ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার অফিসের সামনে প্রতীকী লাশ নিয়ে বিক্ষোভ এক এমপির

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

খালেদার অফিসের সামনে প্রতীকী  লাশ নিয়ে  বিক্ষোভ এক  এমপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হরতাল অবরোধের নামে নাশকতার প্রতিবাদে এবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কর্যালয়ের সামন্যে প্রতীকী লাশ নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সরকার দলীয় এক সংসদ সদস্য। শনিবার দুপুর পৌনে দুটোর দিকে চারটি ট্রাকে অর্ধশতাধিক লোক নিয়ে খালেদার কার্যালয়ের পাশে ৮৬ নম্বর রোডের প্রবেশমুখে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন চট্টগ্রামের সাংসদ এম এ লতিফ। এ সমাবেশে একটি ট্রাকে ১৪ ‘প্রতীকী লাশ’ এবং অন্য ট্রাকে পেট্রোলবোমা নাশকতায় প্রতীকী দগ্ধদের বিক্ষোভ দেখানো হয়। অন্য দুটি ট্রাকে প্রতিবাদী লোকজন হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে সেøাগান দেন। প্রতীকী এ প্রতিবাদ কর্মসূচীতে জীবন আগে, গণতন্ত্র পরে, সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করো, পোড়ার যন্ত্রণায় গণতন্ত্র হাসপাতালে, বন্ধ করো বন্ধ করো মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করো, পোড়া মাটি নীতি কেন খালেদা জিয়া জবাব চাই’, ‘পেট্রোলবোমা বন্ধ করো’, ‘বোমা না কলম, কলম, কলম’ প্রভৃতি প্রতিবাদী ভাষায় লেখা প্লাকার্ড সবার হাতে শোভা পায়। বিক্ষোভকারীরা এ সময় মিছিল নিয়ে বেগম জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে যেতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। বাধা পেয়ে ৮৬ নম্বর রোডের মাথায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। এ প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সরকার দলীয় সাংসদ এম এ লতিফ খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে তিনি কীভাবে নাশকতা করে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা প্রত্যক্ষ করছেন। সাধারণ মানুষকে কেন পেট্রোলবোমা মারছেন। হরতাল জনগণের ওপর হায়েনাদের লেলিয়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকছেন। গণহত্যা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনিও তো একজন মা। কিছুদিন আগে নিজের ছেলে মারা গেছেন। পেট্রোলবোমা মেরে আরেক মায়ের কোল খালি করার আহাজারি কীভাবে সহ্য করবেন? গণতান্ত্রিক দলের নেত্রী হয়ে থাকলে বেগম জিয়ার উচিত হবে, গণহত্যা থেকে সরে আসা। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন, জনগণ চাইলে আবারও ক্ষমতায় আসবেন। সে জন্য জনগণ, দেশ ও অর্থনীতিবান্ধব কর্মসূচী দিতে বিএনপি প্রধানের প্রতি আহ্বান তিনি। এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে এই প্রতীকী মিছিল নিয়ে বের হন এমএ লতিফ। এ সময় তিনি বলেন, দেশের মানুষ হিসেবে বিবেকের তাড়নায় চলমান নাশকতা বন্ধে প্রতীকী কর্মসূচী আয়োজন করা হয়েছে। এসব কর্মকা- বন্ধ করার জন্য তার প্রতি অনেকবার আহ্বান জানানো হয়েছে। তারপরও তিনি কর্ণপাত করছেন না। প্রতিদিন আমরা খবরের কাগজ ও টেলিভিশন খুলেই দেখি মানুষের লাশ আর দগ্ধ মানুষের আর্তনাত এ দেশের নাগরিক হয়ে এসব দেখে আমরা নীরবে বসে থাকতে পারি না। এদিকে প্রতীকী লাশ নিয়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি বেগম জিয়ার কার্যালয়ের সামনে হরতাল বিরোধী মিছিল করেছে কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহী। শনিবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে মিছিলকারীরা মোটরসাইকেলযোগে হরতালবিরোধী সেøাগান দিতে দিতে কার্যালয়ের সামনের ৮৬ নম্বর সড়কে আসেন। এ সময় তারা সড়কের উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে, দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে চক্কর দেন। গুলশান কার্যালয়ে খাবার প্রবেশে বাধার অভিযোগ ॥ এদিকে শনিবার বেগম জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে খাবার প্রবেশে বাধার অভিযোগ করেছে বিএনপি। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় শনিবার দুপুর ১২টার দিকে কার্যালয়ে অবস্থানরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য খাবার ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সিএনজিচালতি একটি অটোরিকশায় করে বিরিয়ানির প্যাকেট ও পানির বোতল কার্যালয়ের গেটের সামনে আনা হয়। তখন সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা খাবারসহ অটোরিকশাটিকে ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে ফেরত পাঠায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপার্সনের প্রেস ইউংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার বলেন, বুধবার থেকে গুলশান কার্যালয়ে বাইরে থেকে কোন খাবার প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। খাবার প্রবেশের বাধা দেয়ার কারণে ভেতরে অবস্থানরত অভুক্ত অবস্থায় রয়েছে। এদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল হক বলেন, বেগম জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে নিয়মিত খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। বেগম জিয়া সেখানে সুস্থ আছেন। এদিকে বিএনপির অফিস থেকে খাবার প্রবেশের বাধার অভিযোগ করা হলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাঁর কার্যালয়ে নিয়মিত খাবার সরবারাহ করা হচ্ছে। বিশেষ করে আশপাশের বাসা থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার প্রবেশ করছে বলে জানা গেছে। বিএনপি নেত্রীর প্রেস কর্মকর্তা বুধবার রাতে খাবার প্রবেশে প্রথম বাধার অভিযোগ করেন গণমাধ্যমের কাছে। তিনি বলেন, ওইদিন রাতে গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য আনা খাবার গুলশান থানার পুলিশ নিয়ে গেছে। তারপরের দিন তিনি একই অভিযোগ করেন। বলেন, একজন ফাঁসির আসামির জন্য খাবারের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু গুলশান কার্যালয়ে যারা আছেন তারা কেউ বন্দি নন। তবে কেন বাখার প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার খাবার প্রবেশের বাধা দেয়ার পর শুক্রবার রাতে বেগম জিয়ার কার্যালয়ে সবার জন্য রান্নার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এ খবর জানাজানি হবার পর শনিবার আর রান্নার আয়োজন করা হয়নি। তবে আশপাশের বাসা থেকে বিভিন্ন উপায়ে তার কার্যালয়ে খাবার প্রবেশ করছে বলে জানা গেছে। গুলশান কার্যালয়ে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের প্রবেশের চেষ্টা ॥ এদিকে শনিবার বিকেল চারটার দিকে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক শ্যেনওয়া চৌধুরী বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ তাকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়নি।
×