ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সতর্কবাণী বিজ্ঞানীদের

শতাব্দীর শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে মহাখরা

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শতাব্দীর শেষ নাগাদ  যুক্তরাষ্ট্রে মহাখরা

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলীয় সমতলভূমি এলাকা এমন মহাখরার ঝুঁকির পথে রয়েছে, যা হাজার বছরেও দেখা যায়নি। ক্যালিফোর্নিয়ার মতো অঞ্চল ইতোমধ্যে শুষ্ক আবহাওয়ার মোকাবেলা করছে- তবে এসবই দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ শতাব্দীর কিছু নির্দিষ্ট কালের তুলনায় খুবই মৃদু। বিজ্ঞানীরা এখন আগেকার খরাগুলোকে আগামী দশকগুলোর জলবায়ু পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। খবর বিবিসি, এএফপি ও ওয়াশিংটন পোস্টের। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের রাস টেনে ধরার কোন পদক্ষেপ না নেয়া হলে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য অঞ্চলে ক্রমবর্ধমানভাবে ঘন ঘন দীর্ঘস্থায়ী মহাখরা দেখা দিতে পারে। বৃহস্পতিবার গবেষকরা একথা জানান। বিংশ শতাব্দীতে ইতোমধ্যে যেসব ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছিল, মহাখরা তার সঙ্গে তুলনীয় হলেও এ খরা অনেক দীর্ঘকাল, ৩৫ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি সময় স্থায়ী হতে পারে। সমীক্ষায় এই প্রথমবার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, আসন্ন প্রচ- শুষ্ক আবহাওয়া শত শত বছর আগে সংঘটিত কয়েক দশকব্যাপী স্থায়ী মহাখরাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে কিছু সভ্যতার বিলুপ্তির জন্য ওইসব মহাখরাকে দায়ী করা হয়ে থাকে। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথিবী ও বায়ুম- বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সমীক্ষার যুগ্ম প্রণেতা টবি আউন্ট বলেন, ‘ভবিষ্যতের আবহাওয়া যে কতটা শুষ্ক হবে তা ভেবে আমি সত্যিই বিস্মিত।’ ‘আমি ভবিষ্যতের এসব মহাখরাকে ধীরগতির প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখি। আমাদের মহাখরাগুলোকে অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতোই একই শ্রেণীভুক্ত করতে হবে যাতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে সেগুলোর মোকাবেলা করা যায়। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে যেন যে, জনসংখ্যার বিশালতা এবং পানি সম্পদের ওপর অধিকতর নির্ভরশীলতার কারণে বর্তমানে ঝুঁকি ও বিপদ অনেক বেশি। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউটের অংশ্র ল্যামন্ট ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরির জলবায়ু বিজ্ঞানী ও সমীক্ষার একজন সহ প্রণেতা জ্যাসন স্পার্ডন বলেন, ‘আমরাই প্রথম উপস্থাপিত তথ্য ও সুদূর অতীতের মধ্যে এ ধরনের গুণগত তুলনার কাজ করেছি এবং এ কাহিনী বেশ নৈরাশ্যজনক।’ গবেষকরা মেক্সিকো থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা পর্যন্ত প্রসারিত অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার ভবিষ্যত অভিঘাত বিশ্লেষণের জন্য ১৭টি ভিন্ন জলবায়ু মডেল প্রয়োগ করেন। তারা বিশ্বের উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রীনহাউস গ্যাসের অব্যাহত বৃদ্ধির বিষয় উপস্থাপন করেন এবং এ ধরনের একটি ঘটনা পরম্পরার প্রতি দৃষ্টি দেন যেখানে গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এই গ্যাসের নিঃসরণ কমে গেছে। দুটি দৃষ্টিভঙ্গিই ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। আরাকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওসায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড স্টাইল বলেন, ‘এর ফলাফল বর্তমানে বিস্তীর্ণ সমতলভূমি অঞ্চল (গ্রেট প্লেইনস) ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত কৃষি ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রতিকূল।’ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চল গত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছরই খরা পরিস্থিতির মোকাবেলা করে আসছে। ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাদা, নিউ মেক্সিকো, এ্যারিজোনা, টেক্সাস, ওকলাহোমা এবং সন্নিহিত অন্যান্য অঞ্চল শুষ্ক এলাকার অন্তর্ভুক্ত এবং ৬ কোটি ৪০ লাখ বেশি লোক খরা পরিস্থিতির শিকার। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান গতি অব্যাহত থাকলে এখন থেকে ৩৫ বছর পরে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলো আবহাওয়ার এমন অবস্থান পরিবর্তনের মুখোমুখি হবে যা তিন দশক স্থায়ী হতে পারে। ভূ-বিজ্ঞানী ও সায়েন্স সাময়িকীর প্রধান সম্পাদক মার্সিয়া কেম্পার ম্যাকনাট বলেন, ‘আমরা কিছু উত্তেজনাপূর্ণ, রোমঞ্চকর ও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণালব্ধ ফলাফল পেয়েছি। ‘আমরা এমন এক পানির সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছি, ১২০০ বছরের মধ্যে ক্যালিফোনিয়ায় যা দেখা যায়নি।’
×