ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সমুদ্র দেখার এ ছবি আর কোনদিন দেখতে পাবে না কিশোরী মাহিশা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সমুদ্র দেখার এ ছবি  আর কোনদিন  দেখতে পাবে না কিশোরী মাহিশা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ বায়না ধরে বাবার সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে গেলেও জীবিত ফেরা হলো না মেধাবী ছাত্রী মাহিশা নাহিয়ান ও বাবা নুরুজ্জামান পপলুর। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হরতাল-অবরোধ সমর্থকদের পেট্রোল বোমা হামলায় নিহতদের লাশের মিছিলে তারাও রয়েছেন। আহত হয়েছেন পপলুর স্ত্রী মাহফুজা বেগম মিতাও। মঙ্গলবার ভোরে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পৈশাচিক এ হত্যাকা-ের খবর যশোরে পৌঁছলে আহাজারি আর ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্বজনরা। নিহত নুরুজ্জামান পপলু (৪৯) প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার এবং যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোড এলাকার অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা রোকন উদ্দিন ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নূরজাহান বেগমের ছেলে। পপলুর মেয়ে মাহিশা নাহিয়ান (১৪) যশোর পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। নিহত পপলুর স্বজনরা জানান, পপলু কক্সবাজারে বন বিভাগের পলিব্যাগ সরবরাহের একটি ঠিকাদারী কাজ পেয়েছিলেন। এজন্য ২৯ জানুয়ারি রাতে তিনি কক্সবাজার যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। বাবা কক্সবাজারে যাচ্ছে শুনে বেড়াতে যাওয়ার বায়না ধরে মেয়ে মাহিশা। মেয়ের বায়না পূরণে স্ত্রী মাহফুজা বেগম মিতা ও মেয়ে মাহিশাকে নিয়ে কক্সবাজারে যান তিনি। সোমবার রাতে কক্সবাজার থেকে বাড়ি ফেরার উদ্দেশে রওনা হন তারা। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পেট্রোলবোমা হামলার শিকার হয় তাদের বাস। পপলুর স্ত্রী মাহফুজা বেগম মিতা জীবিত বের হয়ে আসতে পারলেও আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নেয় পপলু ও মাহিশার জীবন। নিহত পপলুরা ৪ ভাই ২ বোন। তিনি ভাই বোনদের মধ্যে তৃতীয় ও ভাইদের মধ্যে মেঝ। পপলুর দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে আসিফ ইমতিয়াজ ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত। মঙ্গলবার সকালে পপলু ও মাহিশার মৃত্যুর খবর যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসায় ছড়িয়ে পড়লে স্বজনদের আহাজারিতে গোটা এলাকা ভারি হয়ে ওঠে। তারা পরস্পরকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। একইসঙ্গে তারা এই পুড়িয়ে মারার রাজনীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নিহত পপলুর স্বজন রবিউল ইসলাম রবি ও আহসান কবির নিপু জানান, পেট্রোল বোমার আগুনে পপলু ও মাহিশার মতো নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি সহ্য করা যায় না। এভাবে আর কত মানুষ মারা গেলে এই রাজনীতি বন্ধ হবে। তারা দু’নেত্রীর কাছে এই অপরাজনীতির অবসান চেয়েছেন।
×