ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার অধ্যায় শেষ, এখন প্রশ্ন-বাংলাদেশ কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবে

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

খালেদার অধ্যায় শেষ, এখন প্রশ্ন-বাংলাদেশ কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবে

৫ জানুয়ারি থেকে চলমান সন্ত্রাসের নেতৃত্ব দেয়ার ভেতর দিয়ে বেগম জিয়া দেশকে ও তাঁর নেতৃত্বকে যেখানে নিয়ে গেছেন তাতে ইতোমধ্যে তাঁর নেতৃত্বাধীন বিএনপির রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে। বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন কোন রাজনৈতিক দলের বাংলাদেশে আর সুস্থ রাজনীতিতে ফেরার কোন পথ নেই। আর এ ঘটনার ভেতর দিয়ে বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের রাজনীতির অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে অনেক টকার আছেন তাঁরা টেলিভিশনে বেগম জিয়া ও তারেকের পক্ষে অনেক যুক্তি দিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- তারেক ও খালেদার অধ্যায় শেষ। বেগম জিয়া ও তারেক রহমান ব্যক্তিবিশেষ। একটি দেশের জন্য ব্যক্তিবিশেষ কোন বিষয় নয়। এমনকি কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলও কোন বিষয় নয়। যে কোন দেশে যে কোন ব্যক্তি বা যে কোন দলের অধ্যায় শেষ হতে পারে। কিন্তু ওই স্থান শূন্য থাকবে না। যে কোনভাবে পূরণ হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বেগম জিয়া দেশকে কোথায় ঠেলে দিলেন? কেন তাঁর অধ্যায় শেষ হলো? বেগম জিয়া বাংলাদেশকে পুরো জঙ্গী সন্ত্রাসের ভেতর ঠেলে দিয়েছেন। বাংলাদেশ যে এ মুহূর্তে একটি সন্ত্রাসকবলিত দেশ তা এই লেখা যখন লিখছি তার আগ পর্যন্ত বিএনপির দেয়া বিবৃতি ও সরকারের একটি সিদ্ধান্তই প্রমাণ করে। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার রাত ৯টার পরে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে, এর থেকে প্রমাণিত হয় দেশে যা ঘটছে সরকার তা স্বীকার করে নিয়েছে। অন্যদিকে সরকার সত্যি সত্যি রাত ৯টার পরে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের বিবৃতি প্রমাণ করে তাদের কর্মকা-ের একটি স্বীকৃতি সরকারের এই রাত ৯টার পরে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া। অবশ্যই সরকারের এই সিদ্ধান্ত বিএনপির কর্মকা-ের স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু কর্মকাণ্ডটি কী? সরকার বিএনপির কোন কর্মকা-ের ফলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে? বিএনপি রাতে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা মেরে নারী, শিশুসহ সাধারণ মানুষ হত্যা করছে বলে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোন দেশে যখন সন্ত্রাসী গ্রুপ দাঁড়িয়ে যায় তখন সে দেশের সরকারকে এ ধরনের অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেমন বর্তমানে ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রান্স-এশিয়ান যে রেলওয়ে হবে ওই রেলওয়ের পথ থেকে অসম ও মিজোরামকে বাদ দেয়া হবে। কারণ ওই দুটি প্রদেশের সন্ত্রাস এখনও স্বস্তিকর পর্যায়ে আনতে পারেনি ভারত সরকার। অন্যদিকে যখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নকশাল আন্দোলন ছিল তখন বাস চলাচলের ওপর এ ধরনের অনেক নিষেধাজ্ঞা ছিল। যেমন তখন যাদবপুর ছিল কলকাতার শহরতলী। কলকাতা থেকে যাদবপুরে শেষ বাস