ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি-জামায়াত চক্রের নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপি-জামায়াত চক্রের নৃশংসতার বিরুদ্ধে  সোচ্চার হোন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভ্যন্তরীণ পানিসম্পদ রক্ষা, নৌপথের নিরাপত্তা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের অপরাধ দমনে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশের বিশাল সমুদ্রসম্পদের যথাযথ আহরণ ও সংরক্ষণের পাশাপাশি এর সর্বোচ্চ ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যে দেশ তার সমুদ্রসম্পদ যত সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম সে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তত দ্রুত এগিয়ে যায়। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ উন্নয়ন চায়। তারা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় এবং সমৃদ্ধ জীবনের স্বপ্ন দেখে। বর্তমান সরকার জনগণের এই প্রত্যাশা পূরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত চক্র দেশকে পেছনের দিকে ঠেলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নির্মমভাবে নিরপরাধ মানুষ এমনকি শিশুদেরও হত্যা করছে। তারা জাতির ভবিষ্যত বিনষ্ট করতে সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস করছে। তিনি এই নিষ্ঠুরতা ও নৃশংতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী রবিবার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদর দফতরে এর ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন ও ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে এ কথা বলেন। তিনি কোস্টগার্ড সদস্যদের ‘সাগরে অভিভাবক’ (গার্ডিয়ান এ্যাট সি) মূলমন্ত্র এবং ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই স্বীকৃতি এ বাহিনীর সদস্যদের কর্মকা- ও কল্যাণমূলক কাজ এগিয়ে নিতে উৎসাহিত করবে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল মকবুল হুসাইনের কাছে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা সাহসিকতা ও অসামান্য কর্মকা-ের জন্য কোস্টগার্ডের ৩৫ কর্মকর্তা ও নাবিককে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পদক, প্রেসিডেন্ট কোস্টগার্ড পদক, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড (সেবা) পদক ও প্রেসিডেন্ট কোস্টগার্ড (সেবা) পদক প্রদান করেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, কূটনীতিক এবং জ্যেষ্ঠ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ পেশাদারী অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার পাশাপাশি দেশের মৎস্য ও উপকূলীয় বনসম্পদ রক্ষা, মাদক চোরাচালান রোধে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে কোস্টগার্ডকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কোস্টগার্ডের প্রধান কার্যালয় চত্বরে একটি ফলদ বৃক্ষের চারা রোপণ করেন ও কেক কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গোপসাগর হচ্ছে অঢেল সম্পদের ভা-ার। প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় সমুদ্র সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার সম্প্রসারিত হয়েছে। তিনি বলেন, এ সম্পদ রক্ষা করতে কোস্টগার্ডকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ৬ দফায় তখনকার পাকিস্তানী শাসকদের নৌবাহিনীর সদর দফতর পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছিলেন। কারণ বঙ্গবন্ধু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমুদ্রের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সাগরের ব্যাপক সম্ভাবনা বিবেচনা করে সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৭৪ সালে ‘টেরিটরিয়াল ওয়াটার এ্যান্ড মেরিটাইম এ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেছিলেন। এই আইনের সারাংশই ১৯৮২ সালের প্রথম আন্তর্জাতিক মেরিটাইম কনভেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ও বিদেশে বছরের পর বছর ধরে কোস্টগার্ডের সাফল্য প্রশংসিত হচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙ্গরে বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর নিরাপত্তায় কোস্টগার্ডের নিরাপত্তা পরিষেবা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সুনাম কুড়িয়েছে। এই বাহিনী এখন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। কোস্টগার্ড সুন্দরবন অঞ্চলে জলদস্যুতা প্রতিরোধ, মাদকবিরোধী অভিযান, জাটকা ও রেণু শিকার বন্ধের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই বাহিনী পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দরের নিরাপত্তায়ও ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার কোস্টগার্ডের কর্মকা- বাড়াতে চায়। এ লক্ষ্যে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। এই বাহিনীর সদস্যদের তাদের দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও সততার মাধ্যমে অর্জিত আস্থা অটুট রাখতে হবে। কোস্টগার্ড উন্নয়ন লক্ষ্য-২০৩০ বাস্তবায়নে সরকারের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই পরিকল্পনার আওতায় হাই স্পিডবোট ক্রয় এবং অনেক নতুন স্টেশন স্থাপিত হয়েছে। নতুন জনবল নিয়োগ হয়েছে এবং অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। তিনি বলেন, এই বাহিনীতে চারটি অফশোর পেট্রোল ভ্যাসেল এবং চারটি ইনশোর পেট্রোল ভ্যাসেল যুক্ত হবে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসনের ব্যবস্থা করার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
×