ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রেফতারকৃত নেতারা ফাঁস করে দিচ্ছেন আন্দোলনের কলাকৌশল

গৃহবন্দী হতে চান খালেদা ॥ অস্তিত্ব নিয়ে আতঙ্কে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

গৃহবন্দী হতে চান খালেদা ॥ অস্তিত্ব নিয়ে আতঙ্কে বিএনপি

শংকর কুমার দে ॥ ক্ষয়িষ্ণু আন্দোলনে গতি আনতে স্বেচ্ছায় গ্রেফতার কিংবা গৃহবন্দী হতে চান বেগম খালেদা জিয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে একবার আন্দোলনের মাঠ থেকে ছিটকে পড়ে দলের অস্তিত্ব মহাসঙ্কটে পড়ার আতঙ্কে ভুগছে বিএনপি। গ্রেফতার কিংবা গৃহবন্দীর পাশাপাশি সংলাপে বসার দাবি আদায়ের মধ্য দিয়ে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছেন তাঁর দল ও তিনি। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠজন ও দলের নীতিনির্ধারক মহলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পাওয়া এই ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বেচ্ছায় গ্রেফতার কিংবা গৃহবন্দী হলে একদিকে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হতে পারে। অপরদিকে বিদেশী দেশসমূহের প্রভাব বা চাপ সৃষ্টি করে সরকারকে মাথা নত করিয়ে আন্দোলনে গতি আনতে সহায়ক হবে। কারণ একমাত্র পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার আন্দোলনে সৃষ্টি হওয়া জনরোষ দলটির ওপর জঙ্গীয়ানের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এভাবে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে অবরোধ ও হরতালের নামে নাশকতার আন্দোলন আর বেশি দিন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। এ জন্য সংলাপে বসার নামে একটি দাবি আদায়ের পথ খোঁজা হচ্ছে। তাহলে অন্তত আন্দোলনে সাময়িক বিরতি দেয়ার ঘোষণা দিয়ে দলটির অগণিত নেতাকর্মীর মান সম্মান অটুট রাখা যাবে। নতুবা আমছালা দুটোই যাওয়ার মতো আন্দোলন তো মাঠে মারা যাবেই, তার সঙ্গে দলের অস্তিত্ব মহাসঙ্কটে পড়তে পারে। এই ধরনের চিন্তাভাবনা মাথায় রেখে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বেগম জিয়াকে। গোয়েন্দা সূত্র জানান, উস্কানি দিয়ে সরকারের মাথা গরম করার জন্য তার পক্ষ থেকে ছক কষছেন তার দল বিএনপি। সংলাপে বসার জন্য সরকারকে বাধ্য করতে মাঠে নামানো হয়েছে বিএনপির আদর্শের অনুসারী সুশীল সমাজ নামধারী বুদ্ধিজীবী মহলটির শোরগোল তৈরি করাও আন্দোলনেরই অংশ মনে করে দলের নীতিনির্ধারক মহলটি। সংলাপ-সংলাপ বলে চীৎকার তুঙ্গে তোলা গেলে বিদেশী প্রভাবশালী দেশসমূহের হস্তক্ষেপ কামনা করবে দলটি। এর আগেই স্বেচ্ছায় বেগম জিয়া হতে চান গ্রেফতার কিংবা গৃহবন্দী। এ জন্যই মাঝে মধ্যেই গুজব ছড়িয়ে, রটিয়ে দেয়া হচ্ছে, যে কোন সময়ে গ্রেফতার হতে পারেন বেগম জিয়া। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেয়ায় বেকায়দায় আছে দলটি। বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠজন ও সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলহাজ মোসাদ্দেক আলী ফালু গ্রেফতার হওয়ার পর হতাশায়, মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন বেগম জিয়া। অনেক গোপন বিষয় পেয়ে গেছে সরকার। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবীর রিজভীর মতো নেতারা গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে থেকে আন্দোলনের কলাকৌশল ফাঁস করে দিয়েছেন বলে মনে করেন তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতায় গা-ঢাকা দিয়েছেন মির্জা আব্বাসসহ তার পদমর্যাদার নেতারা। বিএনপির প্রথম শ্রেণীর অনেক নেতাই নাকি সরকারের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য দেন দরবার ও দর কষাকষি শুরু করে দিয়েছেন এমন গুজবও আছে বাজারে। কারণ তারা নাকি বুঝতে পারছেন, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতকে নিয়ে কোনদিনই জনগণের সমর্থন পাবে না, পাবে না প্রভাবশালী বিদেশীদের সহায়তাও। এটা এখন সবাই বুঝে গেছে অকস্মাত আর ক্ষমতার স্বাদ পাবে না দলটি। দলে আন্দোলন নামক রণে ভঙ্গ দেয়া শুরু হয়ে গেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অবরোধ ও হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতার নীল নকশা তৈরি করেই গুলশানের ঘর থেকে বের হয়েছিলেন বেগম জিয়া। ঠাঁই নিয়েছিলেন গুলশানের দলীয় কার্যালয় নামের আরেক বাসভবনে। উদ্দেশ্য ছিল, বাসভবন নামের কার্যালয়ে অবস্থান করলে গণতন্ত্র গেল, সরকার স্বৈরাচার, বিরোধী দলের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে, মানবাধিকার নেই ইত্যাদি তুলে ধরা হবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি হয়ে গেছে। এখন পথ খোঁজা হচ্ছে সংলাপ নয়তো স্বেচ্ছায় গ্রেফতার কিংবা গৃহবন্দীর। কারণ সরকারবিরেধী আন্দোলনে বিএনপি তো দূরের কথা ২০ দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধসহ হরতালে রাজপথে দেখা যাচ্ছে না। অবরোধ-হরতালের নাশকতার আন্দোলন চাঙ্গা করার জন্য জেলা, শহর ও থানা পর্যায়ের নেতাদের কাছে বার্তা যাচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার। লন্ডন থেকে বার্তা পাঠাচ্ছেন তারেক জিয়া। কিন্তু আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোরতায় খোদ রাজধানী ঢাকায়ই আন্দোলনের মাঠে নেই নেতাকর্মীরা। কেবলমাত্র রাতের আঁধারে জনহীন রাস্তায় চোরাগোপ্তা হামলা করে যানবাহনে পেট্রোলবোমার আগুনে নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ছাড়া আর কোন আন্দোলন নেই।
×