ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষার বিরুদ্ধে জিহাদ

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শিক্ষার বিরুদ্ধে জিহাদ

শুধু বন্ধ বললে ভুল হবে, বর্তমান বাংলাদেশে শিক্ষা কার্যক্রম গভীর খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি-নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম যতদিন অব্যাহত থাকবে ততদিন প্রায় রুদ্ধ থাকবে দেশের শিক্ষাঙ্গন তথা শিক্ষার অগ্রযাত্রা। প্রায় দেড় মাস ধরে চলা অবরোধ-হরতালে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এক কথায় বিপর্যস্ত। অথচ বছরটা শুরু হয়েছিল শিক্ষার্জনের সুন্দর এক স্বপ্নময়তার ভেতর দিয়েই। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরের বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়া হয়েছিল শিক্ষার্থীদের হাতে। বই উৎসবের দিনটিও সন্ত্রাসীদের ডাকা হরতালের কালো ছায়ার নিচে ছিল। তবু উৎসব, উদ্যম ও আগ্রহের সামান্যতম কমতি ছিল না নবীন-তরুণ শিক্ষার্থীদের ভেতর। কিন্তু এর কয়েকদিন পরই টানা অবরোধ চাপিয়ে দেয়া হলে দেশের বেশিরভাগ বিদ্যালয় অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানীর বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিসেম্বরে ছিল শীতকালীন ছুটি। সেই ছুটির পর আর খোলা সম্ভব হয়নি স্কুল। তার অর্থ হলো কোমলমতি শিক্ষার্থীরা গত দুই মাস ধরে স্কুলে যেতে পারছে না। এরই ভেতর এসএসসি পরীক্ষা চলে এসেছে। লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর অপূরণীয় ক্ষতির কথা বিবেচনায় রেখে পরীক্ষা চলাকালে অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য সরকারসহ বিভিন্ন মহল থেকে যখন অব্যাহতভাবে আবেদন-নিবেদনের পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে, ঠিক তখনই ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয় সারাদেশে। দেশের মানুষ যখন আশা করছিল যে, অন্তত শেষ মুহূর্তে হলেও রাজনীতিকদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হবে, সেই মুহূর্তে পরীক্ষা শুরুর দিনে নতুন করে হরতাল আহ্বানের মধ্য দিয়ে শুধু যে আশার সেই ক্ষীণ প্রদীপটি নির্বাপিত করা হয়েছে তা-ই নয়, চরম উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হয়েছে লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অপরিণত বয়স্ক এ সব শিক্ষার্থীর পক্ষে কি আদৌ সুস্থ মস্তিষ্কে পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব? পরীক্ষা শুরুর দিনটি থেকেই তারা টানা হরতাল দিয়ে আসছে সপ্তাহের প্রতিটি কর্মদিবসে। বিএনপি-জামায়াত চায় না দেশে আধুনিক শিক্ষার ধারা অব্যাহত থাকুক, সেটা এখন প্রমাণিত। গত সপ্তাহেই প্রাথমিক শ্রেণীর বইবাহী ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়। ফলে বিনষ্ট হয়ে যায় ৩৮ হাজার বই। খুলনা বইমেলায় তারা একাধিকবার ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। শুধু স্কুলেই নয়, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও হরতাল-অবরোধের অশুভ ছায়া পড়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর আবার বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা নিতে সমর্থ হয়নি। এখনও ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। আবার ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরেও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্লাস শুরু হলেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম। এভাবে চলতে থাকলে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স কারিকুলাম কিভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে? এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার কি কোন পথ থাকবে! শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত এভাবে বিপন্ন হতে থাকলে দেশের পরিণতিও যে ভিন্ন হবে না তা অনুধাবনের জন্য প-িত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এ শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনে দেশের হাল ধরবে, এটা স্মরণে রাখা দরকার। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন রাজনীতি অবশ্যই পরিত্যাজ্য। সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দলের প্রতি আবেদন-নিবেদন জানিয়ে যে লাভ নেই সেটা জাতি অনুধাবনে সক্ষম হয়েছে। তাই এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য দেশবাসী এখন সরকারের দিকেই তাকিয়ে আছে। সরকার সন্ত্রাসীদের কঠোরভাবে দমন করলেই কেবল দেশের বন্ধ শিক্ষা কার্যক্রমে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসতে পারে।
×