ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাশকতা বন্ধের দাবিতে উত্তাল রাজপথ

খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলমান সহিংসতার প্রতিবাদে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ২০ দলীয় জোটের কুশপুতুল পোড়ানো, ঝাড়ু মিছিল, গণঅবস্থানসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। এ সময় নাশকতা ও সহিংসতা বন্ধের দাবিতে মিছিল ও সেøাগানে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীর রাজপথ। প্রতিবাদী কর্মসূচী থেকে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধের দাবি জানানো হয়। এদিকে আজ সন্ত্রাসবিরোধী দিবস উপলক্ষে ঢাকার চারটি স্থানে মানববন্ধন করবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন দল জাসদ। সিপিবি-বাসদের সমাবেশ ॥ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর গণঅবস্থান কর্মসূচীতে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দেশে আতঙ্কজনক ও বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিন মানুষ পুড়ছে, মানুষ মরছে। বোমাবাজদের হাত থেকে শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। শাসকশ্রেণীর দলগুলোর ক্ষমতাকেন্দ্রিক রশি টানাটানিতে দেশ ও জনগণ এখন বিধ্বস্ত, অসহায়। এই অবস্থা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংহিসতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। সহিংস রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করতে হবে। দেশ ও মানুষ বাঁচাতে গণবিরোধী রাজনীতির বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ‘দেশ বাঁচাও’ আওয়াজ নিয়ে সিপিবি-বাসদের দেশব্যাপী গণঅবস্থান কর্মসূচীর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন দলটির নেতাকর্মীরা। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, মনজুরুল আহসান খান, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, আবু জাফর আহমেদ, বজলুর রশীদ ফিরোজ, সাজ্জাদ জহির চন্দন, আহসান হাবিব লাবলু, রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ। কর্মসূচীতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, জনগণকে জিম্মি করে ক্ষমতার খেলা চলতে পারে না। পেট্রোলবোমার রাজনীতিতে জনগণের জীবন থমকে গেছে। জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা চলছে। আন্দোলনের নামে গণবিরোধী কার্যক্রম মেনে নেয়া যায় না। বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারকেও দায় নিতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করে পুলিশ দিয়ে পরিস্থিতি সামলানো যাবে না। সরকার জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। কাদের সিদ্দিকীর মঞ্চ ভেঙ্গে দিল পুলিশ ॥ মতিঝিলে ‘শান্তির জন্য’ টানা অবস্থানে থাকা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর মঞ্চ খুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। তবে দলের কার্যালয়ের সামনের ফুটপাথে আগের অবস্থানে পাটি বিছিয়ে বসে পড়ে কাদের সিদ্দিকী জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থান কর্মসূচী চলবে। শুক্রবার দুপুরে তিনি অবস্থানস্থল থেকে জুমার নামাজ পড়তে বায়তুল মোকাররম মসজিদে গেলে পুলিশ মঞ্চটি ভেঙ্গে দেয় বলে তাঁর দলের অভিযোগ। কাদের সিদ্দিকীর অনুসারী ও যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক হাবিবুন্নবী সোহেল বলেন, বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে ২৫ থেকে ৩০ জন পুলিশ এসে চৌকি-শামিয়ানা খুলে নিয়ে যায়। জিজ্ঞেস করলে তারা বলেছে, ওপরের নির্দেশে এটি করা হচ্ছে। আমরা মালামালের তালিকা চাইলে তারা দিতে রাজি হয়নি। নামাজ থেকে ফিরে কাদের সিদ্দিকী মঞ্চ না পেয়ে আগের অবস্থানেই পাটি বিছিয়ে বসে পড়েন। তিনি বলেন, আমি যে দাবিতে অবস্থান শুরু করেছিলাম তা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান থেকে সরব না। বাবা যেমন সন্তানের সঙ্কটে কষ্ট পান, দেশের বর্তমান অবস্থায় আমিও সেরকম ব্যথিত। মঞ্চ খুলে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, তারা এ বিষয়ে ‘অবগত নন’। বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টি ও এনডিবির ঝাড়ু মিছিল ॥ বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির উদ্যোগে মানববন্ধন ও ওলামা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান মাওলানা ইসমাইল হোসেন অবরোধ ও হরতাল বন্ধ না করলে দেশের আলেম-ওলামাদের নিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুমকি দেন। মানুষ হত্যার অভিযোগে খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে গ্রেফতার ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধের দাবি জানান তিনি। এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ শেষে ঝাড়ু মিছিল নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এনডিবির নেতাকর্মীরা। দলটির চেয়ারম্যান মোমিন মেহেদী বলেন, সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে এই চলমান নাশকতা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে আজ যেমন ঝাড়ু মিছিল হয়েছে, তেমনি আগামীতে সারাদেশে কাফন মিছিল করা হবে। অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম ॥ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে ফোরামের প্রেসিডেন্ট কবির চৌধুরী তন্ময় পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য ২০ দলীয় নেতাদের দায়ী করেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রাজনীতির নামে দেশে এ রকম অরাজকতা সাধারণ মানুষ কখনও মেনে নেবে না। তাই, দ্রুত এসব সহিংসতার কর্মসূচী প্রত্যাহার করতে হবে। নইলে সাধারণ মানুষ এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। বাংলাদেশ যুব মৈত্রী ॥ ‘বিএনপি-জামায়াতের খুন ও নাশকতা বন্ধ’ শীর্ষক সেøাগান নিয়ে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ যুব মৈত্রী। বক্তারা সাধারণ মানুষের জীবনযাপন স্বাভাবিক করে দিতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, গ্রীন ভয়েস নাগরিক উদ্যোগ, ডব্লিউ বিবি ট্রাস্ট, নিরাপদ ডেভেলপ ফাউন্ডেশন, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলন, স্বাধীনতা লীগের ব্যানারে সহিংসতার রাজনীতি পরিহার, মানুষ হত্যা বন্ধ, সম্পদ পরিবেশ ও চারদিকে শান্তি রক্ষা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। প্রতিটি মানববন্ধনের একই দাবিÑ সহিংসতার রাজনীতি নয়, দেশের কল্যাণে রাজনীতি চাই। কবি-লেখক ও শিল্পী সমাজের মানববন্ধন ॥ আন্দোলনের নামে নিরীহ মানুষ হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগে মানববন্ধন করেছে কবি-লেখক ও শিল্পী সমাজ। বক্তারা বলেন, নিরপরাধী নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল। এসব কর্মকা- কোনভাবেই দেশের কল্যাণে হতে পারে না। এতে উপস্থিত ছিলেন, ভাস্কর রাসা, গবেষক বদিউর রহমান, কবি মোহাম্মদ সামাদ, ঝর্ণা রহমান, অধ্যাপক এমএ আজিজ, কবি চঞ্চল আশরাফ, রওশন ঝুনু, জাহিদ হায়দার প্রমুখ।
×