ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সমন্বিত কূটনৈতিক উদ্যোগ

ইউক্রেনে শান্তির শেষ চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ইউক্রেনে শান্তির শেষ চেষ্টা

পশ্চিমা নেতৃবৃন্দ ইউক্রেনে লড়াই অবসানের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার একটি সমন্বিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। পূর্ব ইউক্রেনে লড়াই তীব্রতর হচ্ছে এবং হোয়াইট হাউস সরকারী বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির জন্য যখন তাদের অস্ত্র দেয়ার কথা বিবেচনা করছে, তখন ঐ উদ্যোগ নেয়া হলো। তবে ব্যাপক তৎপরতা সত্ত্বেও ইউক্রেনে মস্কোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর সংশয় একটি নতুন শান্তি পরিকল্পনা তৈরির সম্ভাবনাকে হতাশাচ্ছন্ন করে দিয়েছে। একই সঙ্গে বুধবার রাশিয়ার পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে কিয়েভে একজন সিনিয়র কর্মকর্তার গ্রেফতার হওয়ায় ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীতে অনুপ্রবেশ ঘটার উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, যা কিয়েভে অস্ত্র প্রেরণের যে কোন পরিকল্পনাকে জটিল করে তুলবে। অনুরূপ অস্থির পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ও ইরাকসহ মিত্রদের অস্ত্র সরবরাহ করলেও ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘ ঐতিহাসিক বন্ধন এক অস্বাভাবিক চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে। খবর নিউইয়ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টের। ইউক্রেনের লড়াই দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এই আশঙ্কার মধ্যে জার্মানি ও ফ্রান্সের নেতৃবৃন্দ লড়াই বন্ধে বৃহস্পতিবার একটি আকক্ষিক কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছে। ইউক্রেনের সরকারী বাহিনীকে হোয়াইট হাউসের অস্ত্রশস্ত্র প্রদানের চিন্তাভাবনা নিবৃত্ত করা তাদের নতুন শান্তি প্রচেষ্টার লক্ষ্য। এদিকে রুশ কূটনীতিকরা বলেছেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবাহের যে কোন মার্কিন উদ্যোগকে তারা দেশের নিরাপত্তার প্রতি প্রত্যক্ষ হুমকি হিসেবে বিবেচনা করবে। খবর ওয়াশিংটন পোস্টের। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনে সামরিক বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই শান্তি উদ্যোগ নেয়া হলো। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল ও ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের শুক্রবার (গতকাল) মস্কো যাওয়ার কথা। তারা রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাত করে একটি চুক্তি সম্প্রাদনের চেষ্টা করবেন। দুই নেতার এই বিরল যাত্রা ৯০ দশকের বলকান যুদ্ধের পর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ইউরোপীয় লড়াই বন্ধের প্রশ্নে যে উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে তার গুরুত্বকেই তুলে ধরে। তবে, পাশ্চাত্যের কর্মকর্তারা কূটনৈতিক উদ্যোগ কোন ফল দেবে কিনা সে ব্যাপারে গভীর অনিশ্চয়তা লক্ষ্য করেছেন, কারণ রাশিয়া বরাবর বলে আসছে তারা এই লড়াইয়ে কোন পক্ষ নয়। ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্রদের মতে, ক্রেমলিন বিদ্রোহীদের অস্ত্রশস্ত্র, রসদ ও সেনা পাঠিয়ে যুদ্ধে ইন্ধন জোগাচ্ছে। মার্কিন পররষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ইউক্রেনীয় রাজধানীতে পৌঁছে নতুন শান্তি প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছেন। মেরকেল ও ওলাঁদের মস্কো উপস্থিতির কয়েক ঘণ্টা পূর্বে তিনি কিয়েভ পৌঁছান। ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের আত্মরক্ষামূলক অস্ত্রশস্ত্র প্রদান শুরু করার জন্য ওয়াশিংটনে দাবি ওঠা সত্ত্বেও কেরি বলেন, হোয়াইট হাউস এখনও বিকল্প ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছে। ‘প্রেসিডেন্ট ওবামা উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনার পর অস্ত্র প্রদান প্রশ্নে ‘শীঘ্রই একটি সিদ্ধান্ত নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একটি কূটনৈতিক সমাধান চাই। তবে, ট্যাংকগুলো রাশিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করে ইউক্রেনে প্রবেশ করছে তা দেখে আমরা চোখ বন্ধ করে রাখতে পারি না। আমরা দৃষ্টি বন্ধ রাখতে পারি না, যখন দেখি রুশ যোদ্ধারা সাদা পোশাকে সীমান্ত অতিক্রম করে লড়াইয়ে তথাকথিত স্বতন্ত্র বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে।’ কেরি যুদ্ধবিরতি পুনর্প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়ার প্রতি অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তিনি বিদ্রোহী অধিকৃত পূর্ব ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ারও আহ্বান জানান। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী এপ্রিলে লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনে পাঁচ হাজার তিন শ’রও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে। লড়াই বন্ধ ও ভূমি দখল আটকে দিতে গত সেপ্টম্বরে একটি চুক্তি সম্পাদনের পর বিদ্রোহীরা শত শত মাইল ভূখ- গ্রাস করে নেয়। বিদ্রোহী নেতৃবৃন্দ এ সপ্তাহে সতর্ক করে দেয় যে, তারা দেশের পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশাল বাহিনীর সমাবেশ ঘটাবে। ইতোমধ্যে রাশিয়া সম্প্রতি ব্যাপক আকারে সামরিক মহড়া চালানোর কথা ঘোষণা করেছে। গত আগস্টে লড়াই তীব্র হওয়ার পূর্বেও রাশিয়া এরকম পদক্ষেপ নিয়েছিল।
×