ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সন্ত্রাসের ৩০ দিন

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সন্ত্রাসের ৩০ দিন

বিভাষ বাড়ৈ ॥ কথিত ‘শান্তিপূর্ণ’ হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের জঙ্গীরূপে চালানো নাশকতায় পুড়ছে দেশ। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের মতো সাধারণ মানুষের ওপর এক মাস ধরে পেট্রোলবোমাসহ একের পর এক সহিংস আক্রমণে জীবন দিতে হয়েছে ৭৪ জনকে। যাদের মধ্যে নাশকতা চালাতে গিয়ে নিহত হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের কয়েক অপরাধী, বাকি সকলেই সাধারণ মানুষ। ২০ দলের আগুনে পুড়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও দেড় শ’জন। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া ও ভাংচুর করা হয়েছে সাড়ে চার হাজার যানবাহন। দিনমজুর থেকে শীর্ষ ব্যবসায়ী পর্যন্ত অর্থনীতির ক্ষতি অন্তত ৭০ হাজার কোটি টাকা। বিএনপি-জামায়াত জোটের হত্যার টার্গেট যেন কেবল সাধারণ নিরপরাধ মানুষ অথচ হরতাল-অবরোধ ডাকা নেতারা আছেন হয় গা-ঢাকা দিয়ে না হয় বহাল তবিয়তে বাসায় এসির ভেতর। এখানেই শেষ নয়, বিএনপি চেয়ারপার্সন তাঁর নাতনিতে পরীক্ষার দেয়ার জন্য মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দিলেও নিজেদের স্বার্থে জিম্মি করেছেন ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ অন্তত ৫ কোটি শিক্ষার্থীকে। এদিকে ঢাকায় পাকিস্তানী হাইকমিশনের কর্মকর্তার বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা আর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার টেলিফোন আলাপের পর প্রশ্ন উঠেছে নাশকতায় পাকি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ভূমিকা নিয়ে। পেট্রোলবোমায় বিশেষ ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করায় খবরে সামনে চলে এসেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের মদদ থাকার বিষয়টিও। দৃশ্যমান কোন আন্দোলন না করে টানা নাশকতায় দেশের প্রতিটি শান্তিপ্রিয় মানুষের মনে এখন প্রশ্ন, বিএনপি-জামায়াত জোটের মনোভাবের কি কোন পরিবর্তন হবে? নাকি হরতাল-অবরোধের নামে চলতেই থাকবে জঙ্গীরূপে চোরাগোপ্তা হামলা, আগুন দেয়াসহ মানুষ হত্যার তৎপরতা? সরকার-ই বা কী করছে? মানুষের জীবন রক্ষার্থে সরকারের কাছে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনীব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জোরালো হয়ে উঠছে। ‘আন্দোলনে’ টার্গেট কেবল সাধারণ মানুষ ॥ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধের এক মাস পূর্ণ হয়েছে বৃহস্পতিবার। এই সময়ের মধ্যে চোরাগোপ্তা পেট্রোলবোমা হামলা, সহিংসতা-নাশকতার শিকার হয়ে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রায় সকলেই দেশের সাধারণ নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষ। জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হয়ে প্রাণ নিয়ে সুস্থমতো আবার ঘরে ফেরা নিয়ে এখন চরম আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে দেশের প্রতিটি সাধারণ মানুষকে। কেননা পেট্রোলবোমায় প্রায় প্রতিদিনই ঝলসে যাচ্ছে কোন না কোন সাধারণ মানুষের শরীর। অবরোধে দেশের অর্থনীতি, পরিবহন, ব্যবসা, পর্যটন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব কিছুরই ক্ষতি হচ্ছে সীমাহীন। হরতাল-অবরোধ শুরুর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গাড়ি পোড়ানো বা পেট্রোলবোমা বা হাতবোমা হামলা চালানো হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। পাঁচ জানুয়ারিসহ গত ৩২ দিনের মধ্যে ২৪ দিনই হরতাল অবরোধকারীদের নাশকতায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন কেউ না কেউ। তারা সাধারণ নিরীহ মানুষ, যার মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে; এরা কেউ কোন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী