ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফুরফুরে মেলায় পছন্দের বই কেনায় মনোযোগী পাঠক

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ফুরফুরে মেলায় পছন্দের বই কেনায় মনোযোগী পাঠক

প্রকৃত পাঠকের সংখ্যা বেড়েছে। এখন ঘুরে বেড়ানো নয় শুধু, বই কেনায় ব্যস্ত বিভিন্ন বয়সী মানুষ। পছন্দের বইয়ের তালিকা ধরে বই কিনছেন তাঁরা। ১৭তম দিনে মঙ্গলবার এমন দৃশ্যই বেশি চোখে পড়েছে। মেলার পরিবেশও বেশ ফুরফুরে। বই দেখার চমৎকার পরিবেশ কাজে লাগাচ্ছেন পাঠক। আলি এমদাদ নামের এক বইপ্রেমী এসেছিলেন পুরান ঢাকা থেকে। জানালেন, বই দেখতে দেখতে সময় শেষ হয়ে এসেছে। তাই আজ বই কিনতে এসেছি। একটি তালিকাও দেখালেন তিনি। বললেন, গত কয়েক দিন পত্রিকা দেখে তালিকা করেছি। আজ কিনব। ইডেন কলেজের ছাত্রীদের একটি দল বই কিনেছিল বেশ কয়েকটি। প্রত্যেকের হাতেই বইয়ের ব্যাগ। আবিদা নামের এক পাঠক বললেন, বই দেখলে না কিনে পারি না। আগেও কিনেছি। আজ কয়েকটি বই টার্গেট করে এসেছিলাম। সেগুলো কিনে নিলাম। প্রকাশকরাও ভাল বিক্রির কথা জানালেন। তাম্রলিপির প্রকাশক তারিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এ সময়টির অপেক্ষায় ছিলাম। শেষ সময়ে এসে ভাল বিক্রি হচ্ছে। ১২০ নতুন বই ॥ মঙ্গলবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৭তম দিনে নতুন বই এসেছে ১২০টি। নজরুল মঞ্চে ১১টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্পী রফিকুন নবী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেনÑ মফিদুল হক, মইনুদ্দীন খালেদ এবং সাজ্জাদ শরিফ। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। প্রাবন্ধিক বলেন, ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পাথেয় করে সম্ভবত কাইয়ুম চৌধুরীই সবচেয়ে বেশি ছবি এঁকেছেন। কখনও সরাসরি বক্তব্যকে প্রধান করে, কখনওবা প্রতীকী অবয়বে। ছবিগুলো দেশের চিত্রকলার ক্ষেত্রে বিশেষ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী দেশের বরেণ্য শিল্পীর আসনে অধিষ্ঠিত। দেশ-বিদেশে পুরস্কৃত হয়েছেন কিন্তু তিনি সব সময়ই মনে করতেন তাঁর শিল্পীজীবনের বড় প্রাপ্তি- বাংলাদেশের মতো অপূর্ব সুন্দর দেশটিতে জন্মেছিলেন এবং দেশের মানুষের ভালবাসা পেয়েছিলেন। চিত্র ও ব্যক্তিত্বে এমন অসাধারণ সুন্দর মানুষটির কোন মৃত্যু নেই। আলোচকরা বলেন, পারিবারিকভাবে সাংস্কৃতিক পরিম-লে বেড়ে ওঠা কাইয়ুম চৌধুরী জীবনের শেষদিন পর্যন্ত শিল্পের সঙ্গেই ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের এক সাংস্কৃতিক মহীরুহ। তাঁর চিত্রকলা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে ধারণ করেছে বিপুল বৈভবে। চিত্রকলার উদ্ভাবনময়তা, শিল্পসংগঠন শক্তি ও নান্দনিক ভাবনায় কাইয়ুম চৌধুরী পরিণত হয়েছিলেন আমাদের সাংস্কৃতিক রুচির এক অনন্য নির্মাতায়। তাঁর শিল্পসত্তা ছিল বহুমাত্রিক বিচিত্রমুখী। লোকজ উপাদানকে তিনি তাঁর চিত্রকলায় ফুটিয়ে তুলেছেন অপূর্ব চারুদক্ষতায়। সভাপতির বক্তব্যে সমরজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, সুদীর্ঘকাল ধরে কাইয়ুম চৌধুরীর রেখা ও রঙে বাংলার চিরায়ত প্রকৃতি ও মানুষ যে অনন্য রূপ-ব্যঞ্জনায় ভাস্বর হয়ে উঠেছে তা কখনও বিস্মৃত হওয়ার নয়। লোকশিল্পকলার বিষয় ও আঙ্গিক তাঁর চিত্রভুবনকে করেছে একই সঙ্গে জনলগ্ন ও রুচিস্নিগ্ধ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সকল প্রগতিশীল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের আমৃত্যু শিল্পযোদ্ধা কাইয়ুম চৌধুরী বেঁচে থাকবেন বাংলার লালে ও সবুজে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুজতবা আহমেদ মুরশেদের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্ব-ভূমি’ এবং সালাউদ্দীন বাদলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। সঙ্গীত পরিবেশন করেন রোকাইয়া হাসিনা, অনিন্দিতা চৌধুরী, মির্জা শামসুল আলম, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, আফরোজ খান মিতা, সাইম রানা, হিমাদ্রী শেখর, শিমু দে, কবীর-উল-করিম এবং তানজীনা তথা। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন- পুলিন চক্রবর্তী (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), আলাউদ্দিন মিঞা (বেহালা), নির্মল কুমার দাস (দোতরা) এবং সুমন রেজা খান (কী-বোর্ড)। আজকের আয়োজন ॥ আজ বুধবার বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন- সামসুল ওয়ারেস, রবিউল হুসাইন এবং তানজিনা হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার।
×