ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

ওয়াক্ফ এস্টেটের নামে ॥ খাস জমি দখল

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ওয়াক্ফ এস্টেটের নামে ॥ খাস জমি দখল

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ জেলার চকরিয়ার খুটাখালী আলীমুদ্দীন ওয়াক্ফ এস্টেটের নামে প্রায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যের ৫০৬ একর খাস জমি ৬০ দশকের বেশি সময় ধরে জবরদখল করে রেখেছে প্রভাবশালী চক্র। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে উপজেলা প্রশাসন ও যৌথবাহিনী এ জমি উদ্ধার করে লাল পতাকা দিয়ে দখলমুক্ত করে। কিছুদিন পর প্রভাবশালীরা ফের দখল করে নিয়েছে জমিগুলো। এ বিপুল পরিমাণ খাস ভূমি বেহাত হওয়ায় সরকার এ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবে ভূমি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দখলে জড়িতরা উচ্চ আদালতে রিট মামলা দেয়ার কারণে রায় নিষ্পত্তি না হওয়ায় ওই খাস জমি উদ্ধারে গতি পাচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, দখলবাজ চক্র দীর্ঘমেয়াদি দখলে থাকার কৌশল হিসেবে আদালতের মামলাগুলো সহজে নিষ্পত্তি করতে চাইছে না। জানা গেছে, চকরিয়ার খুটাখালীর মেদাকচ্ছপিয়া মৌজায় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি গ্রামের জাফর আলী চৌধুরীর ছেলে ইজ্জত আলী চৌধুরীর নামীয় আরএস ৫৬ খতিয়ানের ৮৬২ একর ৬৮ শতক জমি থেকে ১৯১৯ সালে আলীমুদ্দীন ওয়াক্ফ এস্টেটের নামে ৩৩০৬ নম্বর ভুয়া ওয়াক্ফ কবলা সৃজন করে আলীমুদ্দীন চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি। অথচ আরএস খতিয়ানের রের্কডপত্রে তার কোন অস্তিত্ব নেই। কবলা সৃজনের পর আরএস এমআরআর এবং বিএস জরিপ সম্পন্ন হলেও কোন জরিপে তাদের নামে ওই পরিমাণ জমি রেকর্ড করাতে পারেনি। ১৯২৮ সালে সম্পন্ন হওয়া আরএস জরিপের পর আরএস ৫৬ খতিয়ানের জমি থেকে ১৯৫০ সালে রাষ্ট্রীয় অর্জন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ২০ ধারা মোতাবেক উল্লেখিত খতিয়ান থেকে ৩৭৫ বিঘার অতিরিক্ত জমি সরকারের কাছে হুকুম দখলের মাধ্যমে সারেন্ডার করা হয়। পরে এ জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ পূর্বের মালিক ফৌজুল করিম চৌধুরী ওই সময় ১৭ হাজার ২৭৭ টাকা ৮০ পয়সা ও হাজী ফৌজুল কবির চৌধুরী ১৯ হাজার ৬৪০ টাকা ৩১ পয়সা সরকারের কাছ থেকে বুঝে নেন। পরবর্তীতে এ জমি পিআরআর জরিপে পৃথক ছয়টি খতিয়ানে বিভক্ত হয়। বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ডভুক্ত করা হয়। বিএস জরিপে ১১৪ ও ১১৫ নম্বর বিএস খতিয়ানে মাত্র ১৪ একর ৮০ শতক জমি আলীমুদ্দীন ওয়াক্ফ এস্টেটের নামে রেকর্ড হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, মোতোয়ালি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও তার চাচাত ভাই চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রয়াত সুলতানুল কবির চৌধুরীর পিতা এবং ওয়াক্ফ এস্টেটের নামে সরকারীভাবে ১০৫ একর ৪৬ শতক জমি রেকর্ডে উল্লেখ থাকলেও তারা গত ৬২ বছর ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ও সরকারের বিরুদ্ধে কাল্পনিক মামলা করায় সরকারী খাস খতিয়ানের ৫০৬ একর জমি (লবণ ও চিংড়ি জমি) ভুয়া ওয়াক্ফ এস্টেটের নাম ভাঙ্গিয়ে জবরদখলে রেখেছে। সূত্র আরও জানায়, ১৯৯৫ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭৩ লাখ ৮০ হাজার ৫৬২ টাকা ও ২০০৭ সালে ১ কোটি ২৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের অভিযোগে দখলবাজ চক্রের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দখলবাজ চক্র এসব জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখলে রাখার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ক্ষতিপূরণ মামলার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দুটি রিট পিটিশন মামলা দায়ের করে। বর্তমানে মামলাগুলো উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। জানা গেছে, ২০০৭ সালে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন যৌথবাহিনীর সহায়তায় অভিযান চালিয়ে মেদাকচ্ছপিয়ার আলীমুদ্দীন ওয়াক্ফ এস্টেটের অবৈধ দখলে থাকা সরকারের ৫০৬ একর খাস জমি উদ্ধার করেছিল। ওই সময় যৌথবাহিনী ওয়াক্ফ এস্টেটের বাংলো থেকে গ্রেফতার করেছিল মোতোয়াল্লি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে। প্রায় ৮ মাস কারাভোগের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে প্রশাসনের দেয়া লাল পতাকা উপড়ে ফেলে আবারও জবরদখল করে নেয় জমিগুলো।
×