ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অসাধু চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা

সৌদিতে চাকরি ॥ নাম নিবন্ধন নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সৌদিতে চাকরি ॥ নাম নিবন্ধন নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরব গমনেচ্ছু কর্মীদের নাম নিবন্ধন নিয়ে চলছে রমরমা ব্যবসা। প্রবাসী কল্যাণ ভবন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি কর্মীর নাম নিবন্ধনে এক থেকে দেড় শ’ টাকা বেশি নিচ্ছে নিবন্ধন কর্মকর্তা কর্মচারী ও দালাল চক্র। এই চক্র এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, তাদের বাড়তি টাকা না দিলে নাম নিবন্ধন করতে পারছেন না কোন কর্মী। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে নাম নিবন্ধন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ নারী-পুরুষ নাম নিবন্ধন করেছেন। প্রতি কর্মীকেই বাড়তি টাকা দিয়ে অনলাইনে নাম নিবন্ধন করতে হয়েছে। সোমবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনে শত শত কর্মী এমনই অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি জানলেও বিএমইটিও কোন প্রতিকার করছে না। কর্মী নিবন্ধনে বাড়তি টাকা নেয়ার বিষয়টি জানার জন্য বিএমইটির ডিজির সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব খন্দকার মোঃ ইফতেখার হায়দারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে এমন অভিযোগ মন্ত্রণালয়েও এসেছে। কিন্তু ওপর থেকে বিষয়টি নিয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়নি। ফলে বিএমইটির রেজিস্ট্রেশন বিভাগ যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। সারাদেশে প্রায় ১৫ লাখ কর্মী সৌদি যাওয়ার জন্য এ পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন বা নাম নিবন্ধন করেছেন। এদের প্রতিজনের কাছ থেকেও যদি এক শ’ টাকা করে বেশি নেয়া হয় তাহলেও ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের টাকা দেশের দরিদ্র নিরীহ মানুষের পকেট থেকে গেছে। নিবন্ধন কার্যক্রম যতদিন চলবে টাকার পরিমাণও বাড়বে। সূত্র জানিয়েছে, সৌদি প্রতিনিধি দল ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসে। তার আগের দিন থেকে সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগের জন্য নিবন্ধন করা শুরু করে বিএমইটি। প্রথমে চার দিনের জন্য নাম নিবন্ধনের জন্য সময় ঠিক করা হয়। পরে কর্মী সংখ্যা ব্যাপক হওয়াতে রেজিস্ট্রেশনের সময় বাড়িয়ে দেয়া হয় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। নিবন্ধনের শেষ দিনে ভিড় সামলাতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়। পরে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ব্যবসার সুযোগ নেয়। প্রতিকর্মী নাম নিবন্ধনের জন্য এক শ’ থেকে দেড় শ’ টাকা বেশি নিয়ে নাম নিবন্ধনের কাজ শুরু করেন। যারা বাড়তি টাকা দেন তাদের আর কোন বেগ পেতে হয়নি। পরে এক পর্যায়ে নিবন্ধন ফরম শেষ হয়ে গেলে ওই ফরম ফটো কপি করে বিক্রি করা শুরু হয়। প্রতিটি ফরম ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করা শুরু করে। এই টাকাও কর্মীদের বাড়তি দিতে হচ্ছে। সোমবারও বিনামূল্যে নিবন্ধন ফরম ফটোকপি করে বিক্রি করতে দেখা গেছে। অতিরিক্ত মূল্যে নিবন্ধন ফরমের ফটোকপি বিক্রির টাকা বিএমইটি উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে পিয়ন দারোয়ানের হাতে যাচ্ছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরাও এই সুযোগে ভালই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে কর্মীরা অভিযোগ করেছেন। বাড়তি টাকার বিষয়টি মাথায় না নিয়ে মন্ত্রণালয় নাম নিবন্ধনের শেষ দিন বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রগুলো থেকেও বিদেশ গমনেচ্ছুরা নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য ঢাকা ও জেলা শহরে আসতে হবে না। এই ঘোষণার পর ঢাকা ও জেলা শহরগুলোতে নিবন্ধনের জন্য ভিড় কমে যায়। এর আগে নাম নিবন্ধনের জন্য দেশের কয়েকটি এলাকায় ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ ভবনেও হট্টগোল হয়েছে। পরে নিরাপত্তা রক্ষীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হয়। এ কারণে বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নাম নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে দেয়। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে বেকার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সৌদি যাওয়ার জন্য অনেক শিক্ষিতরা নাম নিবন্ধন করছেন। তাছাড়া সৌদি যেতে আগে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হতো। এখন এই খরচ কমে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় চলে এসেছে। কম খরচে সৌদি যাওয়ার সুযোগ পেয়ে বেকার যুবক যুবতীরা নাম নিবন্ধন করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগের নিবন্ধন নিয়ে এমন ব্যবসার খবর মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব মহল জানলেও কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। নাম নিবন্ধনের জন্য সরকারের ঘরে ২শ’ টাকা ফি জমা দিতে হচ্ছে। আবার কর্মীদের বাড়তি এক দেড় শ’ টাকা দিতে হচ্ছে। এতে সরকার ও নিবন্ধন কর্মকর্তা কর্মচারীরা লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু কর্মীরা কি লাভবান হতে পারবেন। যদি তাদের নাম নিবন্ধন হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি টাকা দিয়েও খুশি থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
×