ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ॥ উগ্র পাকিদের বিরুদ্ধে এক খণ্ড বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সিডনির মেলব্যাগ॥ উগ্র পাকিদের বিরুদ্ধে  এক খণ্ড বাংলাদেশ

অস্ট্রেলিয়ার সামার মানেই আনন্দের জোয়ার। এ দেশ তো আর আমাদের মতো নয় যে, রাজনীতির জ্বালায় অস্থির। এই তো কত বড় ফাঁড়া কাটল প্রধানমন্ত্রী টনির। খসতে খসতে বেঁচে যাওয়া রাজ মুকুটের পালক তাঁকে প্রধানমন্ত্রিত্বে বহাল রাখলেও বেগ দিয়েছে। এমনটা মনে হচ্ছিল এ যাত্রায় তাঁর আসন কি আসলেই চলে যাচ্ছে? তিনিও কি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাডের মতো নিজ দলের সাংসদদের ভোটে শীর্ষ পদ হারাতে চলেছেন? এ যাত্রায় বেঁচে যাওয়া টনির টালমাটাল ভবিষ্যত রাজনীতিকে উত্তপ্ত মিডিয়াকে মুখরোচক ও উত্তেজক করে রাখলেও সমাজে তার কোন প্র্রভাব পড়েনি। প্রভাব ছিল না রাজনৈতিক অস্থিরতায়ও। দেশের মানুষের বিরুদ্ধে এমন জিঘাংসা আর হত্যার রাজনীতি আগে দেখা যায়নি। মানুষকে জিম্মি করা এই অপরাজনীতিকে ঘৃণা জানানো ছাড়া আর কি করতে পারি আমরা? অথচ দেশে, দেশের বাইরে বাংলাদেশ এখনও এক ঐক্য আর সম্প্রীতির স্মারক। দেশপ্রেমে একবিন্দু ঘাটতি নেই আমাদের। নেতানেত্রীদের অনুরোধ জানাই অস্ট্রেলিয়ায় এসে দেখে যান বাংলাদেশীরা ক্রিকেট উৎসব নিয়ে কেমন ঐক্যবদ্ধ। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশী মাত্রই আজ একেকটি জাতীয় পতাকা। এই যে গত সপ্তাহে প্রস্তুতি ম্যাচ হলো, আমরা খেলার নিয়মে হারলেও নৈতিকভাবে পাকিদের পরাজিত করেছি। যাঁরা মাঠে ছিলেন তাঁরা দেখেছেন পাকিদের জান্তব উল্লাস আর ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে সেøাগান আর উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা কিভাবে নস্যাত হলো ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ ও ‘জয়বাংলা’ ধ্বনির কাছে। মাঠজুড়ে আমাদের উল্লাস আর ক্রিকেটীয় আনন্দে ক্ষিপ্ত পাকিস্তানীরা বোতল ছুড়ে গ-গোল পাকানোর চেষ্টা করলেও তা কাজে আসেনি। অস্ট্রেলিয়ার মতো সভ্য দেশে গণতান্ত্রিক সমাজে থেকেও পাকিরা আচরণ বদলাতে শেখেনি। কথায় বলে এমন একটি প্রাণী আছে যার লেজ কখনও সোজা হয় না, এ যেন তারই প্রতিচ্ছবি। ভাবতে কষ্ট হয় দেশের রাজনীতির একাংশ এখনও এই পাকি প্রেমে অন্ধ। অধুনা সুশীল নামে পরিচিত কথিত তালেবরদের কেউ কেউ এতই অন্ধ তারা পেট্রোলবোমায় স্বজন নিধনের চেয়ে পাকি গণতন্ত্রের প্রেমে মাতোয়ারা। অথচ সেদিন এ বিষয়টা আরও একবার স্পষ্ট