ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চোরাগোপ্তা হামলা ঠেকাতে ॥ ৮৭ পয়েন্টে নজরদারি

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

চোরাগোপ্তা হামলা  ঠেকাতে ॥ ৮৭ পয়েন্টে নজরদারি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলের লাগাতার হরতাল-অবরোধে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নগরী থেকে গৌরনদীর ভূরঘাটা পর্যন্ত ৫৫টি সংযোগ সড়কসহ জেলায় চোরাগোপ্তা হামলা হয় এমন ৮৭টি স্পট নির্ধারণ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এ স্পটগুলোকে ‘ডেঞ্জার জোন’ আখ্যা দিয়ে নাশকতা ঠেকাতে বিশেষ নজরদারি শুরু করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অপরদিকে রবিবার সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে মহাসড়কে রিক্সা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ। আনসার ও ভিডিপির বরিশাল রেঞ্জের পরিচালক এবং বিভাগীয় প্রধান মোল্লা মোঃ আমজাদ হোসেন জানান, দেশের চলমান পরিস্থিতির নিরসনকল্পে যানবাহন চলাচলে নিরাপত্তা বিধানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লিখিত আদেশক্রমে জনগণের চলাচলে নিরাপত্তা বিধানে জেলায় ৮৭টি পয়েন্টে ১ হাজার ৪৪ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি পয়েন্টে চারজন করে রুটিন অনুযায়ী ১২ জন আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে পাহারার কাজ শুরু করেছেন। যে কোন মূল্যে নাশকতারোধে আনসার ও ভিডিপির সদস্যদের সঙ্গে ডেঞ্জার জোন এলাকাগুলোতে পুলিশ এবং র‌্যাবের টহল জোরদারের পাশাপাশি সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশের সদস্যরা নজরদারি বৃদ্ধি করেছেন। সূত্রমতে, চলমান হরতাল-অবরোধের মধ্যে পেট্রোলবোমায় জেলার গৌরনদীতে ৫ জন ও উজিরপুরে একজন নিহত হয়েছে। এছাড়া বাস, ট্রাক ও যাত্রীবাহী লঞ্চে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, ভাংচুর এবং ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে ক্রমেই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ফলে নাশকতারোধে ডেঞ্জার জোন এলাকাগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার একেএম এহসান উল্লাহ বলেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সকল প্রকার নাশকতাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন। গোয়েন্দা সূত্রমতে, বরিশালে সবচেয়ে বেশি নাশকতামূলক কর্মকা- ঘটেছে গৌরনদী উপজেলায়। ওই উপজেলার মাহিলাড়া, টরকীর নবীনগর, ভূরঘাটা, ইল্লা, সাউদেরখালপাড়, গয়নাঘাটা, বাদুরতলা, বার্থী, কটকস্থল, বাটাজোর, কাছেমাবাদ, বেজহার এলাকার সংযোগ সড়কসহ উজিরপুরের বামরাইল, জয়শ্রী, ইচলাদী, সানুহার, বাবুগঞ্জের রহমতপুর, নগরীর কাশিপুর, কর্ণকাঠীর পয়েন্টগুলোতে ইতোমধ্যে কমবেশি নাশকতা বা চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে গৌরনদীর মাহিলাড়ায় অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি তিনজন ও টরকীর নবীনগর এলাকায় গত ২ ফেব্রুয়ারি দুইজন, উজিরপুরের সানুহারে গত ১৮ জানুয়ারি একজন নিহত হয়েছেন। গৌরনদীর গয়নাঘাটায় একটি ট্রাক, বাটাজোরে একটি টেম্পো, কর্ণকাঠী ও নগরীর নথুল্লাবাদে দুটি বাসে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি প্রায় অর্ধশতাধিকক যানবাহন ভাংচুর করা হয়। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, নাশকতাকারীদের আটকের জন্য র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে র‌্যাবের নজরদারিও বৃদ্ধি করা হয়েছে। অপরদিকে একাধিক রিক্সা চালকরা জানান, সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে মহাসড়কে রিক্সা চলাচলের ওপর গৌরনদী থানা পুলিশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। সন্ধ্যার পর থেকে রিক্সা চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় সাধারণ যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। শনিবার মধ্যরাতে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের ডেঞ্জার জোন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করার জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীরা পাহারা জোরদার করেছেন। জেলার গৌরনদী উপজেলার টরকী থেকে বার্থী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়কে পাহারার নেতৃত্ব দেয়া আ’লীগ নেতা রাজু আহম্মেদ হারুন হাওলাদার জানান, যে কোন ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করার জন্য তিনি দলের শতাধিক নেতাকর্মীদের নিয়ে গত তিনদিন থেকে পাহারা বসিয়েছেন।
×