ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চক্রান্তকারীদের ৩ জন গ্রেফতার

বিএনপি জামায়াতের টার্গেট সাবমেরিন কেবল

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপি জামায়াতের টার্গেট সাবমেরিন কেবল

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে ঘুমন্ত যাত্রীদের ওপর পেট্রোলবোমা মেরে হত্যা করার পর বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গীরা এবার টার্গেট করেছে সাবমেরিন কেবলকে। ভয়ঙ্কর জঙ্গী ছালামত উল্লাহর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের কতিপয় নেতার গোপন বৈঠকের মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের রাজস্ব আয়ের এ বিশাল সেবা খাত কক্সবাজারের সাবমেরিন কেবলের ওপর কুনজর দিয়েছে সহিংস হামলাকারীরা। যে কোন মুহূর্তে সাবমেরিন কেবলের তার কেটে দিয়ে ১৩টি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে ওইসব দুর্বৃত্তরা। সূত্র মতে, দুর্দান্ত রোহিঙ্গা জঙ্গী ছালামতসহ কয়েক জঙ্গী নাশকতা ও সহিংস হামলায় লাদেন স্টাইলে কাজ করে থাকে। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে জঙ্গী ছালামতসহ তার সহযোগীরা মাত্র ৪ ঘণ্টায় রামুর ১২টি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার জালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এবার বিএনপি-জামায়াত চক্র সাবমেরিন কেবল (অপটিক্যাল ফাইবার) লাইন কেটে ফেলা ও স্থাপনায় হামলার টার্গেট বাস্তবায়নে গোপনে মাঠে নেমেছে। সাবমেরিন কেবলের সংযোগ কেটে দিয়ে এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের প্রায় ১৩টি দেশের ১৫টি ল্যান্ডিং পয়েন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করছে তারা। নাশকতাকারী চক্রটি নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবার খাত থেকে প্রায় ১২৩ কোটি টাকার আয় থেকেও বঞ্চিত করার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে সাবমেরিন কেবল লাইন সুরক্ষার জন্য পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা। তিনি জানান, ইতোমধ্যে সাবমেরিন কেবল লাইন কেটে ফেলার বড় ধরনের একটি পরিকল্পনা নস্যাত করে বিএনপি-জামায়াতের ৩ জনকে আটকও করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত অন্তত ৩৫ চক্রান্তকারীর বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সূত্র মতে, বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা দিতে সরকার ২০০৬ সালের ২১ মে কক্সবাজার শহরের আলীর জাহাল এলাকায় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনটি চালু করে। সূত্র জানায়, কক্সবাজারের কলাতলি, আলীর জাহাল ঝিলংজা ল্যান্ডিং স্টেশন হয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কলাতলি পয়েন্টে সংযোগস্থল, খরুলিয়া, রামু বাইপাস মোড়, ঈদগাঁও মেহের ঘোনা, ইসলামপুর জুমের ব্রিজ, ফুলছড়ি নতুন অফিস বাজারের উত্তর পাশ, ফুলছড়ি দরগা গেট, মেধাকচ্ছপিয়া ঢালা, মালুমঘাট ঢালা, বানিয়ারছড়া, হারবাং, আজিজনগর, লোহাগাড়া, পটিয়াসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে সাবমেরিন কেবল (অপটিক্যাল ফাইবার) সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য চেষ্টা করছে নাশকতাকারী। উল্লিখিত জায়গাসমূহে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল। সূত্রে প্রকাশ, ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার হারবাং বা এর আশপাশের কোন নির্জন পয়েন্টে সাবমেরিন কেবল (অপটিক্যাল ফাইবার) লাইন কেটে বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর চেষ্টা চলছে। এমন খবরের ভিত্তিতে অভিযানে নামে চকরিয়া থানা পুলিশ। নাশকতার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার সকালে চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আলম, পৌরসভার ফুলতলা গ্রামের মাওলানা জামাল উদ্দিনের পুত্র ও জামায়াত নেতা ছরওয়ার আলম এবং বিএনপির কর্মী সোসাইটিপাড়ার কবির আহমদের পুত্র মোহাম্মদ জুবায়েরকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিএনপি-জামায়াতের ১৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে এসআই মোঃ আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেছে। তবে ওই মামলায় আরএসও ক্যাডার রোহিঙ্গা জঙ্গীদের কাউকে আসামি না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। রুজুকৃত মামলায় তালিকাভুক্ত আসামিরা সাবমেরিন কেবল কেটে দেয়ার পরিকল্পনায় অংশ নেয়ার পাশাপাশি মহাসড়কের ইসলামনগর এলাকায় যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস ভাংচুর করেছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিজ্ঞ মহল জানান, তাদের মূল পরিকল্পনা ছিল, সাবমেরিন কেবলের সংযোগ কাটা হলে এটি মেরামতের জন্য দীর্ঘ সময় লাগবে। বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হবে ইন্টারনেট সেবার গ্রাহকদের। তবে কোন কারণে সাবমেরিন কেবল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও বিকল্প ব্যবস্থায় ইন্টারনেট সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আইটিসির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। আইটিসি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করছে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) বা অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের কাছে। প্রতিষ্ঠানগুলো স্থলভাগ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের বিকল্প সংযোগ ব্যবস্থা তৈরি করেছে। ভারতের স্থলভাগ দিয়ে মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে একাধিক সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে এ সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নাশকতা সৃষ্টিকারীরা বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় ব্যস্ত আছে। তাদের দমন করতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে রয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে বিভিন্ন সংস্থার এসব সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
×