ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুনতাসীর মামুন

যারা দেশের জন্য হুমকি তাদের সঙ্গে সংলাপ হবে কী ভাবে?

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

যারা দেশের জন্য হুমকি তাদের সঙ্গে সংলাপ হবে কী ভাবে?

(১৬ ফেব্রুয়ারির পর) মিডিয়া সৃষ্ট ‘বিশিষ্ট নাগরিকদের’ বক্তব্যে গুরুত্ব দেয়া হয়। এবং প্রতিটি টকশোতে বোম্বেটে রাজনীতির প্রতিনিধিদের অবাধ স্বাধীনতা দেয়া হয় বক্তব্য প্রকাশে মৌলিক অধিকারের নামে। এমনকি যুদ্ধাপরাধ বিচারের শুরুতে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বলার সুযোগ দিয়েছে এই ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া। এসব গণতন্ত্রের নামে হয়েছে এবং এর প্রবক্তারা বোম্বেটে রাজনীতির বিরুদ্ধে কখনও সোচ্চার হননি। যখন বিএনপির মেজর নেতারা এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে উপহাস করেন তখন কোন সাংবাদিকের হিম্মত হয়নি তাদের জিজ্ঞেস করা, তাদের সন্তানরা কোথায় পড়াশোনা করে? ও লেভেল এ লেভেল পরীক্ষায় হরতাল শিথিল হয় কিন্তু এসএসসি, এইচএসসিতে হয় না, কারণ তাদের ছেলেমেয়েরা এ লেভেল ও লেভেল পরীক্ষার্থী। যেসব শিক্ষককে টকশোতে বলার সুযোগ দেয়া হয় সেখানে কখনও প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করেন না, খালেদা জিয়া নিজ নাতনিদের পরীক্ষা দেয়ার জন্য বা পড়াশোনার জন্য মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দেন, দেশের ছেলেমেয়েদের কেন পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেন না? এখন মিডিয়ার কর্ণধারদের মন খারাপ। মানুষের আগ্রহ হারাচ্ছে খালেদার রাজনীতি সম্পর্কে মিডিয়ার আগ্রহ সত্ত্বেও। তার বাসার ৪০ জনকে কখন খাবার দেয়া হচ্ছে কি হচ্ছে না, সেটি এখন খবরের বিষয় করার চেষ্টা হচ্ছে। যারা মানুষকে কাবাব বানাচ্ছে তাদের বাইরে থেকে ঘি-পরোটা সাপ্লাই করতে হবে কাবাব খাওয়ার জন্য? এই আবদার আবার ফলাও করে জানাতে হবে গণতন্ত্রের নামে? আরও প্রশ্ন আছে। সুপ্রীমকোর্টের বারের প্রধান যুদ্ধাপরাধ সমর্থনকারী খন্দকার মাহবুব বলবেন কোর্ট বন্ধ রাখতে এবং আদালত তাতে সায় দেবেন কেন? যুদ্ধাপরাধের রায় আটকে রাখা হবে আর সেটি পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা বললে আদালত অবমাননা হবে কেন? রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এমনকি মন্ত্রীদের আমরা শুধু সমালোচনা নয়, যা ইচ্ছা তা বলতে পারব, আর আদালত সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যাবে না, এটি কোন্ ধরনের লজিক বা গণতন্ত্র? আমি এই প্রশ্নগুলো তুললাম এ কারণে যে, পাকিস্তান পক্ষ বা হেজাবিরা কত শক্তিশালী তা বোঝাবার জন্য। এবং তাদের ভিত শক্তিশালী করার জন্য আওয়ামী লীগেরও ভূমিকা আছে। বার বার এসব সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার পরও নীতিনির্ধারকরা গা করেননি। স্বদেশ রায়ের লেখায় দেখলাম, মফস্বল পর্যায়ে টাকা খেয়ে আওয়ামী ‘নেতারা’ এসব দুর্বৃত্তকে শেল্টার দিচ্ছে। বিশেষ করে বগুড়ায়। এ মন্তব্য অগ্রহণযোগ্যÑ এমনটি বলা হবে সত্যের বরখেলাপ। বরং এটি স্বীকার করে, যারা এসব করছে তাদেরও শাস্তি দেয়া জরুরী। এ দেশটি ছোট। কে টাকা খাচ্ছে, কে খাচ্ছে না এটি সবাই জানে। এর কিছু কিছু গুজব হতে পারে। সব নয়। কয়েক বিলিয়ন ডলার পাচার করলেও কারও শাস্তি হয় না, বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে ব্যাপারটি পড়ে না কেন, সেটি সবাই জানে। আবার সামান্য হেরফেরে কেন বিপাকে পড়তে হয় সেটিও সবার জানা। এসব যারা করছে তাদের একাংশ তো আওয়ামী মদদেই করছে। ॥ ৪ ॥ এখন কিছু নাগরিকের স্মারকপত্র নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। গুরুত্বও পাচ্ছে। তাদেরও মূল বক্তব্য বিএনপি-জামায়াতের মতো। সংলাপ হতে হবে। এদের মধ্যে বিভিন্ন সময় ও আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী এবং কিছু রাজনৈতিক টোকাই আছেন। তারা সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। এদের কয়েকজন আগে এনএসএফ করেছেন বলে জানা যায়। এদের কয়েকজন ২০০১ সালে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে সচিবালয়ের পদে থেকে নির্বাচন কমিশনে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছেন। কেউ কেউ সেই লতিফুরের সঙ্গে ছিলেন এবং বিএনপি যাতে ক্ষমতায় যেতে পারে সে জন্য ধুমধাম করে কাজ করেছিলেন। এদের সমর্থক মিডিয়ার কয়েকজন যারা মনে করেন, রাজনৈতিক নয়, অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্ষমতায় থাকা উচিত। তাদের মূল বক্তব্য বিএনপি-জামায়াতের মতো হওয়ার কারণ, তারা মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্ভব এবং সেই সরকার হলে তারা উপদেষ্টা হতে পারবেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন সময় ও আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ও রাজনৈতিক টোকাই ছিলেন। এখন বিষয়টি হাস্যকর হয়ে যাওয়ায় রাজনৈতিক টোকাইদের বাদ দেয়া হয়েছে। গত ৩৫ দিন তারা কখনও বলেননি, বিএনপির সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। হ্যাঁ, তারা কখনও কখনও সান্ধ্য ভাষায় বলেছেন, দুর্বৃত্তদের সন্ত্রাস রুদ্ধ করতে হবে। তারা এও বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের সঙ্গেও তো শান্তি চুক্তি করা হয়েছে। এই যুক্তি মানলে বলতে হবে, বোম্বেটের ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে না। বোম্বেটেরা যদি বলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে তখন বাধ্য হলে বোম্বেটেদের সঙ্গে না হয় আলোচনায় বসা যাবে। সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী সুবেশী, শুদ্ধ কথা বলার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যদি সংলাপে বসতে হয়, তাহলে বোম্বেটেদের সঙ্গে বসতে আপত্তি কি? কারণ, বিএনপি-জামায়াত তো বলছে বোম্বেটেরা তাদের নয়। যদি তাদের না হয়, তাহলে বলতে হয় হরতাল-অবরোধও তারা দেয়নি। সুতরাং আলোচনার প্রয়োজন কি? যুক্তিটি বিএনপি-জামায়াতের যুক্তির মতো কিন্তু বিএনপির পক্ষে ভেকধারী সমাজ বা সেইসব বুদ্ধিজীবী যারা মনে করেন সমাবেশ করতে না দেয়াতে গণতন্ত্র মুখথুবড়ে পড়েছে এবং তার উপযুক্ত জবাব গরিব শিশু-কিশোর-কিশোরী, নারী-বৃদ্ধ পুড়িয়ে মারা, তারা এ ধরনের যুক্তিই বোঝেন। এই সব নাগরিক এখন সনদ চান। নতুন সোশ্যাল কনট্রাকট? যেন একেকজন জ্যাঁ জ্যাক রুশো আর কী! সংবিধানই তো এ দেশের নাগরিকদের সনদ। মজুমদারি সনদ নিতে হবে কেন? রাজনৈতিক টোকাইদের নিয়ে কাজ শুরু করার পর সবাই যখন বুঝে গেলেন এরা কোন্ পক্ষ তখন রাজনৈতিক টোকাইদের আপাতত বাদ দেয়া হলো। তারা এখন বলছেন, সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে, তারপর সংলাপ। যেন তারা বিরাট একটা ছাড় দিচ্ছেন। তাদের পরিষ্কার ভাষায় বলতে হবে সন্ত্রাস কারা করছে। তাদের সান্ধ্যভাষা ত্যাগ করে শোনা যায় এমন স্বরে বলতে হবে, ১৫ আগস্ট জন্ম দিন পালন করা, জাতির জনককে পাক বন্ধু বলা, যুদ্ধাপরাধ বিচার সমর্থন না করা রাষ্ট্রীয় অপরাধ। গত ৪১ দিনের মানুষ পোড়ানোর দায় খালেদা জিয়ার এবং জামায়াতে ইসলামীর। তারপর দেখা যাবে সংলাপ করা যায় কি যায় না। পিঠের খোসা রেখে সংলাপ করা যায় না। (চলবে)
×