ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এত মানুষ খুনের দায় কোনভাবেই এড়াতে পারবেন না খালেদা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এত মানুষ খুনের দায় কোনভাবেই এড়াতে পারবেন না খালেদা

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, হরতাল-অবরোধের নামে খালেদা জিয়া ও বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা, সন্ত্রাস ও মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার সঙ্গে নিষিদ্ধঘোষিত হিজবুত তাহরীর, আইএসসহ (ইসলামিক স্টেট) আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে। এদের কর্মকা- একই সূত্রে গাঁথা। তবে ইস্যুবিহীন অন্দোলনের নামে বীভৎস কায়দায় এত মানুষকে খুনের দায় কোনভাবেই এড়াতে পারবেন না বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। আইনানুযায়ী যা যা করার তাই করা হবে। তাঁর (খালেদা জিয়া) বিচার বাংলার মাটিতেই করা হবে। কোনভাবেই মানুষকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা বরদাশত করা হবে না। বরদাশত করা হলে দেশই ধ্বংস হয়ে যাবে। এদেশে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসীদের কোন স্থান নেই, আমরা তা হতে দেব না। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষায় যা যা পদক্ষেপ নেয়ার দরকার তা আমরা অবশ্যই নেব। সোমবার জাতীয় সংসদে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ৩০ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যা করছেন তা জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকা- ছাড়া আর কিছুই নয়। বিএনপি নেত্রী মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার মোহে এমনই মোহিত হয়ে গেছেন যে, নিজের পুত্রের কবর জিয়ারত পর্যন্ত করতে যাননি। মানুষ হত্যার নেশায় এমনি বিভোর যে, খুন-খারাবি করেই যাচ্ছেন। সংসদের সকল সংসদ সদস্যসহ দেশবাসীর প্রতি পুনর্বার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা এসব নাশকতা-সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করুন। প্রতিটি এলাকায় নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এবং হাতেনাতে ধরা পড়েছে তাদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে সাজা কার্যকর করা হবে। কেউ-ই রেহাই পাবে না। আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। মানুষের শক্তিই বড় শক্তি, কোন বোমাবাজ-সন্ত্রাসী বা খুনীরা নয়। আজ সারাদেশেই জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন, নাশকতাকারীদের হাতেনাতে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রুতই দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সরকারী দলের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুকুর কামড় দিলে আমরাও কুকুরকে কামড় দিতে পারি না। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর জেনারেল জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে হাজার হাজার সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিককে হত্যা করেছে। উচ্চ আদালতও জিয়ার ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। হাইকোর্টের ওই রায় অনুয়ায়ী অবৈধ ব্যক্তির হাতে জন্ম নেয়া বিএনপির অস্তিত্বই থাকে না। কিন্তু বিধিবিধান ও নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে রয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ’৯১ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথমে জাতীয় পার্টি, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের ওপর আক্রমণ চালিয়েছেন। এবার সব পদ হারিয়ে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের ওপর আক্রমণ শুরু করেছেন। হিযবুত তাহরীরের অপতৎপরতা প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুল রহমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জঙ্গী সংগঠন হিজবুত তাহরীরকে অনেক আগেই আমরা নিষিদ্ধ করেছি। এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি বলেই ২০০৯ সালের পর থেকে তারা আর কোন নাশকতা চালাতে পারেনি। কিন্তু এখন খালেদা জিয়ার ছত্রছায়ায় নাশকতার সঙ্গে হিজবুত তাহরীরও জড়িত থাকতে পারে। এ প্রসঙ্গে ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারের একটি রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গত ১১ তারিখে ডেইলি স্টার পত্রিকার ৩ নম্বর পাতায় বাংলামোটরে দেয়ালে সাঁটানো নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীরের একটি পোস্টার বড় করে ছাপানো হয়েছে! নিষিদ্ধ সংগঠনের পোস্টার বা লিফলেট ছাপানো মানে ওই সংগঠনের প্রচারে সহযোগিতা ও উস্কানি দেয়া। তাই নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীরের পোস্টার ছাপিয়ে যারা মদদ দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, নির্বাচনে না এসে ভুল করেছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। তাঁর ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত কেন দেশের জনগণকে দিতে হবে? উনি বাড়ি ছেড়ে অফিসে বসে কী করছেন? তাঁকে অফিসে থাকতে হবে কেন? আসলে অফিসে থেকে হুকুম দিয়ে বিএনপি নেত্রী জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার মতো জঘন্য ও বীভৎস কর্মকা- ঘটাচ্ছেন। তবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা বরদাশত করা হবে না। এত মানুষের কান্না বিনা বিচারে যেতে পারে না, যেতে দেব না। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেভাবে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে, ঠিক একই কায়দায় খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারবাহিনী দেশের মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। এসব হত্যাকা-ের বিচার অবশ্যই বাংলার মাটিতে করা হবে। এদের হাত থেকে দেশ ও জনগণের জানমাল রক্ষায় যা যা করার তার সবই করা হবে। গোলাম দস্তগীর গাজীর নাশকতা-সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের নতুন আইন করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবির জবাবে সংসদ নেতা জানান, সন্ত্রাস দমন আইন, দ্রুত বিচার আইনসহ দেশে অনেক আইন আছে, যাতে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। দেশের অনেক স্থানেই নাশকতাকারী-সন্ত্রাসীরা ধরা পড়েছে, স্বীকারোক্তি দিয়েছে কাদের নির্দেশে তারা এসব জঘন্য কর্মকা- ঘটাচ্ছে। তাই জড়িতদের দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিচ্ছে। আমরা যে বড় বড় মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছি তা বাস্তবায়িত হলে দেশের চেহারাই পাল্টে যাবে, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। এটা বুঝতে পেরেই আমাদের উন্নয়ন কর্মকা-কে বাধাগ্রস্ত করতেই দেশের পরিবেশকে বিএনপি নেত্রী অশান্ত করার চেষ্টা করছেন। কারণ দেশের মানুষ ভাল থাকুক, দেশের উন্নতি হোক তা তিনি চান না। তবে জড়িতদের কেউ-ই রেহাই পাবে না। সংসদ নেতা জানান, বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধ-হরতালের কারণে বিদেশী অনেক ক্রেতা তাদের কার্যাদেশ বাতিল করেছে, অনেকে তাদের অর্ডার অন্য দেশে স্থানান্তর করেছে বলে ব্যবসায়ী মহল জানিয়েছে। তাদের মতে, এ যাবৎ ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ অবরোধ ও হরতাল না থাকলে রফতানি আয় আরও বেশি হতো। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সরবরাহকৃত বই বহনকারী ট্রাকে আগুন দিয়ে বই পুড়িয়ে দিয়েছে। কারণ এরা শিক্ষার উন্নয়ন চায় না। তারা চায় না দেশের মানুষ লেখাপড়া শিখে উন্নত হোক, ভাল চাকরি এবং ব্যবসা করুক। ক্ষমতায় থাকতেও বিএনপি-জামায়াত জোট শিক্ষাকে পিছিয়ে নেয়ার কাজ করেছে। আর এখন ইস্যুবিহীন হরতাল-অবরোধের নামে তাদের স্বভাবসুলভ শিক্ষা প্রসারের বিরোধী কাজ করছে। তাদের হাতে দেশ নিরাপদ ছিল না। শিক্ষা, বিদ্যুত, জ্বালানি খাতসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন কার্যক্রম উল্টাপথে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবরোধ-হরতালের দিনগুলোতে পরীক্ষানুষ্ঠানের সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও জড়িত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে নির্ধারিত সময়ে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কোন বিকল্প নেই। তাই অবরোধ-হরতালের দিনে পূর্ব হতে নির্ধারিত বিষয়ের পরীক্ষাগুলো সাপ্তাহিক ছুটির দিনে (শুক্র ও শনিবার) গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুরুতে অবরোধের সঙ্গে অঞ্চলভিত্তিক হরতাল তারা দিয়েছে। কিন্তু ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটি কর্মদিবসে তারা হরতাল দিয়ে যাচ্ছে। এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানে বাধা প্রদান করাই এই হরতালের মূল লক্ষ্য। কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়াই বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্য।
×