ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পেট্রোলবোমা কেড়ে নিয়েছে ॥ ৬ পরিবারের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পেট্রোলবোমা কেড়ে নিয়েছে ॥ ৬ পরিবারের স্বপ্ন

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোলবোমা কেড়ে নিয়েছে আগৈলঝাড়া উপজেলার রাংতা গ্রামের আবুল কালাম আজাদ, ফারুক হোসেন, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের আবুল হোসেন, বাউফলের কালাইয়া গ্রামের নুর হোসেন, দশমিনার আদমপুরা গ্রামের জাফর রাঢ়ী ও শঙ্করপাশা গ্রামের সোহাগ হাওলাদারের পরিবারের স্বপ্ন। পেট্রোলবোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি রাতে নুর হোসেন, জাফর রাঢ়ী বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদীতে ১৮ জানুয়ারি উজিরপুরে সোহাগ হাওলাদার, ১৫ জানুয়ারি ঢাকায় আবুল কালাম আজাদ মারা গেছেন। সন্তোষপুর গ্রামের আবুল হোসেন ও পশ্চিম রাংতা গ্রামের ফারুক হোসেন অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একদিকে পুত্রের পোড়া শরীরের দুঃসহ যন্ত্রণা, অন্যদিকে পরিবারের দুশ্চিন্তায় আবুল হোসেনের পিতা জব্বার খলিফা বলেন, আমরা নিরীহ মানুষ। আমার ছেলে আবুল হোসেন কোন দলের কর্মী না। তবে কেন তাকে পোড়ানো হয়েছে? এখন আমাদের সংসার কেমনে চলবে বুঝতে পারছি না। আবুলই আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার চিকিৎসার পেছনে প্রতিদিন অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। গরীবের গায়ে কেন অবরোধের আগুন? আল্লাহ কেন ওইসব নাশকতাকারীদের বিচার করে নাÑ বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন জব্বার খলিফা। রূপগঞ্জের তারাবোতে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন আবুল। কাজ করতেন একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে। অভাবের সংসার হলেও তারা বেশ সুখেই ছিলেন। কিন্তু অবরোধের পেট্রোলবোমায় শেষ হয়ে গেছে তাদের সংসারের সব সুখ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আবুল। গত ২৩ জানুয়ারি ছোট ভাই মনিরের সঙ্গে তার কাঁঠালবাগানের বাসায় দেখা করে রাতে গুলিস্তান থেকে গ্লোরি পরিবহনের বাসে রূপগঞ্জের বাসায় উদ্দেশে রওয়ানা হন আবুল হোসেন। পথিমধ্যে ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় বাসে অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় আবুল হোসেনসহ আরও ২৬ জন যাত্রী দগ্ধ হন। একই বাসের যাত্রী ছিলেন জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার পশ্চিম রাংতা গ্রামের মৃত খালেক মল্লিকের পুত্র ফারুক হোসেন। তিনিও অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার পরিবারেও বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। ২ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে বারোটার দিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদীর টরকী নবীনগর এলাকায় লবণবাহী ট্রাকে অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় ঘটনাস্থলেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন চালক বাউফলের কালাইয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রবের পুত্র নুর হোসেন ও হেলপার দশমিনার আদমপুরা গ্রামের শাহজাহান রাঢ়ীর পুত্র জাফর রাঢ়ী। নুর হোসেনের স্ত্রী মেরিনা বেগম বর্তমানে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এছাড়াও নুর হোসেনের মাহিন নামের সাত বছরের এক পুত্র ও নুরতাজ নামের পাঁচ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তাদের ভবিষ্যত পুরোপুরি অন্ধকারে। নিহত হেলপার জাফরের মা আছিয়া বেগম ও বৃদ্ধ পিতা শাহজাহান রাঢ়ী বিলাপ করে বলেন, সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল জাফর। এখন আমাদের এ বুড়া বয়সে কে ভরণ-পোষণ দেবে। গত ১৮ জানুয়ারি উজিরপুরের সানুহারে ট্রাকে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় ঘটনাস্থলেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন মৃত সাগর হাওলাদারের পুত্র ট্রাকের হেলপার সোহাগ হাওলাদার। নিহত সোহাগের বাড়ি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার শঙ্করপাশা গ্রামে। সোহাগের মা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল সোহাগ। আবুল কালাম ছিলেন একজন প্রাইভেটকার চালক। গত ৯ জানুয়ারি রাতে মগবাজারের আগোরা শপিং কমপ্লেক্সের সম্মুখে অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে সাতদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গত ১৫ জানুয়ারি আবুল কালাম মৃত্যুবরণ করেন। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি আবুল কালাম আজাদের চেহলাম। নিহত আবুল কালাম আজাদের মায়ের আর্তনাদ “টাহার জন্য মোর পোলাডার মিলাদ দিতে পারি নাই। এ্যাহন একচল্লিশাও (চেহলাম) করতে পারছি না। আল্লাহ এ্যার চাইয়া তুমি মোরে লইয়া যাও।
×