ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিমত জাভেদ ওমরের

জয়ের পাল্লা বাংলাদেশের দিকেই

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জয়ের পাল্লা বাংলাদেশের দিকেই

বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণে প্রতিপক্ষ দলটিকে হারানোর লক্ষ্য আগে থেকেই নির্ধারিত। গত এশিয়া কাপে দু’দলের প্রথম এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র লড়াইয়ে জিতেছিল যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিই। তাই শক্তির বিচারে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও ম্যাচটি এক পেশে নাও হতে পারে। তবে টাইগাররা নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলে ম্যাচটিতে জয় সম্ভব বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ নিয়ে আলাপচারিতায় এমনটাই জানালেন তিনি। সাক্ষাতকার- তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠ : নিজেদের প্রথম ম্যাচে কাল (আজ) আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে সবাই জয় প্রত্যাশা করছে। টাইগারদের জন্য কাজটা কতটা সহজ হবে? জাভেদ ওমর বেলিম : বাংলাদেশ যে পর্যায়ে আছে তাতে বলব এখনও কিন্তু আমরা অস্ট্রেলিয়া কিংবা পাকিস্তানের মতো দল না। আমরা এখনও উন্নতি করছি এবং শিখছি। সেই বিবেচনায় বলব এই ধরনের দলের সঙ্গে কোন কিছু বলা যায় না। ২০০৭ বিশ্বকাপেও আমরা আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়েছিলাম। তবে প্রথম ম্যাচটা বড় কোন দলের সঙ্গে হলেই বেশি ভাল হতো। যেহেতু প্রস্তুতি ম্যাচ ভাল হয়নি, তাই কনফিডেন্স লেভেল কিছুটা লো আছে। এখন দল প্রেসার নিয়েও ভাল খেলতে পারে আবার অতদিক চিন্তা না করেও ভাল খেলতে পারে। তবে নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে বাংলাদেশই জিতবে। জনকণ্ঠ : এমনিতে ম্যাচটিতে কে ফেবারিট? বেলিম : খাতা কলমে অবশ্যই বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। জিম্বাবুইয়ে সিরিজের আগে হয় তো খারাপ সময় গেছে। কিন্তু তার আগের দুই বছর বাংলাদেশ ধারাবাহিক পারফর্মেন্স দেখিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে তাই বাংলাদেশই এগিয়ে। তবে ওদের কিছু কি’প্লেয়ার আছে, টি-টুয়েন্টি আসার পর ওরা অনেক উন্নতিও করেছে। বড় দলের সঙ্গে বেশ কিছু ম্যাচও খেলেছে। এই জিনিসগুলো ওদের অনেক সাহায্য। তারপরও আজ বাংলাদেশকেই আমি এগিয়ে রাখব। জনকণ্ঠ : আফগানিস্তান বাংলাদেশকে হারানোর ঘোষণা দিয়েছে। গত বছর এশিয়া কাপেও একরকম ঘোষণা দিয়েই বাংলাদেশকে হারিয়েছিল তারা ... বেলিম : ওরা এটা বলবেই। কারণ সাইকোলজিক্যাল কিছু বিষয় আছে। আর ওদের তো আসলে হারানোর কিছু নাই। ওরা ম্যাচ হারলেও কিছু যায় আসে না। বরং জয় পেলে সেটা হবে তাদের জন্য ঐতিহাসিক। জনকণ্ঠ : প্রস্তুতি ম্যাচগুলোর সব হার, যার মধ্যে আছে আইরিশদের কাছে পরাজয়। এই বিষয়গুলো আজকের ম্যাচে প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয়? বেলিম : কনফিডেন্স লেভেল তো কিছুটা কম থাকবেই। কারণ হারের মধ্যে থাকলে অনেক নেগেটিভ চিন্তা ভর করে। তবে এগুলো নিয়ে এখন আর না ভেবে পজিটিভলি মাঠে নামতে হবে। যাদের ওপর আমরা সবসময় নির্ভরশীল তারা যদি ৭০ ভাগও পারফর্ম করে তবেও এ ম্যাচে জেতা সম্ভব। জনকণ্ঠ : এ পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় ম্যাচগুলোর সবই হাইস্কোরিং ম্যাচ হয়েছে। আফগানদের বিপক্ষে জিততে হলে কী বড় স্কোরের দিকে নজর দিতে হবে? বেলিম : বড় স্কোর আমার কাছে মুখ্য বিষয় না। প্রধান বিষয় হচ্ছে ম্যাচের সিচুয়েশন, উইকেট, কন্ডিশন। এগুলোর ওপর সব নির্ভর করবে এবং উইকেটে