ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির সন্ত্রাসে জোর ভূমিকা রাখছে শিবির ও হিযবুত

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপির সন্ত্রাসে জোর ভূমিকা রাখছে  শিবির ও  হিযবুত

বিভাস বাড়ৈ ॥ নাশকতার পক্ষে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের বর্তমান অবস্থান পুঁজি করে ফায়দা লুটতে চায় জামায়াত-শিবির ও নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর। আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের জঙ্গীরূপে চালানো নাশকতার মধ্যেই হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে ছাত্রশিবির একাকার হয়ে কাজ করছে। মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেও মূলত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই যে কোন মূল্যে সরকার উৎখাত চায় উগ্রবাদী এ চক্রটি। এদিকে এর অংশ হিসেবেই গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সেনাবাহিনীকে উস্কানি দেয়ার অপকৌশল নেয়া হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিলি করা পোস্টার ও লিফলেটে হিযবুত তাহ্রীরের ব্যানারে দেয়া হচ্ছে সরকার উৎখাতের ঘোষণা। সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে রাতের আঁধারে চলছে পোস্টারিং। গণসংযোগ কর্মসূচীর নামেও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সঙ্কট তৈরির জামায়েত, শিবির ও হিযবুত তাহ্রীর। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের সর্বশেষ তৎপরতার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে যে কোন মূল্যে সরকার উৎখাত চায় উগ্রবাদী চক্রটি। বিএনপি জোটের কর্মসূচীতে যুক্ত করেছে ‘রাজবন্দীদের মুক্তি’র দাবি। লক্ষ্য বাস্তবায়নে হিযবুত তাহ্রীর ছাড়াও সরকার ও গণতন্ত্রবিরোধী অন্যান্য উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত। সূত্রগুলো বলছে, দুইপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুসারে কৌশলগত কারণে হিযবুত তাহ্রীর নিজ নামে অন্যথায় ছাত্রশিবিরের ব্যানারেও কাজ করবে। ইতোমধ্যেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিলি করা পোস্টার ও লিফলেটে ‘হিযবুত তাহ্রীর উলাইয়াহ বাংলাদেশের’ ব্যানারে সরকার উৎখাতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটি তাদের পোস্টারে বলেছে, আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণ করে হিযবুত তাহ্রীরের নেতৃত্বে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের নিকট দাবি তুলুন এবং এ দাবিতে রাজপথে নেমে আসুন। গত অন্তত ১০ দিন ধরে রাতের আঁধারে রাজধানীতে পোস্টারিং করেছে দলটি। কয়েকটি পোস্টারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপিকেও প্রত্যাখ্যান করে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা ‘খিলাফত’ কায়েমের আহ্বান জানানো হয়। রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদের সামনে ছাড়াও শিবির ও হিযবুত তাহ্রীরের প্রভাবিত হোস্টেল ও আবাসিক এলাকায় পোস্টার দেখা যাচ্ছে। ‘হাসিনা-খালেদা নিপাত যাক’ সেøাগানসংবলিত পোস্টার সাঁটানো হয়েছে অনেক অলিগলিতে। যেসব পোস্টারে ‘খিলাফত’ কায়েমের আহ্বান জানানো হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা নেয়ার আহ্বান জানিয়েও প্রচারণা চালাচ্ছে উগ্রবাদী এ গোষ্ঠী। রাজধানীর বিশেষ কয়েকটি স্থানে নিয়মিত হিযবুত তাহ্রীরের পোস্টার লাগানো হয়। এ সব স্থানের মধ্যে ঢাকা সিটি কলেজের উল্টোপাশে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সায়েন্স ল্যাব) প্রাচীর, সংসদ ভবনের আশপাশের এলাকা, ইন্দিরা রোড, কাঁটাবন জামে মসজিদ এলাকা, ফার্মগেটের পূর্ব রাজাবাজার এলাকা, পান্থপথ, কমলাপুর ও মতিঝিলের আশপাশের বেশ কয়েকটি স্থানে নিয়মিত পোস্টারিং করছে সংগঠনটি। তবে এসব এলাকায় কে বা কারা কখন পোস্টারিং করে তা স্থানীয়রা বলতে পারছেন না। সিটি কলেজের সামনে এক চায়ের ব্যবসায়ী বলছিলেন, প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমার দোকান খোলা থাকে। এ সময়ের মধ্যে এই রোডে অনেকেই পোস্টার লাগায়। কিন্তু হিযবুত তাহ্রীরের এই পোস্টারগুলো আমি কাউকে লাগাতে দেখিনি। হঠাৎ একদিন দোকান খোলার সময় দেখি পোস্টারগুলো লাগানো হয়েছে। অনেক রাতে লাগিয়ে যায় মনে হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের জঙ্গীরূপে চালানো নাশকতার মধ্যেই হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে ছাত্রশিবির একাকার হয়ে কাজ করছে। অস্থিরতার সুযোগে জঙ্গী তৎপরতা বৃদ্ধি ছাড়াও সরকারকে সঙ্কটে ফেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিকে অনিশ্চিত করে ফেলতে কাজ করছে তারা। নাশকতার পক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানসহ দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের বর্তমান অবস্থানকে সহায়ক মনে করছে জামায়াত, শিবির, হিযবুত তাহ্রীরসহ উগ্রবাদী সংগঠনগুলো। