ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দগ্ধ মানুষের কান্না, স্বজনের শোকগাথা নিথর পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

দগ্ধ মানুষের কান্না, স্বজনের শোকগাথা নিথর পরিবেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বজনহারা মানুষের আহাজারি নয় যেন শোকে পাথর স্বজনের বিষণœ চাহনি। বোবা কান্না। বার্ন ইউনিটে দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ। থেকে থেকে সৃষ্টিকর্তাকে বলা- কী অপরাধ আমাদের, আল্লাহ ‘তাদের’ বিচার কর। তারপরও এই চলে যাবার সময় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কারও কারও পরিবারের জন্য দুশ্চিন্তা এর কি হবে? কি হবে তিনটি বাচ্চার। এমন আর্তনাদ বুকে বিষাদের সুর তোলে। অজান্তেই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু কেন, কেন এসব, কার স্বার্থে? কেন সাধারণ মানুষই হরতাল অবরোধের লক্ষ্য? কেন এই পুড়িয়ে মারা? কেন এই ধ্বংসলীলা? কেন ১৩ বছরের জাকিরকে পুড়িয়ে মারা হলো? কেন বোমার আঘাতে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অনিকের চোখ গেল? কলেজছাত্র সানজিদ হোসেন অভিকে কেন বোমা মেরে হত্যা করা হলো? গাইবান্ধার পলাশবাড়ির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আলতাফ হোসেনকে কেন পুড়িয়ে মারা হলো? যশোর আর কালিয়াকৈরের মুরাদ হোসেন এবং তফাজ্জেল হোসেনের আগুনের লেলিহান শিখায় কেন প্রাণ গেল? কোন অপরাধে মাইশাকে পুড়িয়ে মারা হলো? কেন ১৫ লাখ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চয়তায়? কেন এই বর্বরতা? কেন? কেন? হতরাল অবরোধের নামে এই দুর্বৃত্তপনায় সাধারণ মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে- কেন এসব। হরতাল অবরোধের নামে শত মানুষকে হত্যা আর সহস্রাধিক মানুষ আর তাদের পরিবারের এসব প্রশ্নের উত্তর কে দেবেন। সীমারের হৃদয় মমতা শূন্য, কিন্তু কোন মানুষ কি এভাবে মানুষকে হত্যা করতে পারে। কোন মায়ের আর্তনাদও কী তার বুকে বাজে না? খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠেও একই প্রশ্ন। জাতীয় জাদুঘরে বিএনপি-জামায়াতের বর্বরোচিত তা-বের তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী থেকে আগত সকলে দগ্ধ মানুষের আর্তনাদে অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠেন। মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘরে দগ্ধ মানুষের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে উঠে তারা যেমন নিজে কেঁদেছেন তেমনি কাঁদিয়েছেন সকলকে। আহাজারিতে এক অভাবনীয় শোকগাথা রচিত হয় যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেয়ার সময় নিজেকে লুকাতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। থেকে থেকে কণ্ঠ জড়িয়ে গেছে কান্নায়। বার বার আঁচলে চোখ মুছেছেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সুশীল সমাজ এবং বুদ্ধিজীবী ছাড়াও রাশিয়া, চীনের উপ-রাষ্ট্রদূত ভারত, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়া, ভুটান ও লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত, শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত, ভ্যাটিকান ও ওমানের উপ-রাষ্ট্রদূত, মালদ্বীপ, ইরাক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও পাকিস্তানের কনস্যুলার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একের পর এক পেট্রোলবোমা, আগুন আর হাতবোমায় সাধারণ মানুষ হতাহতের ঘটনায় অবরোধ আহ্বানকারী খালেদা জিয়ার হৃদয়ে কি কোন বেদনার সৃষ্টি হয় না। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে যারা মানুষ পুড়িয়ে মারছে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, আমি সকলকে বলব- অন্তত বিএনপি নেত্রীকে বলেন, মানুষের লাশের, মানুষ খুনের রাজনীতি বন্ধ করেন। আমরা মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। এভাবে, নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা- এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। গত ৫ জানুয়ারি অবরোধ শুরুর প্রায় তিন সপ্তাহের মাথায় ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেলে শোকাহত খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গুলশানে তার কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় দরজা না খোলায় কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। ওই প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, কোন মায়ের কান্না কী তার বুকে বাজে না? একটু বোঝে না? একটুও মন কাঁদে না? যারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা শুরু করেছে- তারা মানুষের কল্যাণ চাইতে পারে না। উপস্থিত অগ্নিদগ্ধদের দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা তো কোন রাজনীতির সঙ্গে নেই। এই নিরীহ মানুষের ওপর কেন হামলা? জামায়াতে ইসলামী ধর্মের নামে ‘ভাঁওতাবাজি’ করছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দোজখের আগুন কেন জীবন্ত মানুষকে দেখতে হবে? কেন এই ছিনিমিনি খেলা?’ শেখ হাসিনা বলেন, যারা মানুষকে পুড়িয়ে মারছে- তারা আল্লাহর বিচারের ভার নিজেরাই নিয়ে নিয়েছেন। এটা কোন সংজ্ঞায় রাজনীতি বলবেন? পেট্রোল দিয়ে মানুষ হত্যা। আমি তো কোন সংজ্ঞা খুঁজে পাই না। এটা সন্ত্রাসী কর্মকা-। দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে দেশের বিবেকবান মানুষ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কেন জঙ্গী-সন্ত্রাসীর স্থান হবে না। এর বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে সোচ্চার হতে হবে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোলবোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে নুরুজ্জামান পপলু ও তার মেয়ে মাইশা মারা যান। অনুষ্ঠানে মাইশার মা মাফরুহা বেগম তার স্বামী ও মেয়ের শহীদের মর্যাদা দাবি করেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, এরা তো শহীদের মর্যাদাই পাবে। বক্তব্য চলাকালে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যাদের ভেতর একটুকু মানবিকতা আছে, যে রক্ত মাংসের মানুষ- তারা তো এটা সহ্য করতে পারবে না। আর কত? কোথায় থামবে? কেন মানুষকে পুড়িয়ে মারা? এদের কি একটুও মানবিকতা নেই?” বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে সংলাপের আহ্বানকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটা অনুরোধ থাকবে, এক পাড়ে ফেলবেন না। দয়া করে এক পাড়ে আমাকে ফেলবেন না, বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী। আমার একান্ত অনুরোধ, খুনীদের সঙ্গে, যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে- তাদের সঙ্গে আমাকে এক পাড়ে ফেলবেন না। এটা আমার জন্য সব থেকে কষ্টের। আমাকেও তো হত্যার চেষ্টা করেছিল। তিনি বলেন, আমি রাজনীতি নিজের জন্য করি না। কোন চাওয়া-পাওয়া নেই আমার। আমি রাজনীতি করি দেশের মানুষের জন্য। এই দেশের মানুষের জন্য আমার বাবা-মা, ভাই জীবন দিয়ে গেছে। কত শহীদ রক্ত দিয়ে গেছে। এই দেশের মানুষকে আমি একটা সুন্দর জীবন দিতে চাই। সেজন্যই আমার রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহু বাধা পেরিয়ে আমি এগিয়ে যাচ্ছি দেশকে নিয়ে। দেশের মানুষের একটা সুন্দর জীবনের জন্য দিনরাত কাজ করছি। কিন্তু সেই মানুষগুলোকে যদি এভাবে পুড়িয়ে মারে, তাহলে এর থেকে কষ্টের কী থাকতে পারে? প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষে আবারো উপস্থিত দগ্ধ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময়ও তিনি বার বার আঁচলে চোখ মোছেন। অনুষ্ঠানে দগ্ধ মানুষেরা লেলিহান আগুনে নিজেদের পুড়ে যাওয়া বর্ণনা দেন। তারা সারাদেশের মানুষের হয়ে এই দুর্বৃত্তদের কাছে ক্ষমা চান। এভাবে মানুষকে পুড়িয়ে মেরে কোন কিছু পাওয়া যায় না, দয়া করে থামেন আর দেশের মানুষকে পুড়িয়ে মারবেন না। অবরোধের আগুনে পুড়ে নিহত যশোরের জাসদ নেতা নুরুজ্জামান পপলুর স্ত্রী মাফরুহা বেগম আর্তনাদ করে করে নিজের চোখের সামনে স্বামী আর সন্তানের পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়ার বর্ণণা দেন। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনহারা অসহায় এই মা। নিজের শরীরেও বয়ে এনেছেন আগুনের ক্ষত। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকামুখী বাসে অবরোধকারীদের পেট্রোলবোমায় নিহত আটজনের মধ্যে তাদের স্কুলপড়ুয়া মেয়ে মাইশাও ছিল। দগ্ধ হন মাফরুহা নিজেও। কক্সবাজারে সমুদ্র দেখে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করে পথে আক্রান্ত হন নুরুজ্জামান পপলু ও তার স্ত্রী সন্তান। হুইল চেয়ারে বসে শোকে পাথর বর্ণনা দিয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে মাফরুহা বলেন, আমি কী নিয়ে বাঁচব? আমার মাইশা আমার কোলে পুড়ে মরল। যারা পুড়িয়ে মারছে, তাদের ধরুন, তাদের শাস্তি দিন। স্বামীর পকেটে থাকা তসবিহ দেখিয়ে অবরোধকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এইসব বন্ধ করুন। পেট্রোলবোমা মারা বন্ধ করুন। দেশকে, জনগণকে ভালবাসতে শিখুন। রাজধানীর শ্যামলীতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি হরতাল-অবরোধ সমর্থকদের ছোড়া হাতবোমায় মাথায় আঘাত পাওয়া ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট গোলাম মাওলা তুলে ধরেন তার ওপর হামলার ঘটনা। কোন সংঘর্ষ বা বাদানুবাদ নয়, আকস্মিক