ছিল না। একই সময়ে পেটের দায়ে রাস্তায় গাড়ির চালক ১৭ পরিবহন শ্রমিককেও পুড়িয়ে মারা হয়েছে; তাঁরাও ছিলেন না রাজনীতির কেউ। সাধারণ যাত্রীদেরও মরতে হচ্ছে বাসে চলাচল করতে গিয়ে। সর্বশেষ গত সোমবার গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে, এর আগে রংপুরের মিঠাপুকুরে, এমনকি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতেও যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় প্রাণ দিতে হয়েছে যাত্রীদের। এই তিন স্থানে আগুনে পুড়ে মরতে হয়েছে নিরীহ ১৫ যাত্রীকে। দগ্ধ অনেকেই যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। জানা গেছে, গত এক মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুন দেয়া হয়েছে ৯০০ গাড়িতে। ভাংচুরের শিকার হয়েছে তিন হাজার তিন শ’ গাড়ি। আগুনের শিকার যানবাহনের বেশিরভাগই বাস-ট্রাক। এসব সম্পদও সাধারণ মানুষের, রাজনৈতিক নেতাদের নয়। একই সময়ে রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে ৭০টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। নৌপথে হামলা হয়েছে চার দফা। এসব নাশকতায় ক্ষতি হয়েছে নিরীহ যাত্রীদের। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বগুড়ায় দুইজন সাধারণ মানুষের হত্যার পর ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নাশকতায় মৃত্যু হয়েছে ৭৪ জনের, যার মধ্যে সাধারণ মানুষের সংখ্যা ৪৮ জন। পেট্রোলবোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন প্রায় ২০০ জন। এই সময়ে দেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৭০ হাজার ৬২০ কোটি টাকার। গত কয়েক বছরের সচল হওয়া অর্থনীতির চাকা থমকে গেছে। চলমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এ ক্ষতির পরিমাণ শুধুই বাড়বে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যুদ্ধ যেন অর্থনীতির বিরুদ্ধে ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন ৫ জানুয়ারি ডাক দেন লাগাতার অবরোধ কর্মসূচীর, যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত। অবরোধের সঙ্গে মাঝে মধ্যে চলছে হরতাল। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম ৩২ দিন ধরে চলতে থাকা লাগাতার অবরোধ কর্মসূচীর নামে প্রতিদিনই চলছে মানুষ হত্যা। পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে যানবাহন। ধ্বংসের হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না রেলপথ। দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক খাত। কিন্তু চলমান সহিংসতার কারণে এ খাতই এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। গত ৩২ দিনে পোশাক উৎপাদন ও রফতানি খাতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার ২০২ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে ক্ষতি হচ্ছে ৯৪২ কোটি টাকা। বিজিএমইএর মতে, নাশকতার আশায় এ খাতে উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে গেছে। ইতোমধ্যে বিদেশী বায়াররা মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। পরিবহন খাতে লোকসান প্রতিদিন ৩০০ কোটি টাকা। হরতাল বা অবরোধের নামে চলা সহিংসতায় অভ্যন্তরীণ পরিবহন সচল থাকলেও দূরপাল্লার পরিবহন খাত সঙ্কটে পড়েছে। দূরপাল্লারর গাড়ি চলাচল কমে এসেছে ৪০ শতাংশে আবার যেগুলো চলছে সেগুলোও আছে নিরাপত্তা-ঝুঁকিতে। ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়েই প্রতিদিন আগুনে পুড়ছে অসংখ্য গাড়ি। গত ৩২ দিনে এ খাতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকার। প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার, যা লোকসানের দিক দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত। গত কয়েক দিনে ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোলবোমার শিকার হয়েছে ৯ শতাধিক যানবাহন। যার মধ্যে রয়েছে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইভেটকার, মিনিবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সরকারের নিরাপত্তার আশ্বাসের ভিত্তিতে দূরপাল্লার বাস নগরীর তিনটি টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে যাত্রী সঙ্কট। উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় বুধবার থেকে কিছু বাস চলাচল শুরু করেছে। নৈশ কোচে জানালা বন্ধ ও মোটা পর্দা লাগানোর জন্য বুধবার সমিতির পক্ষ সকল পরিবহন মালিককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হামলা থেকে যাত্রীদের রক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতেই এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কৃষি ও পোলট্রি খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩১ দিনে ছাড়িয়ে গেছে ৯ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। বিশেষ করে এ খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে না পারার কারণে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে চলমান সহিংসতায় কৃষকের চোখের সামনে তাঁর কষ্টের ফসল নষ্ট হওয়ায় শুধু চোখের জলই ফেলছেন তাঁরা। সঙ্কটে আছে পোল্ট্রি খাতও। এ খাতে প্রতিদিন গড়ে ক্ষতি হচ্ছে ১৮ কোটি টাকার। আবাসনে গত এক মাসে ক্ষতি হয়েছে সাত হাজার ৭৫০ কোটি টাকার। ভরা মৌসুমেও পর্যটকশূন্য দেশের প্রতিটি স্পট। পর্যটন খাত লোকসান গুনেছে ছয় হাজার ৫১০ কোটি টাকার। ছোট খাতগুলোর ওপর নির্ভর করেই চলেন দেশের সিংহভাগ মানুষ। কিন্তু দরিদ্র মানুষের অবলম্বন এসব খাতে যাচ্ছে চরম মন্দা। এ খাতে আছে রয়েছে বাজার ও দোকান, প্লাস্টিক শিল্প, বীমা, হকার্স, সিরামিক, হিমায়িত খাদ্য, আমদানি পণ্য, স্থলবন্দরসহ আরও বেশ কিছু। এসব খাতে এক মাসে ক্ষতি হয়েছে আট হাজার ৩৪১ কোটি টাকার। নিজেদের প্রতিষ্ঠান খোলা হরতালেও ॥ তবে দেশের মানুষ ও দেশের অর্থনীতির বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত নেতারা রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করলেও সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের খবর হচ্ছেÑ ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধে বন্ধ নেই বিএনপি ও জামায়াতপন্থী নেতাদের পরিবহন ব্যবসাসহ অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য। অবরোধের সঙ্গে ডাকা হরতালও পালন করছেন না জোট সমর্থক ব্যবসায়ীরা। গণপরিবহন চালু থাকার পাশাপাশি খোলা রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা ৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাকারিয়া তাহেরের রাজধানীর মহাখালী লিংক রোডে আমার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর সঙ্গে লিংক রোডে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিরও অংশীদার তিনি। বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি হরতাল-অবরোধের মধ্যেও খোলা থাকে। নাশকতার আগুনে পুড়ছে শিক্ষা ॥ অবরোধ আর হরতালে অনিশ্চয়তা, সহিংসতা ও ভীতির মধ্য দিয়ে চলছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনকে উপেক্ষা করে দফায় দফায় নাশকতামূলক কর্মসূচী দেয়ায় বিক্ষুদ্ধ এখন পুরো দেশ। দেশজুড়ে নাশকতার মধ্যেই নতুন প্রজন্মের স্বার্থবিরোধী এ কর্মসূচীর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কার্যালয় বৃহস্পতিবারও ঘেরাও করেছে বিক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। ভুক্তভোগী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, আমাদের নেতা-নেত্রীরা ভুলে গেছেন নতুন প্রজন্মের কোটি কোটি শিক্ষার্থী কোন দলের সন্তান নয়, এরা পুরো জাতির সন্তান। এভাবে লাগাতার হরতাল-অবরোধ আবার তার মাঝে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পেট্রোলবোমা হামলা চালিয়ে নেতা-নেত্রীরা কী অর্জন করতে চান? জামায়াতীদের পথেই লাভ খুঁজছে বিএনপি ॥ জানা গেছে, পাবলিক পরীক্ষার মাঝে হরতাল-অবরোধ নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে বিএনপিতে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ অনেক নেতা এ কর্মসূচীর সঙ্গে একমত না হলেও জামায়াত-শিবির ও লন্ডনে অবস্থানরত পুত্র তারেক রহমানের পরামর্শেই এসেছে এ ধরনের কর্মসূচী। সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির ঘাড়ে বন্দুক রেখে দেশজুড়ে নাশকতার মাধ্যমে বড় ধরনের অরাজকতার পাঁয়তারা করছে জামায়াত-শিবির। এক সপ্তাহ আগে স্থায়ী কমিটির কয়েক নেতা পরীক্ষার মাঝে টানা হরতাল-অবরোধের পরিবর্তে খালেদা জিয়াকে বিকল্প কোন কর্মসূচীর পরামর্শ দিয়েছিলেন। এই পরামর্শ নাকচ করে দেন দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ‘ডু অর ডাই’। যা হওয়ার তাই হবে। চেয়ারপার্সনের এহেন কঠোর মনোভাবে নিশ্চুপ হয়ে যান এসব নেতা। চেয়ারপার্সন কঠোর মনোভাব দেখালেও ওই সময়ে পরীক্ষার মাঝেও হরতাল দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন কয়েক নেতা। বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে নতুন কর্মসূচী প্রণয়নে নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করায় ক্ষুব্ধ অনেক নেতাই। তবে জানা গেছে, বর্তমানে চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচীর কার্যকারিতা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হলেও জোট শরিক জামায়াত সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট বিএনপি চেয়ারপার্সনও। সূত্র বলছে, বিশেষত আন্দোলনের মূল শক্তি জামায়াত-শিবির কোনভাবেই কর্মসূচী তুলতে নারাজ। জামায়াত-শিবিরের মনোভাবের কারণে বিশ্ব এজতেমায়ও অবরোধ-হরতাল করেছে বিএনপি। জামায়াত যদিও সব সময়েই তবলীগ জামাতের বিরোধী। এবার বিএনপিকে দিয়ে ফায়দা লুটেছে তারা। আর ধর্মের নামে নানা ফায়দা লোটার রাজনীতি করলেও বিএনপি সেই এজতেমাকেই এবার বাধাগ্রস্ত করেছে জামায়াতের মতো উগ্রবাদী দলের মদদে। নাশকতায় ইন্ধন আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠীর ॥ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান এখনও তাদের এদেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জঙ্গীবাদী পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে। পাকিস্তানী কূটনীতিকদের ‘ইন্ধনে’ জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি দেশে ‘নাশকতা’ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগও বহুদিনের। এমনকি কয়েক বছর আগে পাকি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে নির্বাচনের জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার টাকা কোটি কোটি রুপী আনার কথা বলেছিল পাকিস্তানী গণমাধ্যমই। বলেছিলেন আইএসআইয়ের কর্মকর্তারাও। সম্প্রতি ঢাকায় পাকিস্তানী হাইকমিশনের কর্মকর্তার বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার প্রমাণ আর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নাশকতার নির্দেশের খবরে সামনে চলে এসেছে অনেক উদ্বেগজনক বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম দেশে বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতার বিষয়ে বলেছেন, সম্প্রতি বাস ও যানবাহনে যেসব পেট্রোলবোমা হামলা চালানো হচ্ছে, তা কোন সাধারণ বোমা নয়, এগুলোতে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া এ ধরনের মারণাস্ত্র বিএনপি-জামায়াত আনতে পারত না। তিনি বলেন, বিএনপি বলতে এখন কিছু নেই, তারা জামায়াতের ওপর নির্ভরশীল দল হয়ে পড়েছে। গত ৩০ দিনের সন্ত্রাসে যেভাবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে হত্যা করা হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ তাতে একটিই প্রার্থনা জানিয়েছেন জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ভাষায়- প্রার্থনা করো-যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস। যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ!
×