ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক ॥ গা-ঢাকা দিচ্ছে অপরাধীরা

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক ॥ গা-ঢাকা দিচ্ছে অপরাধীরা

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশের ৬৪ জেলায় বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার, গোয়েন্দা সংস্থাসহ লক্ষাধিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন, টহল, তল্লাশি, গ্রেফতার অভিযানসহ অতিমাত্রায় তৎপরতার কারণে গা-ঢাকা দিচ্ছে সব ধরনের অপরাধী। এ যেন অনেকটা ‘শাপে বর হওয়ার’ মতো ঘটনা। অবরোধ-হরতালের পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার রাজনৈতিক অপরাধের ঘটনা দমন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিমাত্রায় তৎপরতায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুনখারাবি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, মাদক ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধ কমে আসছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। তবে অতীতের মতো এখন আবার পুলিশের কিছু সুযোগ সন্ধানী অসৎ, দুর্নীতিবাজ সদস্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নির্দোষ নিরপরাধ মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা আদায় ও উৎকোচ গ্রহণ করছে বলে অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে চলতি মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত ৪০ দিন ধরে অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার তা-ব চালাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট। দীর্ঘ ৪০ দিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা করে ডিউটি করতে হচ্ছে। পালাক্রমে মোতায়েন, টহল, তল্লাশি, গ্রেফতার অভিযান, নিয়মিত রুটিন কাজসহ সকল কাজ করছে তারা। পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসীদের চিহ্নিতকরণ ও তৎপরতা দমন করতে গিয়ে সড়ক, মহাসড়ক থেকে শুরু করে পাড়া, মহল্লা, ওয়ার্ড এলাকায় পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এতে মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ এমনকি ছিঁচকে চোর পর্যন্ত সতর্ক হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ঘটনা কমে আসতে শুরু করেছে। পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পেট্রোলবোমায় পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাসী ঘটনা এবং এর সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তদের তা-ব ও তৎপরতা উভয়ই কমে এসেছে। এই ধরনের অপরাধ হয়তো শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভবপর না হলেও আশানুরূপ পর্যায়ে দমন করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা জানান, দেশের বিভিন্নস্থানে আগে যেখানে এক ডজন থেকে দেড় ডজন পেট্রোলবোমা, বোমাবাজি, ভাংচুরের সহিংস সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটতো এখন সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে চোরাগোপ্তা হামলায় হাতেগোনা দু’একটি ঘটনা ঘটছে। আগে পেট্রোলবোমায় পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাসের যে ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা ছিল তা এখন অনেকটাই অনুপস্থিত। সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপকসংখ্যক দিনে-রাতে ডিউটি দিচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ, জিম্মিকরণ, প্রতারণা, মাদক ব্যবসা, অজ্ঞান পার্টি, মলমপার্টিসহ নানা ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেই ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চ্যালেঞ্জ করে অনেকেই বন্ধুকযুদ্ধে মারা যাওয়ায় দুর্বৃত্ত ও অপরাধীদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। টাকা পয়সা দিয়েও পেশাদার দুর্বৃত্ত, অপরাধী এমনকি রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদেরও মাঠে নামানো যাচ্ছে না। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মৃত্যু ভয় কার না আছে? ছাত্রদল, যুবদল, শিবির ক্যাডার মৃত্যু ভয়ে প্রকাশ্যে আসছে না। চোরাগোপ্তা হামলা চালানোর সময়ে ধরা পড়লে তো কথাই নেই, এমনকি পরবর্তীতে এলাকাবাসীর কাছ থেকে যদি পরিচয় পাওয়া যায় তাহলে ধরে এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হতে পারে। এই জন্যই হয়তোবা দুর্বৃত্ত, অপরাধী ও রাজনৈতিক দলের সশস্র ক্যাডাররা গা-ঢাকা দিয়েছে। মৃত্যু ভয় তাড়া করায় এখন আর টাকা পয়সা দিয়েও ভাড়াটিয়া দুর্বৃত্ত, সন্ত্রাসী পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ সদর দফতরের মোঃ মকবুল হোসেন ভুইয়া জানিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে গত ৪০ দিন প্রায় ১৮ ঘণ্টা পালাক্রমে ডিউটি করে অপরাধী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হিসাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সন্ত্রাসী, অপরাধী, দুর্বৃত্ত ও জঙ্গীদের কাছে আত্মসমর্পণ বা নতি স্বীকার করার উপায় নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যে কোন মূল্যে দেশকে অপরাধমুক্ত করার দায়িত্ব পালন করতে হবেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্য যদি কোন অপরাধ তৎপরতায় যুক্ত হওয়ার ঘটনায় প্রমাণিত হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বলে তার কৃত অপরাধের ক্ষমা নেই, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিসি মোঃ মাসুদুর রহমান বলেছেন, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার মুখে পেট্রোলবোমায় পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধী, দুর্বৃত্তরা গা-ঢাকা দিয়েছে। এতে সব ধরনের অপরাধের ঘটনা কমে এসেছে এবং ক্রমেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে।
×