ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইনী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন পোশাক ও বস্ত্র ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আইনী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন পোশাক ও  বস্ত্র ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে আইনী পদক্ষেপ নেবেন পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। তার আগে আগামী শনিবার পালন করবেন প্রতীকী অনশন। এ সময়ে সহিংসতা বন্ধ না হলে এরপর ধারাবাহিক কর্মসূচীসহ ব্যাংক লোনের রিপেমেন্ট বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। বুধবার বিকেলে বিজিএমইএ কার্যালয়ে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ‘চলমান সহিংসতার কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থা এবং পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের নেতিবাচক প্রভাব বিষয়ে জরুরী মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচার্স এ্যান্ড এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নীটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচার্স এ্যান্ড এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম, সহ-সভাপতি (অর্থ) রিয়াজ বিন মাহমুদ, সানি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গেলাম কুদ্দুস, বিকেএমইএর সহ-সভাপতি আসলাম ও বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রমুখ। মতবিনিময় সভা শেষে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, চলমান সহিংসতা থেকে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে আগামী শনিবার বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজিএমইএ ভবনের সামনে তাঁরা প্রতীকী অনশন পালন করবেন। তিনি বলেন, সংকট নিরসনে আজ বৃহস্পতিবার পোশাক ও বস্ত্র খাতের সব সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। যে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী বিভিন্ন কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা বা সংলাপে বসার চেষ্টা চালাবে এই কমিটি। এছাড়া ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সব খাতের পক্ষ থেকে রাজনীতিবিদদের চিঠি পাঠানো হবে। এর আগে সভায় হরতাল-অবরোধের ক্ষতির পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, চলমান অবরোধ-হরতালে গত ১ মাসে পোশাক খাতে ৫০ শতাংশ আদেশ বাতিল হয়েছে, যা টাকায় ১০ হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। তিনি জানান, মার্কেটে আমাদের ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। এই খাতে ইতোমধ্যে আমরা ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। আমাদের এই মূলধন আজ হুমকির মুখে। তিনি বলেন, চলমান অবরোধে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ মাত্র ৩১ পরিবারের ব্যবসার জন্য ৫শ’ কোটি টাকার পুনঃতফশিল সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এ সুযোগ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার দাবি জানান তিনি। আইন সবার জন্য সমান উল্লেখ করে বিজিএমইএর এই সহ-সভাপতি বলেন, একদেশে দুই রকমের আইন চলতে পারে না। অনশন কর্মসূচী ও আইনী পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে একাত্মতা পোষণ করে বিটিএমএ সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে এর দায় দেনা আমাদেরকেই পরিশোধ করতে হবে। রাজনীতিবিদরা করবেন না। বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি রাফেজ আলম চৌধুরী বলেন, চলমান সংকট সমাধান না হলে আমরা অনশনে যাব। তাতেও কাজ না হলে যার যার ব্যবসা পতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান করব। কারণ এখন এটা জাতীয় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, এর ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি আইনী প্রক্রিয়া চালু করা উচিত। যেখানে ব্যবসায়ীরা রিটের মাধ্যমে আইনের আশ্রয় নেবে। অনশন কর্মসূচীর সঙ্গে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ প্লাস্টিক এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, হরতাল ও অবরোধের প্রতিবাদে অনশনের ডাক দিলে এ খাতের সবাইকে নিয়ে আমরা এগিয়ে আসব। বাংলাদেশ এক্সপোর্টারস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, শুধু অনশন দিলেই হবে না। ধারাবাহিক কর্মসূচী দিতে হবে। চলমান সংকট নিরসনে দুই নেত্রীর সমঝোতার ব্যবস্থাও করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের উচিত হবে ব্যাংক লোনের রিপেমেন্ট বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখা। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন পোশাক খাতের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কারখানার উদ্যোক্তারা। এ সময় তারা পোশাক খাতকে বাঁচাতে এবং অর্থনৈতিক অচলাবস্থা দূরীকরণে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের মাধ্যমে বর্তমান সংকট সমাধানের আহ্বান জানান। তাই তারা দেশের সব ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানান। এছাড়া প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রতি দল থেকে ৫ জন করে ১০ নিয়ে আলোচনা বসার দাবি জানান তারা। তারা বলেন, ব্যবসানীতি দিয়ে রাজনীতির হরতাল-অবরোধ বন্ধ করা প্রয়োজন। এখন প্রয়োজন এমন কর্মসূচী দেয়া, ওই কর্মসূচীর ফলে যাতে সহিংস রাজনীতিবিদরা অসহায় হয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবেন। প্রয়োজন হলে পোশাক শিল্পকে বাঁচাতে দেশের সব শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচী দেবেন বলেও হুঁশিয়ারি করেন ব্যবসায়ীরা।
×