ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুস্থ গরিবদের জন্য থাকছে দশটি ফ্রি বেড

ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২০ বেডের শিশু কার্ডিয়াক ওয়ার্ড চালু

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২০ বেডের শিশু কার্ডিয়াক ওয়ার্ড চালু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দরিদ্র শিশুদের হৃদরোগের জটিল চিকিৎসায় ২০ বেডের শিশু কার্ডিয়াক ওয়ার্ড চালু করেছে ঢাকা শিশু হাসপাতল। বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ ওয়ার্ডের উদ্বোধন করেন। ২০ শয্যার মধ্যে আটটি কার্ডিয়াক সার্জারি ও বারোটি কার্ডিওলজির। এছাড়াও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুস্থ গরিব রোগীদের জন্য দশটি ফ্রি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বুধবার ঢাকা শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক শাহেলা খাতুনের সভাপতিত্বে ওয়ার্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বাংলাদেশে জাইকার প্রধান প্রতিনিধি মিকিও হাতেইদা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নূরুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মনজুর হোসেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একাডেমিক পরিচালক অধ্যাপক এম এ কে আজাদ চৌধুরী। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হসপিটাল ম্যানেজমেন্টের ‘ওপি’র আওতায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার অর্থায়নে প্রাপ্ত মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির শুভ উদ্বোধনও করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের অগ্রগতি আজ বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত। দেশে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাসসহ সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। বাংলাদেশ তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশে আজ আধুনিক মানের চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। টেলিমেডিসিনসহ আরও নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে চিকিৎসাবিদ্যায় এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২০ বেডের শিশু কার্ডিয়াক ওয়ার্ড। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের সাহসী ও দৃষ্টান্তমূলক বিভিন্ন উদ্যোগের ফলেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টরে অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটেছে। শিশুদের টিকাদান, ভিটামিন এ ও কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর কর্মসূচীতে আমরা আমাদের প্রায় সব শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি ডায়রিয়া রোগের জন্য স্যালাইনের প্রতুলতা এবং পুষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচীর ফলে দেশে শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম জোরদার করে মেয়েদের বিয়ের বয়স সীমা বাড়িয়ে এবং গর্ভবতী ও প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এছাড়াও নারীর ক্ষমতায়নে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো, মেয়েদের শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচী এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ধনাঢ্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বিশাল জনসংখ্যার চাহিদার তুলনায় সরকারীভাবে জনগণের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়া দুরূহ। এ জন্য স্বাস্থ্য সেবা সম্প্রসারণে ব্যক্তি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারী ও বেসরকারী যৌথ অংশিদারিত্বে কাজ করতে হবে। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা চিকিৎসা খাতে অনুদান দিলে তা হবে করমুক্ত। নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, একাডেমিক ভবন নির্মাণ, হল নির্মাণে ধনাঢ্য ব্যক্তিরা অনুদান দিতে পারেন। অন্য বক্তারা বলেন, পৃথিবীর অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশেও শিশু হৃদরোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। কিন্তু দেশে এখন পর্যন্ত শিশু হৃদরোগীদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। বয়স্ক হৃদরোগীদের জন্য দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা থাকলেও শিশু হৃদরোগ চিকিৎসার বিষয়টি এখনও অবহেলিত হয়ে আছে। সঙ্কটাপন্ন ও জটিল শিশু হৃদরোগীকে অতি জরুরী চিকিৎসাসেবা দেয়ার ব্যবস্থাও দেশে নিতান্তই অপ্রতুল। অথচ দেশে ১৮ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সের শিশুর সংখ্যা হবে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ ভাগ। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনায় এনে ২০ বেডের শিশু কার্ডিয়াক ওয়ার্ড চালু করেছে ঢাকা শিশু হাসপাতাল। এ উদ্যোগ দেশের কার্ডিয়াক শিশুদের চিকিৎসাসেবায় অনেক উপকারে আসবে। ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশু হৃদরোগীদের জন্য আইসিইউ ও সিসিইউ সুবিধাসহ অত্যাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত রয়েছে বৈকালিক বিশেষঙ্গ সেবা। এতে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকরা নির্ধারিত ফির মাধ্যমে সেবা প্রদান করে থাকেন। নন-পেয়িং বেডের রোগীদের দেয়া হয় সম্পূর্ণ ফ্রি চিকিৎসা। এমনকি রোগীসহ মাকে হাসপাতালের তত্ত্বাধানে খাবার দেয়া হচ্ছে। রোগীদের কোন বাড়তি টাকা দিতে হয় না।
×