এসে তার মাথা ও শরীরে একের পর বোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তের দল। গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুলে বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় বাদাম বিক্রেতা মোশারফ হোসেনের দুই হাত পুড়ে যায়। অনুষ্ঠানে তার কথায় ফুটে ওঠে সেই আগুনের ভয়াবহতা। আগুন যে এত ভয়াবহ! আমরা কেন এর শিকার হব? আমরা তো সাধারণ মানুষ। আমরা তো কাজ না পেলে চলবে না। আমাদের এই অবস্থা। এটা কেমন রাজনীতি? যারা করেছে, তারা সরকারের সঙ্গে কমপিটিশন করুক। আমাদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কেন? যারা করছে, তাদের শুধু বলব, আগুনে পুড়িয়ে মারবেন না। যাত্রাবাড়ীর ওই ঘটনায় মোশারফ একাই পোড়েননি; পেট্রোল বোমায় মরেছে তার স্ত্রী-মেয়ে। ছেলেটাও পুড়েছে অবরোধকারীদের আগুনে। আমার মা ও ছোট বোন মারা গেছে। বাবার দুই হাত গেছে। এখন কিভাবে চলবে?, জিজ্ঞাসা ১৪ বছর বয়সী সুমনের। এ সময় এই কিশোরকে কাছে ডেকে নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; মঞ্চে ছিলেন যাত্রাবাড়ীর ঘটনায় পুড়ে মারা যাওয়া নূর আলমের স্ত্রী চম্পা বেগম, এখনও ৩০ পেরোননি যিনি। আমার সব শেষ করে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই। আগুনে পুড়ে মরার অনেক কষ্ট, কাঁদতে কাঁদতে বলেন অকালে স্বামীহারা এই নারী। মোশারফ, সুমন, চম্পা ও মাফরুহা ছাড়াও গত দেড় মাসের অবরোধে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের আগুন-বোমায় ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে ছিলেন অনুষ্ঠানে। গত ১৩ জানুয়ারি কুড়িগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় নিহত তিন সন্তানের বাবা বাদাম বিক্রেতা রহিম বাদশার আত্মীয় নুরুন্নবী মিয়া, ৬ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের তুলসীঘাটে বাসে পেট্রোল বোমায় নিহত চার সন্তানের জননী গৃহকর্মী সোনাভানের আত্মীয় সুলতান, ৭ জানুয়ারি যশোরে বাসে আগুনে ঘুমন্ত অবস্থায় দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া চালকের সহকারী মুরাদের আত্মীয় নুরজাহান বেগম ছিলেন। এছাড়াও বগুড়ার বারপুরায় ৪ জানুয়ারি গাড়িতে আগুনে গুরুতর আহত চালক মো. পটল মিয়া, পহেলা ফেব্রুয়ারি রংপুরের স্থলবন্দরে ট্রাকে আগুনে দগ্ধ ব্যবসায়ী রেজাউল করিম, যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ ওসমান গনি, ১৩ জানুয়ারি গাজীপুরের জয়দেবপুরে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ কাভার্ডভ্যান চালক মিষ্টি মিয়া, ১০ জানুয়ারি ফার্মগেটে যাত্রীবাহী বাসে আগুনে আহত অমূল্য চন্দ্র রায়, ২৪ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ ছাত্র তানভীর, ২৩ জানুয়ারি ডেমরায় পেট্রোলবোমায় অগ্নিদগ্ধ ফার্মাসিস্ট ইয়াসিন আরাফাত সিদ্দিকী, ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কের পেট্রোলবোমায় দগ্ধ ট্রাকচালক পেয়ার মিয়া এবং ১৪ জানুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ মিনারা বেগম অনুষ্ঠানে আসেন। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, যে চিত্র আপনারা দেখলেন, তারপর আর বক্তব্য থাকে না। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় জঙ্গীবাদের চেহারা তুলে ধরে তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। এদের রুখে না দাঁড়ালে মানবসভ্যতা থাকবে না। আসুন তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলার মাটি থেকে তাদের উচ্ছেদ করি। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম পরে সভাপতির বক্তব্য রাখেন। জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ‘বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাস-লুণ্ঠিত মানবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দগ্ধদের নিয়ে দেখানো হয় একটি প্রামাণ্যচিত্র। প্রামাণ্যচিত্রে দগ্ধদের করুণ চাহনি আর স্বজনহারাদের আহাজারির শব্দের পর আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের যন্ত্রণাময় আর্তনাদে ভারি ওঠে জাদুঘর মিলনায়তনের পরিবেশ। সরকারী হিসেবে গত ৫ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পেট্রোলবোমা ও ককটেল হামলায় নিহত হয়েছেন ৫৫ জন, আহত হয়েছেন ৫৫৬ জন। এ সময় ৬৬৪টি যানবাহন পেট্রোলবোমা দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ৪১০টি যানবাহন ভাংচুর করেছে অবরোধ সমর্থকরা। ২৮টি স্থাপনা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রেলপথে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে ২৫টি; নৌপথে ছয়টি। আগামী এক সপ্তাহ চিত্র প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×