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করা হচ্ছে, তাও মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়! ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাদের শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত করছে, তা মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন নয় কেন? কে, কখন, কোথায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে অজানা। এদের নির্মমতা এমন পর্যায়ে গেছে যে, মুরগির বাচ্চা বহনকারী গাড়িও রেহাই পায়নি। স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। দেশজুড়ে যে নাশকতা চলছে, তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলতে অপারগ দেশের দেড় শতাধিক মানবাধিকার সংগঠন। গত ছয় সপ্তাহ দেশজুড়ে বিবর্জিত মানবতা, মানবাধিকার অথচ এই সংগঠনের ‘সুশীল’ ভাবধারার নেতারা নীরবতাকে অবলম্বন করছেন। কিন্তু দেশবাসীর চাপে যেই না সরকার পেট্রোলবোমা নিয়ে গেরিলা কায়দায় হামলাকারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে, তখনই অনেক মানবাধিকার সংগঠনের নেতা-নেত্রী গলা উঁচু করে বেশ ভারিক্কি চালে আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের কাছে পেশ করছে প্রতিবেদন; যাতে গুলি করার মাধ্যমে নাশকতাকারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে উল্লেখ রয়েছে। দেশের মানুষকে যারা হত্যা করছে, তাদের পক্ষে তারা দাঁড়িয়েছে। এরা একবারও বার্ন ইউনিটে যায়নি, এমনকি নিহত স্বজনদের পাশেও দাঁড়ায়নি অথচ ২০৩ সালের ৫ মে মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতের সমাবেশে ৬১ জন নিহত হওয়ার দাবি করে একটি মানবাধিকার সংগঠন। কিন্তু নিহতদের তালিকা চাইলেও তা দিতে পারেনি। তবে মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার কাজটি করেছিল সংগঠনটি দেশকে অস্থিতিশীল ও জঙ্গীবাদের আখড়া করে তুলতে। এরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে প্রচারণাও চালায়। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা মানবাধিকার নামধারী সংগঠনের অধিকাংশই ভূঁইফোড়। দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে সত্য-মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালানোর মধ্য দিয়ে বিদেশী অর্থ আয় থেকে শুরু করে থানা ও আদালতে তদ্বিরের মাধ্যমে অপরাধী ছাড়ানোর মতো কাজ করে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার বাণিজ্যধারীরা সোসাইটি এ্যাক্টের অধীনে নিবন্ধন নিয়ে প্রতারণাও চালায়। সর্বশেষ পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যার মতো অমানবিক কাজকে সুকৌশলে এড়িয়ে নাশকতার পক্ষেই যেন অবস্থান নিয়েছে এরা। উনিশটি সংগঠন সমন্বয়ে গঠিত ‘হিউম্যান রাইটস ফোরাম, বাংলাদেশ’ নামক সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষের সংগঠনটি নাশতাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের আইনগত ব্যবস্থা নেয়াকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে নালিশ করেছে অথচ বোমায় মানুষ হত্যার বিষয়টি বেমালুম চেপে গেছে তারা; যা দেশ, জাতি ও জনগণবিরোধী শুধু নয়, রাষ্ট্রদ্রোহিতাও। একতরফা মানুষ হত্যার বিষয়কে উপেক্ষা করে মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারাও জঙ্গীবাদীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সরকারের উচিত হবে এদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণে অবিলম্বে সংসদীয় কমিটি গঠন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
×