যে থাকবে সেই বিষয়টা ভাল বুঝবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিন্তু তিন শ’র অধিক করেও আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে গেছে। আবার এমন হতে পারে দুই শ’ বিশও অনেক রান। টি২০ আসার পর কোন রানই আসলে সেভ না। তাই সে দিকে নজর রাখতে হবে। জনকণ্ঠ : কিন্তু শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ ২০০ স্কোরও করতে পারেনি ... বেলিম : এটা নেগেটিভ বিষয় হয়ে গেছে। তবে এখন আর এটা নিয়ে নেগেটিভ চিন্তা করা উচিত না। এখন সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে আসল কাজটা করা উচিত। যে ম্যাচে হেরেছি সেটা নিয়ে চিন্তা না করাই ভাল। তবে অনেক সময় এগুলো আপনা আপনিই এসে যায়। তখন মেডিটেশন করে তা দূর করতে হয়। জনকণ্ঠ : ব্যাটিং লাইন আপটা কেমন হলে ভাল হয়? বেলিম : এখান থেকে বলাটা ঠিক হবে না। তবে ম্যাচে ব্যাটিং শক্তি মাত্রার প্রদর্শনী ঘটাতে হবে। সেই সঙ্গে অবশ্যই পাঁচটা জেনুইন বোলার নিয়ে খেলতে হবে। জনকণ্ঠ : মুমিনুল নাকি সৌম্য সরকার? বেলিম : ম্যানেজম্যান্টের ওপর পুরো বিষয়টা নির্ভর করছে। সিমিং উইকেট হলে সৌম্যকে টপঅর্ডারে খেলিয়ে বোলিংয়েও কাজে লাগানো যেতে পারে। জনকণ্ঠ : আফগানিস্তানের পেস আক্রমণ সমীহ করার মতো। সেক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানদের খেলার ধরন কী হতে হবে? বেলিম : দেখুন প্রফেশনাল লেভেলে সমীহ বলে কোন কথা নেই। যখন যে ভাল করবে তাকেই সম্মান দিতে হবে। সব বোলারকেই আসলে সমীহ করতে হবে এবং বাজে বল পেলে সেটাকে মারতে হবে। জনকণ্ঠ : বোলিং প্রসঙ্গে আসা যাক। দরুন বাংলাদেশ আগে বোলিং করল। সেক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে কত রানে আটকানো নিরাপদ হবে? বেলিম : যেহেতু একদিনের ক্রিকেটে এখন কোন রানই সেভ না, তাই লক্ষ্য হতে হবে যত কমে ওদের আটকানো যায়। কারণ বাংলাদেশ ব্যাটিংএ বরাবরই স্ট্রাগল করছে। আর আমরা এখন স্পিনের ওপরই বেশি নির্ভরশীল। আর পেসারদের কথা বলব, তাদের রাইট এরিয়াতে বল করতে হবে। জনকণ্ঠ : এ পর্যন্ত যে কটি ম্যাচ হলো তাতে কেমন উপভোগ করছেন বিশ্বকাপ? বেলিম : খুবই ভাল উপভোগ করছি। যদিও সময়ের ব্যবধানের কারণে সব ম্যাচ উপভোগ করতে পারছি না। বিশ্বকাপ শুরুর আগে আমরা সবাই বাউন্সের কথা বলে এসেছি। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে প্রতিটি খেলাতেই তিন শ’র বেশি রান হচ্ছে। আসলে ওসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করাটাই উচিত না। আশা করি পুরো টুর্নামেন্টটাই উপভোগ্য হবে। জনকণ্ঠ : বিশ্বকাপটা কী ব্যাটসম্যানদের হতে যাচ্ছে? বেলিম : আসলে বিশ্বকাপে রানের চিন্তা করেই আইসিসি উইকেট বানায়। ব্যাটসম্যানদের হবে এমনটা বলব না, যেহেতু ক্রিকেট খেলা তাই এটা রানের খেলা হবেই। কারণ রান না হলে দর্শকরা মজা পাবে না। জনকণ্ঠ : বলা হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে উন্মুক্ত বিশ্বকাপ ... বেলিম : সেটা তো বটেই। তবে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকাই শিরোপার দৌড়ে এগিয়ে থাকবে। কারণ তাদের বোলিং, ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগই অসাধারণ। জনকণ্ঠ : শেষ প্রশ্ন। মন কি বলছে, কে জিতবে আজ? বেলিম : আমি কখনই নেগেটিভ চিন্তা করি না। বাংলাদেশকে কষ্ট করে জিততে হবে। তবে বাংলাদেশ জিতবে বলেই আমার বিশ্বাস। এই ম্যাচটা জিতে গেলে আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা তৈরি হয়ে যাবে। আনেক পারফর্মেন্স দেখে নেগেটিভ চিন্তাও মনে আসে কখনও। তবে বাংলাদেশ তো বহু বারই নিজেদের সামর্থের প্রমাণ রেখেছে। তিন বিভাগে ভাল করলে আজ বাংলাদেশই জিতবে।
×