ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের বৈঠক

সন্ত্রাস থেকে বের হবার পথ বাংলাদেশকেই বের করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সন্ত্রাস থেকে বের হবার পথ বাংলাদেশকেই বের করতে হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে বিএনপি-জামায়াতের চলমান সহিংস কর্মসূচীর কারণে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে নিজেদের উপায় বের করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট। তিনি বলেন, রাস্তায় যে সন্ত্রাস চলছে এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। শান্তিপূর্ণ রাজনীতির চর্চা হওয়া দরকার। এখন সব পক্ষকেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করা উচিত বলেও মত দেন তিনি। বুধবার দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের বৈঠকে তিনি এসব পরামর্শ দেন। এতে উপস্থিত থাকেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, জাপান, ভারত, কানাডা, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, আফগানিস্তান, ভুটান, সুইডেন, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, নেদারল্যান্ডস, ফিলিপিন্স, ইরান, ফিলিস্তিন, ভ্যাটিকানসিটি, থাইল্যান্ড, লিবিয়া ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতসহ প্রায় অর্ধশত কূনৈতিক মিশনের প্রতিনিধি ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিগণ। বৈঠকে কূটনৈতিকগণ ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে চলমান সঙ্কট ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। বার্নিকাট বলেন, আমরা পুরোপুরি আশাবাদী যে, বাংলাদেশের প্রাজ্ঞ নাগরিকরা এই সঙ্কটের সমাধান করতে পারবেন। বাংলাদেশে অত্যন্ত সক্রিয় এবং চিন্তাশীল নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ রয়েছেন। তারা সবাই মিলে এই সঙ্কটের উত্তোরণ ঘটাতে পারবেন। দেশের সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি সবাইকে নিয়ে এই সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে হবে। বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। তাই চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও উদ্বিগ্ন। কূটনীতিকের দায়িত্ব হলো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজ করা উল্লেখ করে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে সেটাই করছি আমরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশী পণ্যের প্রধান আমদানিকারক দেশ হওয়ায় মার্কিনীরা গর্বিত বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজেন্ডার নিকোলায়েভ বলেন, বাংলাদেশে যে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে এটি আমি বলতে পারব না। তবে, এ সঙ্কট উত্তরণে সরকারেরও দায় রয়েছে। জনগণ ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপদ পরিবেশের নিশ্চয়তা চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারকে দেশের জনগণ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে। তিনি চলমান সহিংসতা ও সন্ত্রাসের দ্রুত অবসান হওয়া দরকার। আলেকজেন্ডার নিকোলায়েভ্্ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। সেজন্য কাজও করছি আমরা। তবে এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে হলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনু পিয়ের লাঘামে বলেন, রাজনৈতিক সংঘাত সত্যিই অনাকাক্সিক্ষত। এমন পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চলমান সহিংসতা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে সঙ্কট তৈরি করছে। এ ধরনের পরিস্থিতি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শান্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাধার সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন তিনি। দেশে একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ থাকা প্রয়োজন বলেও জানান কানাডিয়ান হাইকমিশনার। জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদোশিমা ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি ইয়ান-ইউং উভয়ই বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দ্রুত এই সঙ্কট কেটে যাবে বলেও তারা আশাপ্রকাশ করেন। বৈঠকের শুরুতে এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ চলমান হরতাল-অবরোধ ও সহিংস কর্মসূচীতে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, সহিংস পরিস্থিতিতে দেশে দৈনিক ২৭শ’ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হবে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। এখন হরতাল-অবরোধের মতো মানব সৃষ্ট দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, তাড়াতাড়ি মানব সৃষ্ট সকল দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারব বলে আশ্বাস দিচ্ছি। দাতা সংস্থা এবং বাংলাদেশস্থ সকল বৈদেশিক মিশন তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
×