ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তাদের সঙ্গে সংলাপে বসা মানে সন্ত্রাসকে উৎসাহিত করা ॥ সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:৪৬, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

তাদের সঙ্গে সংলাপে বসা মানে সন্ত্রাসকে উৎসাহিত করা ॥ সংসদে প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা হরতাল-অবরোধের নামে মানুষকে পুড়িয়ে মারার মতো হীন ও জঘন্য কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সকল শ্রেণীপেশার মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ ও রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ও উন্মাদ হয়ে গেছেন। তাঁর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে, দেশের শিক্ষার্থীদের জীবনকে রক্ষা করতে হবে। আন্দোলনের নামে যারা মানুষকে পুড়িয়ে মারার মতো জঘন্য কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে সব ব্যবস্থাই নেয়া হবে। আর কার সঙ্গে সংলাপ? যাঁর (খালেদা জিয়া) সঙ্গে বসলে পোড়া মানুষের গন্ধ পাওয়া যাবে, তাঁর সঙ্গে? তাঁদের সঙ্গে সংলাপে বসা মানে সন্ত্রাসকে উৎসাহিত করা। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার রাতে কার্যপ্রণালী বিধির ৬৮ বিধি অনুসারে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজীর এসএসসি পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে আনীত জরুরী জনগুরুত্বপূর্ণ গৃহীত নোটিসের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। নোটিসের ওপর আলোচনায় আরও অংশ নেন সরকারী দলের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুর রহমান, আবদুল মান্নান, আবদুর রহমান, জুনায়েদ আহমেদ পলক, ডাঃ আমানুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের মইনউদ্দীন খান বাদল, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম, জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান ও মাহজাবিন মোর্শেদ। আলোচনার সময় ভিভিআইপি গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট। আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি নেত্রীর হাত থেকে নারী-শিশু, নিরীহ মানুষ কেউই রেহাই পাচ্ছে না। আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। সেই জনগণকে যদি পুড়িয়ে মারা হয়, সেটা কী রাজনীতি? বিএনপি নেত্রী রাজনীতি নয়, সন্ত্রাস চালাচ্ছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) কেন বাড়ি ছেড়ে অফিসে বসে আছেন? শোনা যাচ্ছে, ওই বাড়িতে ৫০/৬০ মানুষ আছে। এত মানুষ ওই অফিসে কী করছে? উনি কাদের পাহারা দিচ্ছেন? কেউ কেউ বলছেন, ওই অফিসে নাশকতাকারী সন্ত্রাসী-জঙ্গীরাও থাকতে পারে। তাই সেখানে জঙ্গী-সন্ত্রাসী আছে কিনা তা দেখা উচিত। উনি অফিসে বসে টেলিফোন করে করে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দিচ্ছেন। কারা এসব নাশকতা-সহিংসতার অর্থের যোগান দিচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে। সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে সংলাপের কথা বলেন। কার সঙ্গে সংলাপে বসব? তাঁর সঙ্গে বসলে তো বার্ন ইউনিটের পোড়া মানুষের গন্ধ পাওয়া যাবে। তাঁদের সঙ্গে সংলাপে বসা মানে সন্ত্রাসী-জঙ্গীবাদী কর্মকা-কে উৎসাহিত করা। আর আলোচনা করলেই কি উনি মেনে নেবেন? তিনি তো মানবেন না। সংসদ নেতা বলেন, এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার মামলা থেকে নিজেকে এবং অর্থপাচারের মামলা থেকে ছেলেকে বাঁচাতেই বিএনপি নেত্রী এসব জঘন্য কর্মকা- করে যাচ্ছেন। নির্বাচনে না এসে হতাশা থেকে এখন হাহুতাশ করছেন। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, মানুষের জীবন কী এতটাই খেলো হয়ে গেছে? তাদের জীবনের কী কোন মূল্য নেই। আমরা কোনভাবেই মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে দেব না। তাই সব শ্রেণীপেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যারা এ ধরনের হীন কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রূখে দাঁড়াতে হবে। এসএসসি পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেখানে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে সেখানে কীভাবে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা দিতে পাঠাব? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, পরীক্ষার্র্থীরা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারে সেজন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করে এবং আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী দিয়ে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিএনপির নেত্রীর যদি এতটুকু মনুষ্যত্ব থাকত তবে হয়ত একটা রিস্ক (ঝুঁকি) নিতে পারতাম। কিন্তু মনে হচ্ছে, বিএনপি নেত্রী ও তাঁর দল বিএনপি-জামায়াত সুস্থ অবস্থায় নেই। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, জাতীয় মেরুদ-কে ধ্বংস করতে হীন ষড়যন্ত্র করছেন খালেদা জিয়া। পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়া দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কোথাও হরতাল-অবরোধ হচ্ছে না, সবকিছু স্বাভাবিক। পৃথিবীর কোন দেশ নাশকতাকারী, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আপোস করেনি। করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবান, আইএস, আল কায়েদার সঙ্গে আপোস করত। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, গণতন্ত্র ও সন্ত্রাসবাদ-সহিংস রাজনীতি একসঙ্গে চলতে পারে না। পৃথিবীর কোথাও আন্দোলনকারীরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ করে না। আমরা সন্ত্রাসী শক্তির কাছে মাথানত করব না, অবশ্যই বাংলার শিক্ষার্র্থীরা পরীক্ষা দেবে। ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, আন্দোলনে খালেদা জিয়া হেরে গেছেন। রাজনীতিতে হেরে গিয়ে উনি এখন শিক্ষা ব্যবস্থাকে আক্রমণ করেছেন। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাবার মৃত্যুর ৪০ দিন না পেরুতে নাতনিদের পরীক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় পাঠালেন, আর দেশের ১৫ লাখ ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা বন্ধে হরতাল-অবরোধ করছেন। এর জবাব দেশবাসীকে খালেদা জিয়াকে দিতে হবে। এটা বিকৃত মানসিকতার বহির্প্রকাশ। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, কোমলমতি ছাত্রছাত্রীর জীবন ধ্বংসের যারা রাজনীতি করে তারা কখনই দেশপ্রেমিক নয়, বরং দেশের শত্রু। জাসদের মইনউদ্দীন খান বাদল বলেন, বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক সঙ্কট নেই, দেশে রাজনীতির নামে সন্ত্রাসবাদ চলছে। বাংলাদেশ, জনগণের শত্রু হিসেবে কাজ করছেন বিএনপি নেত্রী। প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, খালেদা জিয়া নিজে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি বলেই দেশের ছাত্রছাত্রীদের এসএসসি পরীক্ষা দিতে চান না। নোটিসটি উত্থাপনকারী ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, পরীক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন, চিন্তিত, ভীত ও হতাশ। বিএনপি রাজনীতির নামে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য চালাচ্ছে। পৃথিবীর যেখানেই নৈরাজ্য-সন্ত্রাস হয়, সেদেশের সরকার সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, সেনাবাহিনী নামিয়েও সন্ত্রাস দমন করেছে।
×