হলো, আর কোনদিন কোনকালেও পাকিদের নামে বন্ধন বা মৈত্রী হবে না আমাদের। অবশ্যই কূটনৈতিক শিষ্টাচার রাজনৈতিক সম্পর্ক ও দেশ হিসেবে ব্যবসাবাণিজ্য থাকবে। কিন্তু যারা একদা একত্রে থাকার খোয়াবে এখনও ‘ভাই ভাই’ দুনিয়ায় বাস করেন, তাদের বদখোয়াব কোনদিনও পূর্ণ হবে না। ব্যাটারা এখনও আধিপত্যবাদী আর নিজেদের আমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ মনে করে। এই শ্রেষ্ঠত্বের আহম্মকি প্রতিবেশী দেশের কাছে ক্রমাগত ছোট ও দুর্বল করেছে পাকিস্তানকে। আজ আর কোন অর্থে ভারতের সঙ্গে তুলনা চলে না তার। তারপরও জ্বালাও পোড়াও আর মৃত্যুর রাজনীতিই পাকিদের অবলম্বন। ক্রিকেট মাঠে, হকি মাঠে, ফুটবল মাঠে, কমনওয়েলথ গেমসে অলিম্পিকে ভূরি ভূরি বাজে রেকর্ডের মালিকরা সিডনিতে বাংলাদেশী তারুণ্যের কাছে পরাভব মানলেও উত্তেজনা থামাতে চায়নি। এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট তাদের সঙ্গে আমাদের প্রকৃতিগত আচরণগত ব্যবহার বৈশিষ্ট্য যোজন যোজন ফারাক। কেবল ধর্ম আর সন্ত্রাসের নামে ঐক্য হলে পৃথিবী এদ্দিনে সভ্য শান্ত আর অসুরÑ এ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যেত, তা হয়নি, হবেও না। দেশে যাঁরা মানুষ জ্বালিয়ে, যানবাহনে পেট্রোলবোমা ছুড়ে পূর্ব পাকিস্তান ফিরে পাবার দুঃস্বপ্ন দেখছেন তাঁদের দুরাশাও কোনদিন পূর্ণ হবে না। যে মুহূর্তে পাকিস্তান প্রতিপক্ষ ঠিক সে মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশ জাগ্রত হয়ে উঠতে শুরু করে। আমি খুব আশ্চর্য হয়ে দেখি ঘোর আওয়ামীবিরোধী এমনকি বিএনপি ঘেঁষা মানুষও পাকিদের দেখে জয়বাংলা বলতে শুরু করেন। বুকের বাঁ পাশে হাত দিয়ে বাংলাদেশ বাংলাদেশ ধ্বনি দিতে দিতে জানিয়ে দেন তোদের মতো আমাদের দেশপ্রেম উত্তেজনায় থাকে না, থাকে হৃদয় গহীনে। আফসোস এই মানুষদের নিয়ে খেলছে বেগম জিয়ার রাজনীতি, হারাতে হারাতে নিজের সব হারিয়ে ভিনদেশী সন্ত্রাসী হায়ার করে দেশ ধ্বংসের এই অপচেষ্টা আর কত কাল? অথচ আমরা বাইরে দেখছি মনেপ্রাণে গড়ে ওঠা ঐক্য আর ভালবাসার বাংলাদেশ সামনে ওয়ার্ল্ড কাপের প্রত্যেকটি খেলায় তার প্রমাণ মিলবে। আনন্দ-বেদনায়, হাসি-কান্নায়, জয়-পরাজয়ে আওয়ামী বা বিএনপি বলে কিছু থাকবে না, থাকবে একটুকরো বাংলাদেশ। জঙ্গী জামায়াতী উগ্র জাতীয়তাবাদীদের বলি দয়া করে এই অর্জনটুকু বজায় রাখতে দিন। নিজেরা জাহান্নামে যেতে চান যান, দেশ ও জাতিকে সে পথে ধাবিত করবেন না। আমরা দেশ-বিদেশে শান্তি ও প্রগতিতে বাংলাদেশ বাংলাদেশী হয়ে থাকতে চাই।
×