ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিশোধ নিল আম্মান

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

প্রতিশোধ নিল আম্মান

জর্দান এক নারী জিহাদীসহ দু’ দোষী সাব্যস্ত আল কায়েদা বন্দীর মৃত্যুদণ্ড ফাঁসিতে কার্যকর করেছে। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ইসলামিক স্টেট (আইএস) যোদ্ধারা আটক এক জর্দানি পাইলটকে একটি খাঁচায় পুড়িয়ে মারার দৃশ্য সংবলিত এক ভিডিও প্রচার করে। ঐ নারী ব্যর্থ আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী সাজিদা আল-রিশাবি এবং এক ইরাকী আল কায়েদা জঙ্গী জিয়াদ কারবালিকে রাজধানী আম্মানে বুধবার ভোরে ফাঁসি দেয়া হয়। জঙ্গীরা এক জাপানী জিম্মির বিনিময়ে রিশাবির মুক্তি দাবি করেছিল। নিরাপত্তা সূত্রে ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এ কথা বলা হয়। খবর বিবিসি ও ইয়াহুনিউজের। আইএসের হাতে পাইলট মুয়াজ আল কাসাসবাহ নিহত হওয়ার বিষয়ে জর্দান নিশ্চিত হয়ে ওই দু’জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করে। আল-রিশাবিকে ২০০৫ সালের আম্মানের তিনটি হোটেলে আত্মঘাতী হামলায় জড়িত থাকার দায়ে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল। এসব হামলায় ৬০ ব্যক্তি নিহত হয়। এই ছিল জর্দানের ইতিহাসে ইসলামপন্থীদের সবচেয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা। জিয়াদ কারবালিকে ইরাকে জর্দানিদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্র করার দায়ে ২০০৮ সালে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল। সে একজন সিনিয়র আল কায়েদা বন্দী ছিল। ইসলামিক স্টেট জাপানী জিম্মি কেনজি গোতোর জীবনের বিনিময়ে আল-রিশাবির মুক্তি দাবি করে। কিন্তু জঙ্গী দলটি পরে যুদ্ধ সংবাদদাতা গোতোর শিরñেদ করে গত শনিবার তার মৃত্যুর ভিডিও দৃশ্য প্রচার করে। কিন্তু জর্দান জোর দিয়ে বলেছিল, তারা পাইলটকে মুক্তি দেয়ার কোন চুক্তির অংশ হিসেবেই কেবল ওই মহিলাকে ছেড়ে দেবে। মহিলার উপজাতীয় ইরাকী আত্মীয়রা আল কায়েদাই ইরাকের নিহত জর্দানি নেতা আবু মুসাব আল-জারকাবির ঘনিষ্ঠ সহকারী। আইএস তাদের শিক্ষক হিসেবে আল-জারকাবিকে সম্মানের চোখে দেখে থাকে। পরে জর্দান ওই পাইলট তখনও জীবিত ছিলেন বলে কোন প্রমাণ পায়নি বলে জানিয়ে ওই বন্দী বিনিময়ের উদ্যোগ স্থগিত করে দেয়। জর্দান মঙ্গলবার পাইলটের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর অভ্যন্তরীণ সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে জানায় যে, তাকে এক মাস আগেই হত্যা করা হয়েছিল। তার জীবন বাঁচাতে পারত এমন কোন চুক্তি করতে জর্দান আইএসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে আরও কিছু করতে পারত বলে সমালোচনা ওঠে। পাইলটের হত্যাকা- জর্দানিদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ বিশ্ব সম্প্রদায় এ ঘটনার নিন্দা করে। জর্দান পাইলট মুয়াজ আল কাসাসবাহর হত্যাকা-ের ‘প্রচ-, দুনিয়া কাঁপানো ও চূড়ান্ত’ জবাব দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। আইএস বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সদস্য হিসেবে জর্দান সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আল-কাসাসবাহ ডিসেম্বরে সিরিয়ার রাকার কাছে তার এফ-১৬ বিমান বিধ্বস্ত হলে জঙ্গীদের হাতে ধরা পড়েন। রাকা কার্যত আইএস দলের স্বঘোষিত খিলাফতী শাসনের কেন্দ্রস্থল। তিনি এখনও একমাত্র কোয়ালিশন পাইলট যিনি আইএসের হাতে ধরা পড়েন। কাসাসবাহের ভাগ্য নিয়ে জর্দানে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলতে থাকে। তিনি দেশটির হাশেমী রাজতন্ত্রের সমর্থন ভিত্তি হিসেবে কাজ করে এমন এক বিরাট উপজাতির সদস্য ছিলেন। কোন কোন জর্দানি মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে তাদের জড়িত করার দায়ে বাদশাহ আব্দুল্লাহর সমালোচনা করেন। মুসলিমদের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের স্বার্থ রক্ষা করাই এ যুদ্ধের লক্ষ্য বলে তাঁরা উল্লেখ করেন। কোন কোন রাজনীতিক ও পার্লামেন্ট সদস্য কোয়ালিশন থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। কর্তৃপক্ষ বলেছে, তার মৃত্যু জঙ্গী ইসলামপন্থী দলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্পকে দুর্বল করবে না। বাদশাহ কাসাসবাহের মৃত্যুর খবর শোনার পর স্বদেশে ফিরতে তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফর সংক্ষিপ্ত করেন।
×