ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় ‘নামগোত্রহীন মান্টোর মেয়েরা’ মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শিল্পকলায় ‘নামগোত্রহীন মান্টোর মেয়েরা’ মঞ্চস্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার নাট্যমঞ্চে ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘নাম-গোত্রহীন মান্টোর মেয়েরা’। উর্দু গল্পকার সাদাত হোসেন মান্টো, ভারতের খ্যাতনামা নির্দেশক-অভিনেত্রী ঊষা গাঙ্গুলী আর বাংলাদেশের অন্যতম নাট্যদল নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের মিলিত রূপ এ নাটকটি। নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের ৪৪তম প্রযোজনায় নাটকটির ষষ্ঠতম মঞ্চায়ন হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। নাটকের শুরুতে পর্দা উঠতেই দেখা যায়, মঞ্চের পেছনজুড়ে কালো রং আর তার গায়ে গায়ে লেপ্টে আছে রুপালি আভা। কেন্দ্র থেকে তিন জোড়া ডানা যেন উড়ে যেতে প্রস্তুত আকাশপানে, চারপাশ তার কাঁটাতারে ঘেরা। এ যেন তিন পাখি, তিন প্রাণ, উল্টো করে রাখা তিনটি সালোয়ার। মনে হয় তিনটি দেশ ঘনিষ্ঠ হওয়ার অবকাশ খুঁজে নিয়েছে এক নিষ্ঠুর জমিনে। ঊষা গাঙ্গুলী এই মঞ্চে সাদাত হোসেন মান্টোর তিনটি গল্পের নাট্যরূপায়ণের মাধ্যমে তিন সাধারণ নারী চরিত্র সুলতানা, নীতি ও সুগন্ধীকে খোঁজ করেছেন, যারা কোন একটি নির্দিষ্ট দেশের নয়, সারা পৃথিবীর। জীবনে সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মানুষ পরিচয়ে অতি সাধারণভাবেই বাঁচতে চেয়েও যারা প্রচলিত সুবিধাবাদী ব্যক্তি, ভোগবাদী সমাজ ও দায়িত্বহীন রাষ্ট্রের কবলে পড়ে যৌনকর্মীর সনদ পায়, বিনিময়ে সবকিছু দিয়ে একাকিত্বের যন্ত্রণা নিয়ে জীবিত লাশ হয়ে বেঁচে থাকে শুধু, সেই ভূলুণ্ঠিত মানবিকতার প্রান্তিক গল্প বলেছেন মান্টো, এঁকেছেন ঊষা আর ক্যানভাস মেলে ধরেছে নাগরিক। ‘কালি সেলোয়ার’ গল্পে সুলতানা চরিত্রে প্রাঞ্জল অভিনেত্রী অপি করিমের চমৎকার জুড়ি মিলেছে খোদাবক্স চরিত্রে পান্থ শাহরিয়ার ও শংকর চরিত্রে রাজীব দের। সুলতানা একজন দেহোপজীবী। পাকিস্তানের আমবালা থেকে দিল্লীতে চলে আসা খোদাবক্সের সঙ্গ তাকে ঠেলে দেয় অন্ধকার জগতে। দুনিয়ার সবার ইচ্ছাই খোদা পূরণ করে, কিন্তু তার ইচ্ছাই কেন অপূর্ণ থাকবে-অভূক্ত সুলতানার এমন খেদোক্তি মনে করিয়ে দেয় সভ্যতার অন্তরালে এখনও কতটা অসহায় একজন নিগৃহিত নারী। সুলতানার খদ্দের শংকর মিথ্যা প্রেমের ফাঁদ পেতে হাতিয়ে নেয় সুলতানার মায়ের স্মৃতিস্বরূপ দুলজোড়া। সুলতানার বড় শখের কালো সালোয়ার হয়ত এনে দেয় সে, কিন্তু বিনিময়ে সে প্রেমের নামে ছল করে সুলতানার সঙ্গে। সুলতানা বুঝতে পারে, এভাবেই হয়ত খোদাবক্স আর শংকরদের পুতুল হয়েই বেঁচে থাকতে হবে তাকে। নিজেকে বিক্রি করে খোদাবক্সদের অন্ন যুগিয়ে যাবে সে। ‘লাইসেন্স’ গল্পে নীতি চরিত্রে শ্রেয়া সর্বজয়া ও আবদুল চরিত্রে মোস্তাফিজ শাহীনের তারুণ্যময় উপস্থিতির সঙ্গে গল্পের প্রবহমান গভীরতা স্পর্শ করে যায় স্বামীর হাজতবাস ও মৃত্যুর পর বিধবা নীতির বেঁচে থাকার সংগ্রামের মনোবল হাহাকারে পরিণত হয়। শহর কমিটি নীতিকে রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি চালানোর অনুমোদন দেয় না নারী বলে, কিন্তু যৌনকর্মীর সনদ হাতে ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে স্বামীর স্মৃতিবাহী ঘোড়াগুলো বেচে দেয় নীতি। নিজেও হারিয়ে যায় অন্ধগলির পাঁকে। নাটকের শেষ গল্পে দর্শকের চোখ ও মন স্থির হয় ‘হাদাক’ গল্পের সুগন্ধী চরিত্রে সারা যাকেরের অভিনয়ে। মুম্বাইয়ের যৌনপল্লীর গল্প নিয়ে আবর্তিত এ কাহিনীতে দেখা যায় গতযৌবনা সুগন্ধীর বেঁচে থাকার লড়াই। রূপযৌবন হারিয়ে সুগন্ধী খদ্দের খুঁজে পায় না। সুলতানার মতো সুগন্ধীও প্রেমের নামে প্রতারিত হয়। সুগন্ধীর খদ্দের মাধব নামের হাবিলদারটি তাকে মিথ্যা প্রেমের প্রলোভন দেখায়। শহরের দারোগাটিও তাকে ঠকায়। ঠকতে ঠকতে একদিন নিজের নারীসত্ত্বা অনুধাবন করতে পারে সুগন্ধী। তার কণ্ঠনিঃসৃত বাক্য প্রতিধ্বনি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে, ‘ওর সামনে দাঁড়াতাম, সমস্ত কাপড় ছিঁড়ে ওর সামনে দাঁড়াতাম আর বলতাম, যা যা চাইছিস সব নিয়ে যা। কিন্তু যেটা আমার ভেতরের, যেটা আমি, সেটা তুই তো কি, তোর বাপও কিনতে পারবে না।’ ‘বাংলাদেশের নৌকা’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশনা ॥ বাংলাদেশের নদী ও তার চারপাশের প্রান্তিক মানুষদের জীবন-জীবিকা ও আলোকচিত্র সম্বলিত গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের নৌকা’ প্রকাশিত হয় গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার বিকেলে। গ্রন্থটি রচনা ও আলোকচিত্র ধারণ করেছেন আলোকচিত্রী এমএ তাহের। বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস আয়োজিত গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার সন্দীপ চক্রবর্তী, চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ, গ্রিন ডেল্টা ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের উপদেষ্টা নাসির এ চৌধুরী ও গ্রন্থটির লেখক আলোকচিত্রী এমএ তাহের।
×