ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

বসন্তের সূচনা সন্ধ্যায় লোকগানের আসর ছায়ানটে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বসন্তের সূচনা সন্ধ্যায় লোকগানের আসর ছায়ানটে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার ছিল ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন পয়লা ফাল্গুন। আর ছুটির দিনে বসন্তের সূচনা সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনে বসেছিল বার্ষিক লোকগানের আসর। সান্ধ্যকালীন এ সঙ্গীতানুষ্ঠানে মাটির গানের সুরে সুরে সিক্ত হয় শ্রোতাকুল। পরিবেশিত হয় লোকগীতি কবি কাঙাল দীনহীন, আরকুম শাহ্, একেএম আবদুল আজিজ, সিরাজুল ইসলাম ও শমসের আলীর গান। আয়োজনের শুরুতেই স্বাগত কথনে অংশ নেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। এরপর সম্মেলক কণ্ঠের পরিবেশনা দিয়ে সঙ্গীতানুষ্ঠানের সূচনা হয়। মোখলেছুর রহমানের কণ্ঠে গীত হয় কাঙাল দীনহীনের গান। দরদভরা শিল্পী গেয়ে শোনান ‘বন্ধুয়া আইলা গো ঘরে’ ও ‘শ্যামরে তোমার সনে’। আরকুম শাহ্্ রচিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন আবুল কালাম আজাদ। গেয়ে শোনান ‘পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ পড়ে’ ও ‘পন্থ ছাড়া যমুনাতে যাই’। এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করেন নারায়ণ চন্দ্র শীল, স্বপ্না রায়, সঞ্চিতা বর্মণ, মোঃ খায়রুল ইসলাম, এরফান হোসেন, নাদিরা বেগম, সরদার মোঃ রহমাতুল্লা ও বিমান চন্দ্র বিশ্বাস। তাদের পরিবেশিত কয়েকটি গানের শিরোনাম ছিল ‘নায়ে বাদাম তুইলা দে ভাই’, ‘মুর্শিদ ডাকি তোমায়’, ‘ওই দূরে বাজে একতারা’, ‘আকাশের ওই নাই সীমানা’, ‘মইষাল কিসের বাদে’, ‘কোকিল আমারে ডালে বইসা’, ‘নবী মোর পরশমণি’ ও ‘হলুদিয়া পাখি সোনার বরণ’। সম্মেলক কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়। গানের এ আসরে তবলায় সঙ্গীত করেন স্বরূপ হোসেন ও অলকেশ অধিকারী, দোতরায় সোলাইমান হোসেন, বাঁশিতে মোঃ হাসান, ঢোলে নজরুল ইসলাম ও মন্দিরা বাজান প্রদীপ কুমার রায়। সামিনা নাফিজের ‘দেশজ শিল্পের পুনর্বয়ন’ ॥ প্রতিশ্রুতিশীল চিত্রশিল্পী সামিনা নাফিজ। ঐতিহ্যের সঙ্গে লোকজ নানা অনুষঙ্গের আশ্রয়ে রাঙিয়ে তোলেন আপন ক্যানভাস। রঙের সঙ্গে বিষয়ের বৈভবে তার চিত্রপটে যুক্ত হয় বিশেষ মাত্রা। শুক্রবার থেকে ধানম-ির গ্যালারি টোয়েন্টিওয়ানে শুরু হলো এই শিল্পীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘দেশজ শিল্পের পুনর্বয়ন’। বসন্ত সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মইনুল আবেদিন ও মালিহা চৌধুরী। সামিনা নাফিজের চিত্রকর্ম দর্শককে পরিচিত বিষয় দেখার সুখানুভূতির পাশাপাশি চেনা বিষয়ের অপ্রচলিত বিন্যাসের উপস্থিতি ভাবিয়ে তোলে। শিল্প রচনায় এ শিল্পী লোককলার নানা অনুষঙ্গ ব্যবহার করেছেন। লোকপুরাণ মনসা, মঙ্গলঘট, পুতুল, ঘোড়া এসব হয়েছে তার ছবির বিষয়। ‘জয় বাংলা’ শীর্ষক চিত্রকর্মে উঠে এসেছে মহানায়কের মুষ্ঠিবদ্ধ হাত। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানচিত্রখচিত সেই পতাকা। এমন ছবির পাশাপাশি মানুষের মুখাবয়ব, বিখ্যাত চিত্রকলা, কাউকে লেখা চিঠি বা বক্তব্য সেঁটে শিল্পী সৃজন করেছেন কোলাজ। সৃজনের ঘোরের ভেতর সামিনা স্মৃতি-বিস্মৃতি ও চাওয়া-পাওয়ার যে বিন্যাস সৃষ্টি করেছেন তাতে চোখে দেখা বাস্তববাদী নিয়মটা যেন সম্পূর্ণ নাকচ হয়ে যায়। শিল্পসত্তার ভেতরের বিষয়গুলো আলোড়িত হয়ে প্রকাশ পেয়েছে নতুন সংহতিতে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে নতুন বর্ণ ও রূপের আবেশ। যেমন শোলার পাখির রঙিন দেহটা টুকরো টুকরো করে অনেক রঙা বর্ণপটভূমিতে জুড়ে দিয়েছেন সামিনা। সব মিলিয়ে লোককলার ভেতর দিয়ে ভিন্নরকম সৃজনশীলতায় উপস্থাপিত হয়েছে শিল্পীর শিল্পকর্ম। পক্ষকালব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। একুশের অনুষ্ঠানমালার ষষ্ঠদিনের আয়োজন ॥ বুকের খুনে যুদ্ধ জারি অমর একুশে ফেব্রুয়ারি সেøাগানে চলছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলমান এ আয়োজনের ষষ্ঠদিন ছিল শুক্রবার। ছুটির দিনের বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সমবেত সঙ্গীত, একক কণ্ঠের গান, দলীয় ও একক আবৃত্তি, নৃত্য পরিবেশনা, শিশুদের পরিবেশনা ও পথনাটকের প্রদর্শনীতে মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নেয় ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, আনন্দন ও গণশিল্পী সংস্থা। একক কণ্ঠে গান শোনান বুলবুল মহলানবীশ, মহাদেব ঘোষাল, অনিকেত আচার্য ও শিমুল সাহা। বৃন্ত আবৃত্তি পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও স্বরকল্পন আবৃত্তি চক্র। নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র। উপস্থাপিত হয় ভিন্নধারার শিশু-কিশোর সংগঠনের পরিবেশনা। পথনাটক পরিবেশন করে বাঙলা নাট্যদল। আর এদিনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ফয়জুল আলম পাপ্্পু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রেজীনা ওয়ালী লীনা ও আক্তার-উজ-জামান। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হবে এ অনুষ্ঠান। আর ১৮ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠান হবে ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে।
×