ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবৈধ পথে কেন

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অবৈধ পথে কেন

এবার সংবিধান পরিবর্তনের দাবি তুলেছে বিএনপি। প্রায় দেড় মাসব্যাপী অবরোধের নামে পেট্রোলবোমায় মানুষকে আহত/নিহত করে এখন তারা অভিনব থিয়োরি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। রবিবার দলটির পক্ষ থেকে তৃতীয় সারির এক নেতার পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংবিধান পুনর্লিখন এখন সময়ের দাবি। সংবিধান হলো স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন। ১৯৭২ সালের ৪ নবেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এই সংবিধান প্রণীত হয় এবং একই সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে এটি কার্যকর হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, দলটির জন্য সংবিধান কী এমন সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল যে তার পরিবর্তন দাবি করতে হচ্ছে? প্রথম কথা হলো, বর্তমান সংবিধানে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার কোন সুযোগ নেই। সংবিধান পরিবর্তন জরুরী হতে পারে শুধু তাদের জন্য যারা জনতার রায়ের মাধ্যমে নয়, অবৈধ পথে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এখন প্রশ্ন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই কি তারা সংবিধান পরিবর্তনের দাবি তুলছেন? তবে যুক্তি হলো সংবিধানসংক্রান্ত প্রস্তাবনা যদি কারও থেকেও থাকে তাহলে সেটা উত্থাপনের জন্য জাতীয় সংসদই উপযুক্ত স্থান। তাছাড়া বিএনপি যদি সত্যি সত্যিই সংবিধান নিয়ে কোন প্রস্তাবনা দিতে আগ্রহী হয়ে থাকে, তবে সেটা দলের উচ্চপর্যায় থেকে আসাটাই সমীচীন। তৃতীয় সারির নেতার মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি এলে সেটি দলের প্রকৃত বক্তব্য কিনা সে বিষয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আরও লক্ষ্যযোগ্য হলো, বিএনপি এ দেশের সংবিধান মেনেই ইতোপূর্বে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে একাধিকবার সরকার গঠনও করেছে। তাই সংবিধানের মতো সুপ্রতিষ্ঠিত ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার কোন ভ্রষ্ট নীতি তাদের গ্রহণ না করারই কথা। জনমনে সংশয় জাগা অস্বাভাবিক নয় যে, এই কাজ বিএনপির পেছনে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী কোন চক্রের কিনা। সংবিধান পরিবর্তনের জন্য কিংবা সংশোধনের প্রয়োজন হলে সংসদ সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয় এটা বিএনপির মতো দলের অজানা থাকার কথা নয়। তবে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের আদেশে সুপ্রীমকোর্ট রায় দিয়েছে যে, সংবিধানের মূল কাঠামো পরিবর্তন হয়ে যায় এবম্বিধ কোন সংশোধনী আনা যাবে না, আনা হলে তা হবে এখতিয়ারবহির্ভূত। সুতরাং অবৈধ পথে ক্ষমতায় যাওয়ার কিংবা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার সব সুযোগই এখন বাস্তবে তিরোহিত। আরও একটি বিষয় এখানে বিবেচ্য। সেটা হলো জামায়াতের বিচারে সংবিধানে আর কোন বাধা নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) ৭৩ আইনটি সংশোধন করা হয়েছে এবং সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতেও কোন সংস্থাকে বিচার করার বিষয়টি রয়েছে। বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে রক্ষা করার জন্য দলটি সংবিধান পরিবর্তনের কথা বলছে কিনা এটাও খতিয়ে দেখা দরকার। বিএনপি বা দেশের যে কোন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু সে জন্য সবার আগে সংবিধান মেনে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। জনতার রায় পেলেই শুধু সরকার গঠন সম্ভব। এছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। অবৈধ পথের পথিকদের রাতের অন্ধকার কিংবা অজ্ঞাত স্থান থেকে বেরিয়ে এসে দিনের আলোয় জনগণের কল্যাণে রাজনীতিতে শামিল হতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে মানুষের আস্থা অর্জন করা হয়ত সম্ভব। ক্ষমতায় যাওয়ার সেটাই সংবিধানসম্মত পথ।
×