আসত রাত ৯টায়। এর পরে আর কোন বাস আসত না। অসম, মিজোরামের কয়েকটি এলাকায় এ ধরনের যাতায়াতের বিধিনিষেধ আছে। তাই যখন কোন দেশ সন্ত্রাসকবলিত হয় তখন সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বাংলাদেশ সরকার সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছে। সরকার রাত নয়টার পরে বাস চালানো বন্ধ করে দিয়ে বিএনপির সন্ত্রাসের স্বীকৃতি দিয়েছে এটা বিএনপির কাছে অনেক বড় বিষয় হতে পারে; কিন্তু দেশের মানুষের চিন্তা ভিন্ন। যারা দেশকে ভালবাসেন তথাকথিত কামাল হোসেনীয় সুশীল নন, তাদের সামনে এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন বিএনপি দেশকে কোন্্ সন্ত্রাসের ভেতর ঠেলে দিল? এ লেখায় এ পর্যন্ত তিনটি স্থানের সন্ত্রাসের উদাহরণ দিয়েছি, অসম, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গের নকশাল সন্ত্রাস। পশ্চিমবঙ্গের নকশাল আন্দোলন ছিল অতি উগ্রপথে অতি কল্পনীয় এক ধরনের সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে সন্ত্রাস। তখন পৃথিবীজুড়ে নানা ধরনের সমাজতন্ত্রের বা কমিউনিজমের হাওয়া ছিল যা পশ্চিমবঙ্গের একটি তরুণ শ্রেণীকে আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু বিষয়টি ওই সমাজের কালচারের বা আচরণের কোন বিষয় ছিল না। বরং যে সমাজটি রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছিল তারা সেই সমাজের বিপক্ষে গিয়ে আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে দ্রুত নিঃশেষের পথে যায়। অন্যদিকে অসম ও মিজোরামের সন্ত্রাস ভিন্ন। এটা এথনিক কনফ্লিকট। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এ লেখার বিষয় নয়। অতি সহজে বলা যায়, ভারত একটি কম্পোজিট কান্ট্রি। এখানে বহু ছোট এথনিক গ্রুপ আছে। তার ভেতর তাদের এই নর্থ ইস্টের এথনিক গ্রুপগুলো ভারতের থেকে তাদের কিছু কিছু প্রতিবেশীর এথনিক গ্রুপের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বেশি। এছাড়া ব্রিটিশ বা মোগল আমলে এদেরকে ওইভাবে ভারতবাসী করার প্রচেষ্টা ছিল না। এখন ধীরে ধীরে সেটা করতে হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে বেগম জিয়া এ মুহূর্তে যে সন্ত্রাসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বা দেশটাকে যে সন্ত্রাসের টানেলে ঢুকিয়ে দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন তা ইসলামিক জঙ্গী সন্ত্রাস। এর চরিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সারা বিশ্ব এখন ইসলামিক জঙ্গী সন্ত্রাসের চরিত্র দেখতে পাচ্ছে। বাংলাদেশে বেগম জিয়া যে সন্ত্রাসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই সন্ত্রাসের চরিত্র নিয়ে এ কলামে আগেও লিখেছি। আওয়ামী লীগ নেতাদের ভেতর শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফ ইতোমধ্যে এই সন্ত্রাসের সঠিক চরিত্র চিহ্নিত করেছেন। এছাড়া অন্য নেতাদের মুখে এখনও কেউ শোনেননি। বাংলাদেশে বর্তমানে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে যে সন্ত্রাস চলছে তা আইএস, বোকো হারাম ও তালেবানের একটি সম্মিলিত রূপ। বাংলাদেশে বিএনপির ছায়ায় বসে জামায়াত, হিযবুত তাহরীর, ব্রাদারহুড, জেএমবি দীর্ঘদিন ধরে এর ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। এই ক্ষেত্রটি যে আন্তর্জাতিক ইসলামিক জঙ্গী গোষ্ঠীর পৃৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হচ্ছে তাও কিন্তু পরিষ্কার। কারণ, তারেক রহমানের