ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে অসাধু চক্র সই সিল ও তালিকা জাল করছে

জালিয়াতি করে অপরাধী মুক্ত

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জালিয়াতি করে অপরাধী মুক্ত

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ কক্সবাজারে আদালতকে ভ্রমে ফেলে সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র বিচারকের সই-সিল ও জব্দ তালিকা জাল করে একাধিক অপরাধীকে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত করে নিয়েছে। বিজিবি-র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যদের দায়েরকৃত বহু মামলায় বিচারকের দস্তখত-সিল ও জব্দ তালিকায় ঐ চক্র জালিয়াত করেছে বলে প্রমাণ মিলেছে। কক্সবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক যে সব মামলায় আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করেছেন, ওইসব মামলায় একের পর এক অপরাধীদের উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত করে কারাগার থেকে বের করে নিয়েছে সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র। ওই চক্রের এমন জঘন্যতম অপরাধের কা-টি আদালতের নজরে আসায় কক্সবাজারের রেকর্ডরুমে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সশরীরে হাইকোর্টে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। উচ্চ আদালতের ধার্যকৃত তারিখে ১১ফেব্রুয়ারি হাজির হওয়ার লক্ষ্যে নকল খানার দায়িত্বে নিয়োজিত আবদুর রহিম, শহীদ ও ফরিদসহ ৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন। সূত্র জানায়, ইয়াবাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক অপরাধীদের ছাড়িয়ে নিতে জালিয়াত চক্র প্রথমে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করে থাকে। এ জাতীয় বহু মামলায় আসামির জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় মিস মামলা দায়ের করেছে জজ আদালতে। বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালতেও জামিন নামঞ্জুর হলে শুরু হয় জালিয়াত চক্রের অপতৎপরতা। তারা সহিমহুরি নকলে বিচারকের দস্তখত-সিল ও জব্দ তালিকা জাল করে ওই অপরাধীকে ছাড়িয়ে নিতে জামিনের আবেদন জানায় হাইকোর্টে। সামান্য কয়েকটি ইয়াবা নিয়ে আটক ব্যক্তির প্রতি মানবিক কারণে দয়াপরবশ হয়ে অনেক সময় জামিন মঞ্জুর করেন সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারপতি। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার রুজুকৃত মামলায় এক হাজার ইয়াবার স্থলে সহিমহুরি নকল কপিতে মাত্র এক শ’ পিস ও সাড়ে ৫ হাজারটির স্থলে মাত্র ৫শ’ পিস দেখিয়ে উচ্চ আদালত থেকে ইতোপূর্বে একাধিক অপরাধীকে জামিনে মুক্ত করে নিয়েছে জালিয়াত চক্র। হাতেগোনা দুয়েকজন আইনজীবী ও মুহুরি এ রকম জঘন্য অপরাধে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জালিয়াত চক্রটি জামিনে মুক্ত করে অপরাধীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। কিছুদিনের মধ্যে গাড়ি-বাড়িসহ জালিয়াত চক্রের অনেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। এসব বিষয়ে আদালত পাড়ায় অন্য কৌশলীদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হলে বিষয়টি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নজরে আসে। কক্সবাজার আদালতের জিআর নং-৩২৪/১৪ মামলায় এক আসামির জামিন মঞ্জুরসংক্রান্ত নথিপত্র উচ্চ আদালত থেকে কক্সবাজারে আসলে সন্দেহ জাগে চীফ জুডিশিয়াল আদালতের। সংশ্লিষ্ট আদালতের নাজির মোঃ আজম খান মামলাটির বিষয়ে উচ্চ আদালতে যোগাযোগ করে জানতে পারেন মারাত্মক জালিয়াতির এ ঘটনা। এ ব্যাপারে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সরকারের নিয়োজিত আইন কর্মকর্তা এ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দু জনকণ্ঠকে বলেন, যে অপরাধীকে জামিনে মুক্ত করতে জালিয়াত করা হচ্ছে, ঐ আসামি এবং এ জঘন্য অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ঐ জালিয়াত চক্রের সঙ্গে কোন আইনজীবী জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ঐ আইনজীবীর সনদ চিরতরের জন্য বাতিল করা উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেছেন। কক্সবাজার আইনজীবী সহকারী সমিতির সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, কোন মুহুরি এ জাতীয় অপরাধে জড়িত থাকলে তাকে সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হবে।
×