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে কয়েক দফা বৈঠক করেই হিযবুত তাহ্রীর জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে এককাট্টা হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সূত্রগুলো বলছে। কাঁটাবনের একটি ভবনে হয়েছে গোপান এ বৈঠক। এই বৈঠকেই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে জামায়েত ও শিবিরের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। কাঁটাবনের ওই ভবনে আছে জামায়াতের একটি সংগঠনের অফিস। ধর্মের নাম ব্যবহার করে চললেও এ সংগঠনের শীর্ষ পদেও আছেন জামায়াতের এক মজলিশে শূরার সদস্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ সরকারের জঙ্গীবাদবিরোধী অবস্থানের প্রেক্ষাপটেই মূলত এই ঐক্য বলে সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। ঐ বৈঠকে একই সঙ্গে জামায়াতের দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচীতে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ হওয়ায় কৌশলগত অনেক ক্ষেত্রে জামায়েত অথবা শিবিরের ব্যানারে কাজ করবে হিযবুত তাহ্রীর। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুুটি সংগঠনের প্রধান ঘাঁটি থাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন, চট্টগ্রাম, ইসলামী, শাহাজালাল, রাজশাহী, বুয়েট, এশিয়ান, মানারাত, সাউথ ইস্ট, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলবে নিয়মিত বৈঠক। অভিযোগ আছে, অন্তত ২০টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় মালিক পক্ষ সরাসরি মূলত এদেরই পৃষ্ঠপোষক। ওই বৈঠকের পরিকল্পনা মতো ইতোধ্যেই নাম পরিবর্তন করে কাজ শুরু করেছে হিযবুত তাহ্রীর। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিলি করা পোস্টার ও লিফলেটে ‘হিযবুত তাহ্রীর উলাইয়াহ বাংলাদেশের’ ব্যানারে সরকার উৎখাতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এদিকে জামায়াতের সকল গণসংযোগ কর্মসূচীর নামে ধর্ম নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সরকারকে সঙ্কটে ফেলার কৌশল নিয়েছে জামায়াত, শিবির ও হিযবুত তাহ্রীর। জানা গেছে, দেশে ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ অসংখ্য সংগঠন থাকলেও সকল সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যিালয়ে কমিটি আছে কেবল এ দু’টি সংগঠনেরই। ৩৩টি পাবলিক ও ৮১টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েই গোপনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কাজ করছে শিবির। তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে হিযবুত তাহ্রীরের অবস্থান সবচেয়ে শক্ত। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন সময় আলাদা আলাদাভাবে কাজ করলেও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এরা এখন একসঙ্গে কাজ করছে। হিযবুত তাহ্রীরের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষক। জামায়াতের শীর্ষ কয়েক নেতা পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছেন। এ পর্যন্ত হিযবুত তাহ্রীর প্রকাশ করেছে ২৪টির মতো বই। ঢাকায় রয়েছে ১০টিরও বেশি পাঠচক্র। আছে ১০ হাজারের ওপর সক্রিয় কর্মী। বর্তমানে বিশ্বে ৯৫টি দেশে রয়েছে হিযবুত তাহ্রীর। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ ২২টি দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে সংগঠনটি। হিযবুত তাহ্রীরের ছাত্র সংগঠন ছাত্র মুক্তির সূত্রগুলো বলছে, পৃথিবীর যেসব দেশে হিযবুত তাহ্রীর নিষিদ্ধ সেখানেও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছ তারা। তাই বাংলাদেশেও হিযবুত তাহ্রীরের কর্মকা- থেমে নেই। হিযবুত তাহ্রীর প্রচার চালাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজগুলোতেও। এদিকে বিএনপির নাশকতামূলক অবস্থানের সুযোগে উগ্রবাদীদের কর্মকা-ের বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে প্রশাসন সতর্ক না থাকলে উগ্রবাদীদের কারণে বড় ধরনের সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। অনেকেই বলছেন, এই মুহূর্তে হিযবুত তাহ্রীর, জামায়াত আর খালেদা জিয়ার অবস্থানের কোন তফাত নেই। তিন পক্ষই চায় সরকারকে ফেলে দিতে। বিএনপি নির্বাচনের কথা ভাবলেও জামায়াতের টার্গেট যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যাক্রমকে অনিশ্চিত করে তোলা। তাকে সরকারকে অকার্যকর করে তুলতে চায় যে কোনভাবে। তবে হিযবুত তাহ্রীরের সর্বশেষ প্রচারণা উদ্বেগজনক নয় বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার পরেও নিষিদ্ধ এ সংগঠনটির সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, হিযবুত তাহ্রীরের মাধ্যমে বিশেষ গোষ্ঠীর কাজ করার বিষয়ে তারা সজাগ আছেন। পোস্টারও উদ্বেগজনক কিছু না। এ সংগঠনটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের কর্মকা-ে জড়িত। তারা সব সময় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকা-ের সমালোচনার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। সম্প্রতি হিযবুত তাহ্রীরের পোস্টারের ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে যাতে কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। নিষিদ্ধ দলগুলোর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।
×