ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হন্টন কাহিনী

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

হন্টন কাহিনী

তাঁকে বলা হয় নির্জনতার কবি। একাকিত্বের কবিও কেউ কেউ বলেন। সেই জীবনানন্দ দাশ তাঁর বিখ্যাত বনলতা সেন কবিতায় লিখেছিলেন, ‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে।’ সেও কতকাল আগের কথা। মানুষকে তার জীবনচক্রে কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা, বর্ণবহুল ঘটনার ভেতর দিয়েই না অতিক্রম করতে হয়। জীবনের দায় শোধাতে গিয়ে মানুষকে তাই বহু পথ পাড়ি দিতে হয়। সে পথ বড় বিচিত্র- সে পথ বড় দুর্লঙ্ঘনীয়। ঘটনাটা অনেক দূরের দেশ আমেরিকায়। ডেট্টয়েটের মধ্যবয়সী বাসিন্দা জেমস রবার্টসন। এই রবার্টসন প্রতিদিন নিয়ম করে প্রায় ২১ মাইল অর্থাৎ ৩৩ কিলোমিটার হাঁটেন। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কোন কিছুকে তোয়াক্কা না করেই তিনি হেঁটে যান। হাঁটতে কখনও ক্লান্তি বোধ করেন না। অবসন্নতাও তাঁকে পেয়ে বসে না। প্রতিদিন এতটা দীর্ঘ পথ হেঁটেই রবার্টসনকে অফিস করতে হয়। প্রচ- শীতের মধ্যে, বরফ ভেঙ্গে পথ পাড়ি দিতে দেখা যায় তাঁকে। এ সময় পথ-চলতি মানুষ গাড়ির ভেতর থেকে রবার্টসনকে দেখে বেশ অবাকই হন। আরে লোকটা পাগল নাকি! শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ির ভেতরকার লোকজন তাঁকে দেখে এরকম ভাবনাই ভাবে। লোকের ভাবনা দিয়ে রবার্টসনের কোন ভাবান্তর হয় না। আর ভেবেই বা কী লাভ? মানুষের ভাবনা নিয়ে মাথা ঘামালে তো আর তাঁর চলবে না। তাঁকে তো অফিসে যেতে হবে, কাজকম্ম করে খেতে হবে! কেন রবার্টসনকে প্রতিদিন এতটা পথ পাড়ি দিয়ে অফিসে যেতে হয়? সম্প্রতি সহযোগী এক দৈনিকে রবার্টসনের হাঁটা নিয়ে চমকপ্রদ এক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত নিবন্ধে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্টয়েটের রবার্টসনের গাড়িটা একদিন বলা নেই, কওয়া নেই হুট করে নষ্ট হয়ে বিকল হয়ে গেল। এটা ২০০৫ সালের কথা। নতুন গাড়ি কিনবেন সে টাকাও তাঁর কাছে নেই। এদিকে অফিস না করলে তাঁকে মহাবিপদে পড়তে হবে। অফিস বন্ধ মানে মাস শেষে নিশ্চিত আয়ের পথও বন্ধ। আর আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো জীবন ধারণের ব্যয়ভারও বন্ধ হয়ে যাওয়া। রবার্টসন দমবার পাত্র নন। হেরে যাওয়ার পাত্রও নন তিনি। গাড়ির বদলে বেছে নিলেন দুই পদব্রজে হাঁটাকে। এছাড়া তিনি যে এলাকায় থাকেন সেখান থেকে তাঁর অফিস পর্যন্ত দূরত্বে কোন বাস বা ট্রেনও চলাচল করে না। কী আর করা! বেচারা রবার্টসন অনন্যোপায় হয়ে করলেন কী, তিনি তাঁর পা জোড়াকে বানিয়ে ফেললেন বাহন। ব্যস, সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। মধ্যবয়সী রবার্টসন ঝড়-ঝঞ্ঝা, বৃষ্টি, শীত, বরফÑ সবকিছুকে তুচ্ছ করে সপ্তাহের পাঁচদিন বাড়ি থেকে ২১ মাইল পথ হেঁটে অফিস করছেন। আর এই হাঁটতে হাঁটতেই যেন বরার্টসন জীবনের এক নতুন সূত্র আবিষ্কার করে ফেললেন। এই সূত্রের নাম হলো, হেঁটে হেঁটে এগিয়ে চলা। জীবন কখনও থেমে থাকে না; জীবনের ধর্মই হলো এগিয়ে যাওয়া। হাঁটার মধ্য দিয়ে রবার্টসন এই সত্য তাঁর আশপাশের মানুষজনকে জানিয়ে দিলেন। জেমস রবার্টসনের এই ঘটনাটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে জায়গা করে নিয়েছে। রবার্টসনের এই ‘হাঁটতে থাকো’ তত্ত্বটি এখন অনেকের কাছেই নানা কারণে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। মানুষ যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে- এই অপবাদ থেকে নিজেকে মুক্ত করার অনন্য উদাহরণ তৈরি করে রবার্টসন সবার কাছে গ্রহণীয় হয়ে উঠছেন। প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটলে শরীর ও মন দুই-ই ভাল থাকে চিকিৎসকদের এই বক্তব্য যাঁরা নানা ছুতোয় অবজ্ঞা ভরে, ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন তাঁরা নিশ্চয়ই নতুন করে ভাববেন- এমন প্রত্যাশা সবার।
×