ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দগ্ধ মানুষ ও পেট্রোল বোমা হামলার ভিডিও চিত্র দেখানো হবে ইইউ পার্লামেন্টে

বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার বিষয়ে অবিচল ইইউ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার বিষয়ে অবিচল ইইউ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামের সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে অবিচল রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলকে দেশজুড়ে চলমান সহিংসতার ভিডিওচিত্র দেখানো হয়েছে। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইউরোপীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহা আলম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এছাড়া মানবাধিকার বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলের বিন্দুমাত্র উদ্বেগ নেই বলেও জানান তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান দান প্রেদার নেতৃত্বাধীন ৬ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের মানবাধিবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের একদিন বাদেই তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামের সঙ্গ ছাড়তে অনেক আগে থেকেই আহ্বান জানিয়ে আসছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এখনও তারা তাদের সেই অবস্থানে অবিচল রয়েছে। প্রতিনিধি দল বলেছে, বিএনপির প্রতি তাদের ওই প্রস্তাবের বিষয়টি এখনও অব্যাহত রয়েছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার প্রস্তাব দেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। একই সঙ্গে তারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করারও প্রস্তাব তোলে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপির সঙ্গে প্রতিনিধি দলের কী আলোচনা হয়েছে, সেটি আমাদের এখতিয়াভুক্ত নয়। আমরা বৈঠকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলকে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের একটি ভিডিওচিত্র দেখিয়েছি। সেটা দেখার পর তারা নিজেরাই বলেছে, পার্লামেন্টের প্রস্তাবনার বিষয়টি তারা অব্যাহতভাবে বিএনপিকে বলেই যাবে। এই ভিডিওচিত্র ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দেখানো হবে বলেও তারা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ইইউ পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দল মানবাধিকার বিষয়ে বিন্দুমাত্র উদ্বেগ জানাননি। তারা জানতে চেয়েছেন, এই বর্তমান সহিংসতা কবে শেষ হবে, কী ভাবে শেষ হবে? আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন তৃণমূল পর্যায়ে যে নিরাপত্তা বিধান করেছে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সজাগ আছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতিতে মহাসড়কগুলো চালু করতে পেরেছি। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। সহিংসতাকারীরা বুঝতে পেরেছেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝেছি, তাদের আলোচনার মূল মনোযোগ ছিল রানা প্লাজা ধস পরবর্তী তৈরি-পোশাক শিল্পে আমাদের যেসব অঙ্গীকার ছিল, সেগুলো আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করেছি। তারা গতকাল (মঙ্গলবার) একটি তৈরি পোশাক কারখানা ঘুরে দেখেছেন। সেখানকার কর্মপরিবেশের অগ্রগতি দেখে তারা খুশি হয়েছেন। আমরা অঙ্গীকার পূরণ করতে পেরেছি বলে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। শাহরিয়ার আলম বলেন, বিষয়টি হলো শ্রম আইন সম্পর্কিত কিছু প্রতিশ্রুতি ছিল। বিশেষ করে ইপিজেড এলাকায় ট্রেড ইউনিয়ন চালুর বিষয়ে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা তারা জানতে চেয়েছেন। তিনি জানান, সরকার তাদের আশ্বস্ত করেছে শ্রম আইন বাস্তবায়নে একটি বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছেন। এই প্রতিনিধি দলের প্রধান কয়েকদিন আগে মিয়ানমার সফর করেছেন। সে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকেও এই বিষয়টি বলেছেন। আমরা এ বিষয়ে গৃহীত জাতীয় কৌশলপত্র সম্পর্কে তাদের হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছি। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এর বাইরে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার তহবিল সংগ্রহের বিষয়ে কোথা থেকে তারা টাকা পান, কোথায় খরচ করেন এ নিয়ে কথা হয়েছে। জঙ্গী অর্থায়নের বিষয়ে সরকার কাজ করছে এবং গত পাঁচ বছরে অনেক সফলতা পেয়েছে। এছাড়া এনজিও আইনের সংশোধন কেন করেছি, তা তারা জানতে চেয়েছেন। আমরা তাদের বলেছি, যে চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে ইউরোপ যাচ্ছে, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও ডেনমার্কে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, সেগুলো এবং এদের ব্যবহার করে অনেক অপকর্ম করতে পারে। এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক হিসেবে এই আইন সংশোধন করেছি। ২০১৪ সালের জানুয়ারি এবং সেপ্টেম্বরে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, সে বিষয়ে তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের সহিংসতার বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রতিনিধি দলকে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ভিডিওচিত্র দেখিয়েছি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এটি তারা ব্যবহার করবেন বলে জানিয়েছেন।
×