ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জরুরী ব্যবস্থা নিন

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জরুরী ব্যবস্থা নিন

নাশকতার মাসপূর্তি হয়ে গেছে। অনুরোধ-আবেদন কোন কাজে আসেনি। তবু পুনর্বার বলতে হয়, এবার ক্ষান্ত দিন। আগুন নিয়ে আর খেলবেন না। আগুনে পুড়িয়ে আর মানুষ মারবেন না। কোন সন্দেহ নেই এ কথাগুলোই আজ সারাদেশের শান্তিকামী মানুষের মনের ভেতর ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলছে। পেট্রোলবোমার লাগাতার সন্ত্রাস এর আগে দেখেনি বাংলাদেশ। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে এমন নির্মম অগণতান্ত্রিক পৈশাচিকতাও প্রত্যক্ষ করেনি মানুষ। সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে পেট্রোলবোমা ছোড়া হচ্ছে। সেই বোমার আগুনে পুড়ে অনেকেই কয়লা হয়ে গেছেন। যাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হননি, তাঁদের স্থান হয়ে উঠেছে বার্ন ইউনিট। সেখানে তীব্র অসহ্য যন্ত্রণার ভেতর সময় যাচ্ছে তাঁদের। মানুষকে এমন বীভৎস উপায়ে কষ্ট দেয়ার নাম কি রাজনীতি? এটা রাজনীতি নয়, এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এটা নিশ্চিতভাবেই মানবতাবিরোধী অপরাধ। আজ বিশ্বের কোন দেশেই সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান নেই। জঙ্গীবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছে পৃথিবীর সব দেশ। গত মাসের মাঝামাঝি প্যারিসে রম্য পত্রিকা শার্লি হেবদোর দফতরে দুই জঙ্গীবাদীর হামলায় ১০ জন কার্টুনিস্ট সাংবাদিক এবং পুলিশের দুই সদস্য নিহত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে এ হামলার নিন্দা এবং নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংহতি প্রকাশ অব্যাহত থাকতে দেখেছে বিশ্ববাসী। ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যে প্যারিসে সমবেত হন ১৫ লাখ মানুষ। একাত্মতা প্রকাশ করতে সেখানে যান ৪০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। আর সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে ভারতের উত্থাপন করতে যাওয়া এক প্রস্তাবে চীন ও রাশিয়া সমর্থন দেবে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে। পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়া সত্ত্বেও চীনের এমন পদক্ষেপ এটাই প্রমাণ করে যে কোন দেশই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেবে না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিছুদিন আগে নয়াদিল্লী সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বৈঠকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় গণতান্ত্রিক শক্তির ক্ষমতায় থাকার বিষয়টিতে উভয়ে একমত হয়েছেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে অর্থাৎ প্রত্যাখ্যাত হয়েছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এখন জনমনে প্রশ্নÑ কিভাবে মুক্তি পাবে মানুষ এই ক্রমাগত সন্ত্রাস থেকে? বিশ্বের মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখব প্রায় সব দেশকে অশান্ত করে তোলা হয়েছে। জঙ্গীবাদ তথা সন্ত্রাসবাদের ছায়া হুমকিস্বরূপ বিরাজ করছে প্রায় সর্বত্র। বাংলাদেশকে সেই একই ধারায় নেয়ার নীলনক্সা বাস্তবায়নেরই কি চেষ্টা করছে রাজনীতির পোশাক পরিহিত নব্য ও পুরনো সন্ত্রাসী দুটি দল? লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশকে অবশ্যই যে কোন মূল্যে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। এদিকে অবরোধ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তাঁর জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আগামীকাল রবিবার থেকে কঠোর কর্মসূচী দেয়ার কথা। এ কথার অর্থ কী? গত সপ্তাহের মতো সপ্তাহব্যাপী লাগাতার হরতাল? অবরোধ-হরতাল যে নামেই কর্মসূচী ঘোষিত হোক না কেন তার আসল অর্থ যে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, বাসে-রেলে নাশকতা চালানো, আর আগামী দিনের প্রজন্ম শিক্ষার্থীদের জিম্মি করাÑ এর প্রমাণ তো বিগত মাসাধিকাল ধরেই পেয়ে আসছে দেশবাসী। এহেন পরিস্থিতিতে সংসদে প্রধানমন্ত্রী জরুরী অবস্থা জারির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। জরুরী অবস্থা ঘোষণার প্রয়োজন নেই বটে! কিন্তু জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের তো কোন বিকল্প নেই। দেশের মানুষকে শান্তি স্বস্তি দিতে হলে রাজনীতির নামে সন্ত্রাস বন্ধে জরুরী ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
×