ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইএসের নৃশংসতা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আইএসের নৃশংসতা

সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীদের অপতৎপরতার মাত্রা বিশ্বজুড়ে নতুন করে বেড়ে গেছে। এদের নৃশংসতার মাত্রা সীমা লঙ্ঘন করছে ক্রমাগত। ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে সম্পূর্ণ অধর্মাচরণ করে তারা বিশ্বমানবকে সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। বিদেশীদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় ও আটক জঙ্গীকে ছেড়ে দেয়ার দাবিতে জঙ্গীগোষ্ঠী দু’জন জাপানীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে, হত্যাদৃশ্যের ভিডিও আবার নেটে প্রচার করে নিজেদের বীভৎস দিক তুলে ধরছে। বিশ্ববিবেক তাদের এই আচরণের নিন্দাই শুধু করেনি, একে দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষে। মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যারা ফিরিয়ে আনছে, তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গী ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মে বিশ্বাসী হতে পারে না। সব ধর্মই শান্তির বার্তা দেয়। শান্তির ধর্ম ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে গড়ে ওঠা ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামক জঙ্গী সংগঠনটি আল কায়েদা, তালেবানসহ অন্য জঙ্গী সংগঠনগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। এদের নৃশংসতা ও মানুষ হত্যার মাত্রা তীব্রতর হয়েছে। এই সংগঠনটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আনুগত্য প্রকাশ করছে অন্য জঙ্গীগোষ্ঠীগুলো। এরা ইরাক ও সিরিয়ার একাংশ দখল করে হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে। ইসলামী শরিয়া আইন শাসিত খিলাফত ঘোষণা করে বিশ্বের মুসলমানদের আনুগত্য দাবি করা আইএসের সন্ত্রাসের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। তাদের হাতে বেসামরিক লোকের মৃত্যুদ- কার্যকর হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সর্বশেষ তারা জাপানী ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও চিত্রনির্মাতা কেনজি গোতোর শিরচ্ছেদ করে। ‘জাপানের প্রতি বার্তা’ শীর্ষক হত্যাকা-ের দৃশ্যসহ হুমকি প্রদানের ভিডিও নেটে ছড়িয়ে দেয়। এর ক’দিন আগে অপর এক জাপানী ঠিকাদার হারুদা ইউকাওয়াকে একইভাবে হত্যা করে তার ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয়। গত বছর হারুদাকে জিম্মি করে আইএস। তার মুক্তির চেষ্টায় কেনজি সিরিয়ায় আইএস অধ্যুষিত এলাকায় যান। দু’জনই জিম্মি হয়ে পড়েন। আইএস মুক্তিপণ হিসেবে ২০ কোটি ডলার দাবি করে এবং সময়সীমা বেঁধে দেয়। নতুবা দু’জনকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়। কিন্তু জাপান সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না বলে সঙ্কল্প ব্যক্ত করে এবং অবিলম্বে এদের মুক্তিদানের দাবি জানায়। আইএস জর্দানে আটক তাদের একজন বোমারু মহিলার মুক্তিও চায়। জাপান-জর্দান উভয়েই চেষ্টা চালায় তাদের মুক্তির বিষয়ে। কিন্তু বোমারু নারীকে ছেড়ে দিতে জর্দান রাজি হয়নি। হারুদা হত্যার ৫ দিন পর কেনজিকে হত্যা করে তার ভিডিও পাঠিয়ে নিজেদের নৃশংসতার স্বাক্ষর রেখেছে আইএস। জাপান ক্ষুব্ধ হয়েছে শুধু নয়, সে এর বিরুদ্ধে জঙ্গী দমনকারী দেশকে সহায়তা করবে বলে ঘোষণাও দিয়েছে। জঙ্গীদের অভিযোগ, জাপান জঙ্গী দমনে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তাই উচিত শিক্ষা দিয়েছি। ভিডিওতে শিরñেদের দৃশ্য জাপানসহ সারাবিশ্ব দেখেছে নির্মম নৃশংসতার মাত্রা কতটুকু। তাদের এই কার্যকলাপ বিশ্ববাসীর কাছে জঘন্য ও অনুমোদনের অযোগ্য। আইএস নামক জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো শান্তিকামী রাষ্ট্র জাপানের দুই নাগরিককে পৈশাচিকভাবে হত্যা করার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট করল মানুষ হত্যার লাইসেন্স যেন তারা ধারণ করে আছে। বাংলাদেশও আইএসের হুমকি থেকে মুক্ত নয়। তাদের শাখাপ্রধান ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ নতুন করে বিস্তৃত হয়েছে দেশে দেশে বিভিন্ন নামে। এই জঙ্গীবাদকে নির্মূল করতে বিশ্ববিবেক ও জনমতকে জাগ্রত করা জরুরী। যে কোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে এদের পৈশাচিকতা।
×