ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাখা-প্রশাখা ছড়াচ্ছে আইএস

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শাখা-প্রশাখা ছড়াচ্ছে আইএস

ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সিরিয়া ও ইরাকস্থ ঘাঁটির বাইরে আফগানিস্তান, আলজিরিয়া, মিসর ও লিবিয়ায় সামরিক শাখা-প্রশাখা গড়ে তুলেছে। এতে বিশ্বে এক নতুন সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, সিরিয়া ও ইরাকে আইএস যোদ্ধাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩১ হাজার ৫শ’। জর্দান, লেবানন, সৌদি আরব, তিউনিশিয়া ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলো সম্ভবত অন্তত দুশ’ চরমপন্থী আইএসের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। সন্ত্রাস দমন বিষয়ক এক আমেরিকান কর্মকর্তা এ কথা জানান। মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক লে. জে. ভিনসেন্ট আর স্টুয়ার্ড চলতি মাসে এক মূল্যায়নপত্রে বলেন, আইএস আন্তর্জাতিক পরিম-লে বড় ধরনের উপস্থিতি ঘটাতে শুরু করেছে। ন্যাশনাল কাউন্টারটেররিজম সেন্টারের ডিরেক্টর নিকোলাস রাসমুসেন গত সপ্তাহে কংগ্রেসে দেয়া সাক্ষ্য জেনারেল স্টুয়ার্ডের বিশ্লেষণের প্রতিধ্বনি করেন। সমালোচকদের আশঙ্কা, এরূপ মূল্যায়ন যুক্তরাষ্ট্রকে এক দীর্ঘমেয়াদী, বহুদিকবিশিষ্ট এক সংঘর্ষে জড়িত করবে। কারণ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে যুদ্ধবিষয়ক নতুন ক্ষমতা দিতে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা কমিটির সিনিয়র ডেমোক্র্যাটিক সদস্য এ্যাডাম বি. সিফ বলেন, আমি যে কোন স্থানে আমেরিকান সৈন্য ব্যবহারের আরেকবার অনুমতি দিতে বিতৃষ্ণ বোধ করছি। ইসলামিক স্টেটের শাখাগুলো এবং অনুগত যোদ্ধাদের আকস্মিক বিস্তার লাভের কারণে ওবামা ও তাঁর উত্তরাধিকারীর জন্য নতুন ক্ষমতা চাইতে হোয়াইট হাউস তাগিদ বোধ করছে। যেখানে এ জঙ্গী দলটির অনুসারীদের উদ্ভব ঘটবে, সেখানেই এটির পশ্চাদ্ধাবন করাই নতুন ক্ষমতা চাওয়ার উদ্দেশ্য। এর আগেও ওবামা ও প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিও বুশ গত দশক ধরে আল-কায়েদার সদর দফতরের বাইরে সংগঠনের শাখাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে গিয়েছিলেন। আর-কায়েদার সদর দফতর প্রথমে ছিল আফগানিস্তানে এবং পরে তা পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জোশ আর্নেস্ট বলেন, আইএসের কেউ যেন এ ধারণা না করে যে, যদি যে কোন প্রতিবেশী দেশে চলে যাওয়া, তা হলে সে মূলত এক নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে এবং সে যুক্তরাষ্ট্রের নাগালের বাইরেই থাকবে। ইসলামিক স্টেট ২০১৪ সালের জুনে এক খিলাফত বা ধর্মীয় রাষ্ট্র গঠনের কথা ঘোষণা করার পর বিভিন্ন উপদল ও ব্যক্তি যোদ্ধাদের কাছ থেকে আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। সন্ত্রাস দমনবিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, আইএসের ভৌগোলিক বিস্তৃতি ঘটাতে আল-কায়েদার শাখা-কাঠামোকে কাজে লাগাচ্ছে। এর ফলে আইএসের শাখাগুলো দ্রুত ও সহজেই বিস্তার লাভ করতে পারে। ওয়াশিংটনভিত্তিক মিডল ইস্টমিডিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর স্টিভেন স্ট্যালিনস্কি বলেন এক সময় আল-কায়েদা ও এর শাখাগুলোর অংশ ছিল এমন উপদলগুলো যে গ্রুপটিকে বিজয়ী হবে বলে মনে করছে, সেটির সঙ্গেই যোগ দিয়েছে। আইএসের প্রতি আকর্ষণ পশ্চিমা দেশগুলোতেও বিদ্যমান। যেমন, গত মাসে প্যারিসে সংঘটিত হামলায় জড়িত বন্দুকধারীদের একজন আইএসের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছিল। গত সপ্তাহে আফগানিস্তনে এক আমেরিকান ড্রোন হামলায় এক সাবেক তালেবান কমান্ডার মোল্লা আবদুল রউফ খাদিম নিহত হয়। সে আইএসের প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্প্রতি যোদ্ধা সংগ্রহ শুরু করে। আইএস আফগানিস্তানে কোন ভূখ- নিয়ন্ত্রণ করছে বলে কোন আভাস দেখা যায় না। কিন্তু জঙ্গী সংগঠনটি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বিষয়ে এর আগ্রহ থাকার আভাস দিয়েছে এবং যোদ্ধা সংগ্রহ করতে সেখানে লোক পাঠিয়েছে বলে জানা যায়। একইভাবে কিছু আগে ইয়েমেনে আল-কায়েদা ইনদি এ্যারাবিয়ান বেনিনসুলার নেতারা আইএসেএর নেতা আবু বকর আল বাগদাদির সঙ্গে তাদের মতপার্থক্য আড়াল করতে আক্রমণাত্মক নয় এমন ভাষা ব্যবহার করেছিল। কিন্তু নবেম্বরে আল-কায়েদা যোদ্ধাদের একটি উপদল বাগদাদির প্রতি আনুগত্যের শপথ নিলে আল—কায়েদার অবশিষ্টাংশের সঙ্গে আইএসের চরম উত্তেজনা দেখা দেয়।
×