আতিথেয়তায় একবার ও জামায়াতে ইসলামীর আতিথেয়তায় আরেকবার লাদেনের সেকেন্ড ইন কমান্ড জাওয়াহিরি বাংলাদেশে অবস্থান করে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর জাওয়াহিরি বাংলাদেশ-ভারত ঘিরে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর আন্দোলন শুরু করার নির্দেশ দেয়। বেগম জিয়া এখন সেই নির্দেশই পালন করছেন। তবে এ ক্ষেত্রটি একদিনে তৈরি হয়নি। এর জন্যে দীর্ঘ সময় লেগেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে আন্তর্জাতিক শক্তি বিশেষ করে পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা কিছু দেশের আর্থিক সুবিধা নিয়ে এ কাজ হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বে থেকে নামে বেনামে একশ’র ওপর সংগঠন গড়ে এই ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। অন্যদিকে এই ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে বিশাল ভূমিকা রেখেছে তথাকথিত মাদ্রাসা শিক্ষা। ব্রিটিশ ভারতে ৯৭ বছরের মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে ব্রিটিশ সরকার যে প্রতিবেদন তৈরি করেছিল সেখানে বলা হয়েছিল, গত ৯৭ বছর সেখানে জিহাদ ছাড়া অন্য কোন শিক্ষা দেয়া হয়নি। ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাসা শিক্ষা তৎকালীন পূর্ববাংলা অর্থাৎ বর্তমানের এই বাংলাদেশকে ঠিক ওইভাবে স্পর্শ করতে পারেনি। কারণ, পূর্ববাংলার মানুষের জীবন অনেকটা সহজিয়া ও লোকাচারের ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠা। কিন্তু ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে যে মাদ্রাসা শিক্ষা বাংলাদেশে ব্যাপক ভিত্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে অন্যতম শিক্ষা কিন্তু জিহাদ। তাই ছোট হোক, বড় হোক বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গীদের সন্ত্রাসের ক্ষেত্র একটি আছে। বেগম জিয়া সেই ক্ষেত্রটি কাজে লাগাচ্ছেন। এখন প্রশ্ন, বেগম জিয়া ভোটের রাজনীতিতে ছিলেন। তিনি কেন হঠাৎ এই ইসলামিক জঙ্গী সন্ত্রাসের নেতৃত্ব গ্রহণ করলেন। কিছু বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলে যা জানা যায় তা হলো, শেখ হাসিনাকে যদি পাঁচ বছর শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে দেয়া হয় তাহলে তিনি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান বদলে দেবেন। পদ্মা সেতু শেষ করে অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে যদি তিনি এগিয়ে যান তাহলে বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা অনেক উন্নত হয়ে যাবে। তখন মানুষ শেখ হাসিনার বিকল্প আর কিছু চিন্তা করবে না। তাই এ মুুহূর্তে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- স্তব্ধ করে না দিতে পারলে শেখ হাসিনাকে ঠেকানোর কোন পথ নেই। এ কারণে যে কোন মূল্যে হোক দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করতে হবে। তাহলে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে ঠেকানো যাবে। তবে তারা অর্থনীতি ধ্বংস করছে এবং গণহত্যাও চালাচ্ছে। অন্যদিকে আরেকটি সূত্রে পাওয়া একটি তথ্য আছে এ সন্ত্রাস সম্পর্কে। লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর উর্ধতন ব্যক্তিবর্গের আলোচনাক্রমে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত, আইএসআই অর্থ, ট্রেনিং ও অস্ত্রসহ সার্বিক সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটাবে। শেখ হাসিনার পতনের জন্যে তারেক রহমানকে দুটি কাজ করতে হবে। এক. সকল প্রতিকূলতার মাঝে থেকেও তার দলকে আইএসআই-এর নির্দেশ অনুযায়ী কর্মসূচী দিতে হবে। আর হাসিনা সরকারের পতনের পর যে সরকার হবে ওই সরকারকে অবশ্যই পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন গঠন করতে বাধ্য করতে হবে। তারেক এই দুটিতেই সম্মতি দিয়েছে। যে কারণে আইএসআই তারেক রহমানের মাধ্যমে লন্ডন থেকে একের পর এক কর্মসূচী দিয়ে যাচ্ছে বিএনপির নামে। যে কর্মসূচী বিষয়ে বিএনপি নেতারাও কিছু জানেন না। কর্মসূচীগুলো যে কোন রাজনৈতিক নয়, কেবল জঙ্গী তৎপরতা চালানোর সুবিধার জন্যে তা মনে হয় গত এক মাসের বেশি সময়ে দেশের মানুষের বুঝতে বাকি নেই। আইএসআই জঙ্গী তৎপরতার সপক্ষে কর্মসূচী দিচ্ছে তার কারণও এখন স্পষ্ট, তারা চায় এই তৎপরতার ভেতর দিয়ে যেন শেখ হাসিনার সরকারের পতন এমনভাবে ঘটে যাতে যখন হাসিনার সরকারের পতন ঘটবে তখন রাষ্ট্রের সকল নিয়ন্ত্রণ ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশটাকে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় জঙ্গীরা দখল করতে পারে। অনেকটা আইএস-এর মতো। তাহলে তাদের সম্মিলিত প্রতিনিধির সঙ্গে পাকিস্তানের কনফেডারেশন করা সহজ হবে। অন্যদিকে ভারত ও চীনের অর্থনৈতিক গতি থামাতে এখানে পশ্চিমা বিশ্বের একটি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত আছে, যা অন্য ক্ষেত্রে অন্য কারণে প্রতিটি ইসলামিক জঙ্গী সন্ত্রাসের সঙ্গে কোন না কোনভাবে পশ্চিমা বিশ্ব সর্বত্র রেখেছে। যদিও এর সঙ্গে হয়ত এ ঘটনার কোন যোগ নেই, তারপরেও এই লেখা যখন লিখছি তখন খবর ব্রিটিশ হাইকমিশনার খালেদার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। ৭/৭ এ লন্ডনের বোমা বিস্ফোরণের কোন নেতার সঙ্গে যদি বাংলাদেশের হাইকমিশনার দেখা করত ব্রিটিশ জনগণ কি মানত? তাই যে নেত্রীর নির্দেশে পেট্রোলবোমা মেরে ইতোমধ্যে ৬০ জনের ওপর হত্যা করা হয়েছে তার সঙ্গে দেখা করা কি বাংলাদেশের সন্ত্রাসকে পরোক্ষ স্বীকৃতি দেয়া নয়? তবে পশ্চিমা বিশ্ব চেষ্টা করলেও ভারত ও চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন থামাতে পারবে না। তবে বাংলাদেশে এ অবস্থা চললে ওই অর্থনৈতিক রুট থেকে বাংলাদেশ বাদ পড়ে যাবে। অবশ্য বিষয়টি বেশ জটিল। এ লেখায় ওই প্রসঙ্গ নয়। যাহোক, সব মিলে বিষয়টি এখন স্পষ্ট যে, বেগম জিয়া যে সন্ত্রাসী পথ নিয়েছেন এ পথে যদি তিনি পরাজিত হন, তাহলে তাকে গণহত্যার দায়ে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। গণহত্যাকারীর শাস্তি কি সেটা সকলে জানে। অন্যদিকে যদি হাসিনার সরকারের পতন ঘটে এই জঙ্গী পথে তাহলে দেশের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ শেষ হয়ে যাবে। দেশ জঙ্গীদের দখলে চলে যাবে। সেখানেও বেগম জিয়ার কোন অবস্থান নেই। তাই শুরুতে যে বিষয়টি উল্লেখ করেছি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম জিয়ার অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে। এ নিয়ে বিতর্ক করার কোন অবকাশ নেই। এখন প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশে জঙ্গীরা জিততে পারবে কি না? সরকার এই অবস্থা থেকে দেশকে বের করে আনতে পারবে কি না? সরকার এখনও পর্যন্ত যে তৎপরতা দেখাচ্ছে তাতে মানুষ শতভাগ আশাবাদী নয়। এর জন্যে সব থেকে বড় দায়ী সরকারের প্রচার বিভাগ। সরকার দেশের মানুষের সামনে স্পষ্ট করে বলতে পারছে না যে, দেশ এই