ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চার লেন ও টানেলের মেগা প্ল্যান

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চার লেন ও টানেলের মেগা প্ল্যান

মহসিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে। চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা এবং কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। মিয়ানমার ও চীনের সঙ্গে আঞ্চলিক কানেকটিভিটি প্রতিষ্ঠিত হবে। শহরের অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আসবে আমূল পরিবর্তন। যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হবে পৃথক চারটি বৃহৎ প্রকল্প। রেল ও সড়ক যোগাযোগ ছাড়াও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ হবে টানেল। চট্টগ্রামকে অর্থনীতির হাব চিন্তা করে বর্তমান সরকার নতুন মেয়াদ শুরু করার পর বেশ কয়েকটি মাঝারি এবং বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে হাত দিয়েছে। এর আগে আগামী দশ বছরের মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামকে দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুত উৎপাদন জোন হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতেও ব্যয় হবে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, কক্সবাজারের ঘুনধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেল লাইন, মিয়ানমার-চীনের সঙ্গে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সড়ক কানেকটিভিটি, মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ, পতেঙ্গা-কালুরঘাট মেরিন সড়ক, চার লেনের কর্ণফুলী সেতু সংযোগ সড়ক বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে। আগামী এক- দেড় বছরের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হতে শুরু করবে। সেতু ও সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে আসছে চীন সরকার এবং জাপানী দাতা সংস্থা জাইকা। এছাড়া আরও দাতা সংস্থা বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এ বছরের মধ্যেই মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়ে যাবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেল। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে চার লেনের শাহ আমানত সংযোগ সেতু সড়কের। আগামী জুন থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামে সড়ক যোগাযোগ চার ঘণ্টায় সম্ভব হবে। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ির সঙ্গে এখন থেকেই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে। রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবানের সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ শীঘ্রই উন্নত হবে। জাপানী দাতা সংস্থা জাইকা দেশের সড়ক ও সেতু উন্নয়নে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এ জন্য তিনি শীঘ্রই জাপান সফরে যাচ্ছেন। সরকারের দুই মেয়াদে তিনি টানা তিন বছরের দায়িত্ব পালনকালে এই প্রথম কোন বিদেশ সফর। বিদেশে সফর করার চেয়েও দেশে বিদেশী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে উন্নয়নে বিশ্বাসী বলেই এতদিন বিদেশ সফর থেকে বিরত ছিলেন। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী জানান, আগামী জুনের মধ্যেই চার লেনের চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে। চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীর সঙ্গে বন্দরনগরীর যোগাযোগ সম্ভব হবে। চট্টগ্রামের সড়ক আধুনিকায়ন এবং যানজট নিরসনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার আন্তরিক। বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক উন্নয়ন কাজ শেষ হচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে চীনা সহায়তায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। ঘুনধুম পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণে ব্যয় হবে আরও প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। ভবিষ্যতে চীন-মিয়ানমারের সঙ্গে আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। এতে বাংলাদেশের অর্থ ব্যয় তুলনামূলক কম, কারণ মিয়ানমার এবং চীনে দীর্ঘ সড়ক ও রেল লাইন নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যয় নেই। সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম থেকে স্বল্পপাল্লায় হাটহাজারী সড়ককে চার লেনে উন্নয়ন করা হচ্ছে। আগামী বছরের মধ্যে এ সড়কটির কাজও সম্পন্ন হবে। ইতোমধ্যে সড়কটির উন্নয়ন কাজে বেশ গতি এসেছে। অতি শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে শাহ আমানতসেতুর সংযোগ সড়কটি। এ মাসের মধ্যে ২শ’ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হচ্ছে। সড়কটিতে ইতোমধ্যে বেশকিছু কালভার্ট নির্মাণাধীন। ভূমি অধিগ্রহণও শেষ। টেন্ডার হলেই বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দীর্ঘদিনের পুরনো আরাকান সড়কটিকে সম্পূর্ণ চার লেনে উন্নীত করার কাজও শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে। এখানে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্প প্রস্তুতির পর পরই প্রক্রিয়া সম্পাদন করে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। তবে প্রকল্প বিলম্বের কারণে ঝুলে গেছে পটিয়া বাইপাস সড়কটি। এ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলেও এডিবির অর্থ ফেরত যাওয়ায় বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আরাকান সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কারণে পটিয়া থেকে দোহাজারি পর্যন্ত ৪২টি বাঁক সোজাকরণ প্রকল্প পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। সারাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজাকরণ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
×