প্রথমবারের মতো জঙ্গী সন্ত্রাসের কবলিত হয়েছে। এখন সরকার জঙ্গী দমনের জন্যে পরিকল্পনা করে এগুচ্ছে। এসব কথা তাদের বলা উচিত ছিল। অন্যদিকে সরকার সব থেকে বেশি ব্যর্থ হচ্ছে তার দলকে সচল করতে এবং সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে। তবে তারপরেও সরকারের সাফল্য আছে। এই সন্ত্রাসকে সরকার কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকায় আটকে দিতে পেরেছে। এখন সরকার ও সরকারী দলকে খুঁজে দেখতে হবে, ওই সব এলাকায় কারা এই সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। কারণ, সন্ত্রাসীরা হিট এ্যান্ড রান পদ্ধতিতে সন্ত্রাস করছে। তাহলে এখন খুঁজে বের করা দরকার তারা যেখানে হিট করছে সেখান থেকে রান করে কোথায় গিয়ে কাদের আশ্রয়ে থাকছে? সব না হলেও ইতোমধ্যে কিন্তু অনেক খবর পাওয়া গেছে এই আশ্রয় তারা অনেক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে পাচ্ছে। যার জন্যে তারা আওয়ামী লীগের ওই সব স্থানীয় নেতাকে প্রচুর অর্থ দিচ্ছে। এর আগেও এ কলামে উল্লেখ করেছি, আবারও লিখছি দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতে ইসলামী অনেক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে কিনে ফেলেছে। তাদের ছেলেদের সঙ্গে, ভাইয়ের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির ব্যবসা আছে। অনেক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে তারেক রহমানের জন্মদিন পালনের অর্থ জোগান দেন। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ সম্প্রতি যে সকল জেলা সম্মেলন করেছে তার অনেক জায়গায় জামায়াতের অর্থের কারণে কেন্দ্রীয় অনেক নেতা জামায়াত সমর্থক নেতাদেরকেই নেতৃত্ব দিয়েছে। এদের কাছেই কিন্তু এই জঙ্গীদের একটি অংশ আশ্রয় পাচ্ছে। তাছাড়া মঙ্গলবার রাতে ফেনীতে যে ঘটনা ঘটেছে এটা নিয়ে তদন্তের আগে কিছু বলা উচিত নয়। তবে ফেনী থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক নিয়মিত সৌজন্য পাই, সেটা পড়ে যা মনে হয় ফেনীর আওয়ামী লীগের ভেতর এই জঙ্গীদের স্থান দেয়ার একটি অংশ আছে। তাই উত্তরবঙ্গ, চট্টগ্রাম, ফেনী- এ সকল এলাকার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের ওপর জোর মনিটরিংয়ে আনা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে এ দায়িত্ব শেখ হাসিনা তাঁর দলের সৎ নেতৃত্বের হাতে যদি না দেন তাহলে কোন লাভ নেই। এ ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে সব থেকে বেশি সহায়তা করা উচিত সৈয়দ আশরাফের। কারণ তাঁর যোগ্যতা ও সততা প্রমাণিত। তাঁকে দায়িত্ব নিয়ে অবিলম্বে সৎ ও নিষ্ঠাবান নেতাদের পথে নামাতে হবে। জামায়াত সমর্থক আওয়ামী লীগারদের নিষ্ক্রিয় করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেরোরিজম কবলিত এটা মেনে নিয়ে এ বিষয়ে সরকারের আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। যেমন এক্সপার্ট সহায়তা। কারণ কখনই মনে করা উচিত নয়, পেট্রোলবোমাই জঙ্গীদের শেষ অস্ত্র। পরবর্তী ধাপে তারা কোথায় যেতে পারে তা আগেই চিন্তা করে সরকারকে সেভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি চীন, ভারত ও মিয়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোরও উচিত বাংলাদেশের এই সন্ত্রাস মোকাবেলায় পাশে এসে দাঁড়ানো। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশের গুরুত্ব কিন্তু ভবিষ্যত এশিয়ায় অপরিসীম। [email protected]
×